চির-বিরহী
হেমন্তের রাতের শেষ প্রহরে
মুষলধারে বৃষ্টির করুণ সুর;
ঘুম কেড়ে নিলো টিনের চালে
অশেষ টাপুর-টুপুর!
অদ্ভুত ভালো লাগায় বিমোহিত;
কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
কতক্ষণ থ হয়ে বসে থাকা
অন্ধকারে সফেদ বিছানার ’পর!
অতঃপর বারান্দায় এসে চুপচাপ,
বাইরে অপলক চেয়ে থাকা;
গাছপালা, তরু-লতা সব
নির্মীলিত চোখে কম্পিত তনু-মনে
বৃষ্টির আলতো পরশের সুখে বিভোর!
যেন দশ হাত এক কাপড়ে একেকটি
কাকভেজা অর্ধঢাকা প্রিয়ার কলেবর!
হঠাৎ দেখি তাঁরে বারো ফুট দূরে,
বৃষ্টির পরি শত সুধা ধরি;
পূর্ণশশী এলোকেশী উর্বশী,
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তিমির বিদারী!
বৃষ্টি বিধৌত গায়ে জলকণা স্পষ্টতঃ
প্রিয়তমের প্রতীক্ষায় সদা উন্মুখ;
লতার মত জড়াতে খোঁজে
ভালো লাগার সবটুকু সুখ!
গৌড় অঙ্গে রূপচ্ছটা,
বসন ভেদি ফুটন্ত শতদল;
আনত নয়ন পাপড়ি সজল
সলাজ হাসিতে ঝলমল ভূতল!
তড়িগড়ি করি উঠি পড়ি মরি
দ্বার খুলি দেখি উঠান সুনসান!
স্বপ্নচারিণী হাওয়ায় হারিয়েছে
শূন্য করি মন-প্রাণ-গুলশান!
আমার দীর্ঘশ্বাসে চুপ হয়ে থাকা
গাছ-লতা-পাতার নিরবতা ভাঙে;
একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মৃদু লয়ে
কেঁপে কেঁপে ওঠে অঙ্গে-প্রত্যাঙ্গে!
এক নিদারুণ ব্যর্থতার কষ্টে,
ক্রমাগত বৃষ্টির ভারে
মেহেদি-ডালিমের নমিত পাতাগুলোর
তারার মত চোখে টপাটপ অশ্রু ঝরে!
তা উঠানের স্রোতে মিশে
বিলীন সবার অগোচরে!
কষ্টগুলো এমনই হয়,
রাতের আঁধারে চুপ করে আসে
শীতল হাওয়ায়ও কুল কাঠের মত জ্বলে!
হৃদয়টাকে দলে-মোচড়ে এক সাগর
অশ্রুরক্ত নিয়ে দুঃখের হোলি খেলে!
এসইউ/এএ/এমএস