ফাত্তাহ তানভীর রানার দু’টি অনুগল্প
১. চাউল ফ্রি
সরকারি চাল বিতরণ করা হবে গ্রামে। সবাই অপেক্ষায়।
লাবনীর বাড়িতে অন্ধ মা আর স্কুলপড়ুয়া ছেলে। স্বামী মারা গেলে স্বামীর বাড়ি থেকে সে বিতাড়িত হয়। লাবনীও অধীর আগ্রহে চালের জন্য দিন গুনছে।
অবশেষে এলো প্রতীক্ষার দিন। ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ চলছে। প্রতিজন পাঁচ কেজি করে পাচ্ছে। গ্রামের মানুষ সাগ্রহে চাল কিনছে, লাবনীও লাইনে দাঁড়ালো।
লাবনী চাল নিয়ে টাকা দিলো। বলল, ‘লাজিরপুরে না ১০ কেজি দিচ্ছে চাউল? ৫ কেজি দিয়া কয়দিন যায়? কী মিন্টু চাচা?’
মিন্টু মেম্বার তাকে ইশারায় ডেকে নিয়ে বলল, ‘লাবনী, তুই সন্ধ্যার পর আমার বাড়িত আয়। কম-বেশি ব্যাপার না, তোর চাচি বাড়িত নাই। যা চাউল লাগে নিস তুই। তোর জন্য চাউল ফ্রি!’
লাবনী রাগী চোখে মিন্টু মেম্বারের দিকে চেয়ে রইল। আর মিন্টু মেম্বারের মুখে হাসির ছটা!
****
২. মুচি
বাজারসহ আশেপাশের এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে করোনা রোগী এসেছে। পরিস্থিতি বুঝেই সম্পদ মুচি তার জিনিসপত্র বাড়িতে নিয়ে এসেছে। তিন পুরুষ ধরে মুচির কাজ করে সম্পদ। সৎ এবং দক্ষ মুচি হিসেবে বাজারে তার সুনাম আছে। তার বাবা বয়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারেন না।
একমাস পেরিয়ে গেল লকডাউন! সম্পদের বাড়িতে কালেভদ্রে দু’একজন জুতা-স্যান্ডেলের কাজ নিয়ে আসে। সম্পদ সাগ্রহে সেই কাজ করে দেয়। তারপরও কথা থেকে যায়! সম্পদ ভাবছে, চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করবে।
একদিন দেখা হয়ে গেল চেয়ারম্যানের সাথে। সুযোগ পেয়ে সম্পদ কথা বলা শুরু করে দিলো।
: কাকা কুনোদিন তো আপনের কাছে আসিনি। আইজ বড় বিপদ চেয়ারম্যান কাকা।
: ক্যা, কী হইছে কঅ।
: মাস পার হয়ে গেল কাকা, বাজারে দোকান খুলতে পারিনি।
: ক্যা, তুই না বাড়িতে কাজ করিস?
: কাকা বাড়িত আর কয়জন আসে? আর লোক তো বাড়িত থেইকা বাইর হয় না। বাইর না হইলে স্যান্ডেল ছিঁড়ে না, আর স্যান্ডেল না ছিঁড়লে আমার কাছে আইসপো ক্যান?
: হঅ।
: কাকা, কুনোদিন মানসের কাছ হাত পাতিনি। সারাদিন যা পাইছি, তাই দিয়াই সংসার চালাইছি। একোন যে কী বিপদে পরছি কাকা!
: বুঝি তো সবই রে।
: কাকা কী করি, একটা বুদ্ধি-শুদ্ধি দেন তো। আমরা তো কাকা ত্রাণের লাইনে দাঁড়াইবার পারি না।
চেয়ারম্যান সম্পদের কথা শুনলো কি-না বোঝা গেল না। তবে অন্যদিকে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘তুই বেশি করে ভগবানের নাম জপ’।
এসইউ/জেআইএম