নক্ষত্রের রাজারবাগ : ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২১

রিয়াদ

নক্ষত্রের রাজারবাগ বইটি আমার পছন্দের তালিকার এখন পর্যন্ত সেরা বই। বইটি একটু সময় দিয়ে পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হলেও যেহেতু বইটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখেছেন, তাই বইটি ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে থাকবে।

পাঠক হিসেবে বইটি পড়া শেষ করার পর বারবার কেন জানি মনে হচ্ছে, বইটির উপর একদিন কেউ না কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে; এই চলচ্চিত্র হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম চলচ্চিত্র।

গবেষণাভিত্তিক বইটি এত সহজভাবে পাঠকের কাছে গল্পের আকারে রূপান্তর করা লেখক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং শ্রদ্ধেয় গুণী প্রয়াত আলী যাকের ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ করেছেন।

২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ভয়াল ও নির্মমতা সম্পর্কে আমাদের জেনারেশন সবাই জানে। যে জিনিসটি জানে না; সেই ঘটনাটি নক্ষত্রের রাজারবাগ বইতে উঠে এসেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজারবাগ থেকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

যুদ্ধের নির্মমতা বিস্তারিতভাবে এ বইতে উঠে এসেছে। একদিকের অত্যাধুনিক অস্ত্রের জোয়ার আর অন্যদিকে বাঙালি পুলিশ ও সাধারণ মানুষের দেশপ্রেম যা রীতিমতো বইটি পড়ার পর শিউরে উঠেছিলাম।

আমরা পাঠকরা সাধারণত চাই যেকোনো উপন্যাস একশ পৃষ্ঠার মধ্যে হলেই ভালো হয়, আর বইয়ের দামটি হবে দেড়শ টাকার মধ্যে। এটি সমন্বয় করলেই প্রকাশক ও পাঠক দু’জনই খুশি হবেন। এদিক থেকে লেখক তার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ নক্ষত্রের রাজারবাগ বইটি ৩২০ পৃষ্ঠা। পাঠক যদি প্রথম ৫০ পৃষ্ঠা পড়তে থাকেন ভালোভাবে, তাহলে মনে হবে তিনি নিজেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।

কথাটি বললাম এ কারণে, শেষের দিকে এসে বইটিতে আমার পড়তে এত কষ্ট হচ্ছিল যেন নিজের হৃৎপিণ্ডটা সত্যি সত্যি কষ্ট পাচ্ছিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং একে একে বীভৎস মৃত্যুগুলো নিয়ে রিভিউ লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সালাম, ওসমান, রশিদ, বিনয় বাবু, মুর্তজা, শাহজাহান, জাহাঙ্গীর, ইমান আলী, ক্যান্টিন বয় রতন ও অনেকেই ২৫ মার্চ রাত ১১টা থেকে ২৬ মার্চ ভোর পর্যন্ত প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করে যান। টিঅ্যান্ডটি হসপিটালের ডা. মুজাফফর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাটি না লিখলে অবিচার হবে।

পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে বাঙালি পুলিশ ও জনতা সেদিন একই কাতারে শামিল হয়েছিলেন। নির্মম এ লড়াইয়ে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তারা লড়াই করে গেছেন। আমাদের দিয়ে গেছেন সোনার বাংলাদেশ।

২০২১ সালের ২৫ মার্চের আজকের বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে সেই শহীদদের অবদানে; যারা সর্বপ্রথম পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ লড়াই করেছেন। পরবর্তীতে দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করতে সাধারণ জনতাকে উৎসাহিত করেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নক্ষত্রের রাজারবাগ বইটি একটি বীরত্বগাথা প্রামাণ্য দলিল। যে কারণে প্রতিষ্ঠানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। সবশেষে বলতে চাই, নিজে বই পড়ুন এবং অন্যকে উৎসাহিত করুন। বইমেলা ছাড়াও বইটি অথবা ডটকম থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন।

বইয়ের নাম: নক্ষত্রের রাজারবাগ
লেখক: মোশতাক আহমেদ
প্রকাশনী: অনিন্দ্য প্রকাশ
মূল্য: ৫০০ টাকা

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।