টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ১৬

ড. রাজুব ভৌমিক
ড. রাজুব ভৌমিক ড. রাজুব ভৌমিক , কবি ও লেখক
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৯

ঘুমের ওষুধ মেশানো স্ট্রবেরিগুলো খেয়ে হেইলি ও অ্যাশলিসহ সবাই একে একে অজ্ঞান হয়ে যায়। হেইলি তার চার বান্ধবীসহ অজ্ঞান হয়ে সোফার ওপর শুয়ে পড়ে। অ্যাশলি তার তিন বান্ধবীসহ অজ্ঞান হয়ে লিভিংরুমের মেঝেতে শুয়ে পড়ে। যেহেতু স্ট্রবেরি খাবার আগেই সবাই কিছুটা মাতাল ছিল। তাই স্ট্রবেরি খেয়ে অন্যরা অজ্ঞান হওয়ার সময় কেউ বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেনি। সবাই মনে করছে, তারা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে যাচ্ছে। পাশা লিভিংরুমের সোফার এক কোণায় বসে সব দেখছে আর অপেক্ষা করছে। একটু পরে পাশা সবাই অজ্ঞান হয়েছে কি-না পরীক্ষা করে দেখবে বলে ভাবল। পাশা একে একে সবাইকে তার হাত দিয়ে ধাক্কার মাধ্যমে জাগ্রত করার ভান করছে। আসলে সে বোঝার চেষ্টা করছে যে, তারা আসলে অজ্ঞান হয়েছে কি-না। সবার কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে পাশা বুঝতে পারে, এরা সবাই অজ্ঞান হয়ে গেছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পাশা জানে যে, স্ট্রবেরি দিয়ে অজ্ঞান করলে ন্যূনতম ত্রিশ মিনিটের মধ্যে জ্ঞান সাধারণত ফেরে না। তাই পাশা দেরী না করে দ্রুত লিভিংরুম থেকে বেরিয়ে যায়। এখন তার গাড়ি থেকে খুন করার সব সরঞ্জামাদি নিয়ে আসতে হবে। পাশা তার গাড়ির ট্রাঙ্কটি খুলল, এরপর তার খুনের ব্রিফকেসটি হাতে নেয়। এই ব্রিফকেসে কয়েকটি ধারালো লম্বা ছুরি, অতিরিক্ত জামা-প্যান্ট, রশি, তরল ব্লিচের কয়েকটি বোতল, অতিরিক্ত কাপড়ের টুকরা, ট্রেসব্যাগ, গ্লাভসসহ অনেক কিছু আছে।

পাশা তার ব্রিফকেসটি নিয়ে হেইলিদের লিভিংরুমে পুনরায় প্রবেশ করে। রাত এখনো দুইটা ঠিক বাজেনি। পাশা জানে তাকে এই নয় জনকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে খুন করতে হবে। তাই পাশা চিন্তা করে কাকে সে প্রথমে খুন করবে। পরে সে ভাবল হেইলিদের বেজমেন্টের লিভিংরুমে বা বাড়ির নিচের তলার কক্ষে খুন করলে রক্তে পুরো কক্ষটি ভেসে যাবে। নয় জনের রক্ত পরিষ্কার করতে করতে পাশার সারারাত এমনিতে কেটে যাবে। তাই পাশা ঠিক করে, সবাইকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যেতে হবে। হেইলিদের দ্বিতীয় তলায় সাধারণত মরদেহকে গোসল করানো এবং পরে তা মেশিনের মাধ্যমে পুড়িয়ে ভস্ম করা বা ক্রিমেসান করানো হয়। ক্রিমেসান শেষে মরদেহের ছাইকে একটি ছোট পাত্রে রেখে তা মরদেহের আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া হয়।

পাশা তাই একে একে সবাইকে তার কাঁধে করে দ্বিতীয় তলায় উঠিয়ে রাখে। এতে প্রায় বিশ মিনিটের মত সময় চলে যায়। আর বাকি আছে প্রায় দশ মিনিটের মতো। এরপর আস্তে আস্তে সবার জ্ঞান ফিরে আসবে। এরমধ্যে তাকে নয় জনকে খুন করতে হবে। পাশা এখনো ঠিক করতে পারেনি সে কাকে প্রথম খুন করবে। পাশার তখন ছোটবেলার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। ছোটবেলায় পাশা মুরগির ডিম খেতে খুব পছন্দ করত কিন্তু তারা গরিব থাকায় সবসময় মুরগির ডিম খেতে পারত না। মাঝে মধ্যে তাদের ঘরে একটি ডিম ভাজি করলে সবাইকে তা ভাগ করে খেতে হতো। একদিন পাশা তার গ্রামের বাড়ির পাশে একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে যায়। সেখানে দুপুরের খাবারের সময় পাশাকে অন্যান্য তরকারি ও মাংসসহ বিরিয়ানির সাথে দুটি ডিম দেয়। পাশা তার খাবার পাত্র দেখে সেদিন অনেক খুশি হয়। সেদিন পাশাকে অনেক হতভম্ব হতে হয়। কারণ প্রথমে সে ঠিক করতে পারেনি যে, খাবারের কোন আইটেমটি সে প্রথমে খাবে। পাশা লক্ষ্য করেছে, পাত্রে যে দুটি ডিম আছে। তা দিয়ে তার খাওয়া ভালোভাবে হয়ে যাবে। তার উপরে এখন তার খাবার পাত্রে সবজি, মাছ ও মাংস আছে। সেদিন পাশা ঠিক করে মাছ, সবজি এবং মাংস দিয়ে কোনমতে খাওয়া শেষ করে পরে সে ডিম দুটি মজা করে খাবে। তাই পাশা সেদিন সবজি, মাছ ও মাংস দিয়ে প্রথমে তার খাবার শেষ করে। পরে সে ডিম দুটি মজা করে খায়।

ছোটবেলার ঘটনা স্মরণ করে তার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। পাশা ঠিক করে প্রথমে সে অন্য মেয়েদের কোনমতে খুন করবে। পরে সে হেইলি এবং অ্যাশলিকে মজা করে খুন করবে। আর প্রায় পাঁচ মিনিট সময় আছে। এরপর এদের সবার একে একে জ্ঞান ফিরে আসবে। পাশার এখনো কাউকে খুন করা হয়নি। দ্বিতীয় তলার এই বিশাল কক্ষে মরদেহের গোসল এবং পোড়ানোর জন্য অনেকগুলো টেবিল পড়ে রয়েছে। কিছু টেবিলের উপর মরদেহ রেখে তাদের গোসল করানো হয়। কিছু টেবিলের উপর মরদেহকে সাজানো হয়। আবার কিছু টেবিলের উপর মরদেহকে পোড়ানোর জন্য রাখা হয়। পাশা তখন হেইলি ও অ্যাশলিকে দুটি টেবিলের উপর রশি দিয়ে ভালো করে বেঁধে রাখে। তাদের মুখ ডাক্টটেপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে তাদের জ্ঞান ফিরলে চিৎকার করতে না পারে। পাশা এবার প্রথমে জ্যাকি নামে এক মেয়েকে মরদেহ পোড়ানোর মেশিনে বা ক্রিমেসান মেশিনের সামনের টেবিলে উঠায়। সুইচ টিপে পাশা ক্রিমেসান মেশিনটি চালু করে। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনের ভেতরের আগুনের তাপমাত্রা প্রায় নয়শ’ আশি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। পাশা জ্যাকিকে অজ্ঞান থাকা অবস্থায় জোরে ঠেলে দিয়ে ক্রিমেসান মেশিনের আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে জ্যাকির দেহটি ভস্ম হয়ে যায়। এরপর পাশা একে একে অন্য ছয় জনকে অজ্ঞান অবস্থায় ক্রিমেসান মেশিনে ঠেলে ভস্ম করে মেরে ফেলল। সব মিলে পাশা সাত জনকে হত্যা করে ফেলল। বাকি আছে হেইলি আর অ্যাশলি। এদিকে পাশা এদের সবাইকে হত্যা করার আগে তাদের পরিচয়পত্র ও ক্রেডিট কার্ড নিজের পকেটে পুরে রাখে। পরপর সাতজনকে হত্যার পর পাশা তাদের সাথে থাকা সব কাপড়-চোপড়, ফোন ও হাতব্যাগ ক্রিমেসান মেশিনের ভেতর আগুনের মধ্যে ফেলে ভস্ম করে।

রাত তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। পাশা সাত মেয়েকে দশ মিনিটের মধ্যে হত্যা করে অপেক্ষা করছে কখন হেইলি ও অ্যাশলির জ্ঞান ফিরবে। পাশা কক্ষটির মেঝেতে অতিরিক্ত কাপড় ও ট্রেসব্যাগ দিয়ে ঢেকে রেখেছে। যাতে তাদের রক্ত খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। পাশা তার ব্রিফকেস থেকে ধারালো ছুরি বের করে তার হাতের পাশে রাখে। পাশা এখন মনের আনন্দে হেইলি ও অ্যাশলিকে খুন করবে। কিন্তু এখনো তাদের জ্ঞান ফেরেনি। কিছুক্ষণ পর হেইলির জ্ঞান ফিরে আসে। পাশা ভাবল হেইলিকে এখন সে হত্যা করবে। যদিও সে মনে মনে চেয়েছে হেইলিকে পরে হত্যা করতে। কিন্তু অ্যাশলির এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাই পাশা ভাবল আর দেরি করা ঠিক হবে না। পাশা তার হাতে ধারালো লম্বা ছুরিটি নেয়। হেইলি টেবিলের উপরে বাঁধা অবস্থায় চিৎকার করার বহু চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মুখ ডাক্টটেপ দিয়ে বন্ধ থাকার জন্য কিছুই শোনা যাচ্ছে না। হেইলি তার শরীর নড়াচড়া করার বহু চেষ্টা করছে। কিন্তু পাশা তাকে শক্ত করে রশি দিয়ে মরদেহের গোসলের একটি টেবিলের ওপর বেঁধে রেখেছে। পাশা হেইলিকে বলল, ‘ইউ আর মাই জ্যাকপট। আই নেভার থট আই উইল বি অ্যাবল টু কিল নাইন গার্লস অ্যাট দ্য সেম টাইম। আই হ্যাভ কিলড ইওর সেভেন ফ্রেন্ডস নাউ আই উইল কিল ইউ অ্যান্ড অ্যাশলি। আই অ্যাম সো হ্যাপি টুনাইট। রিয়েলি নাইট শিফট ইজ দ্য বেস্ট।’

পাশা হেইলিকে হত্যা করবে এমন সময় অ্যাশলি জেগে ওঠে। পাশা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে। সে হেইলিকে বলে, ‘আই উইল কিল ইউ এ লিটল বিট লেটার। নাউ আই উইল কিল অ্যাশলি। আই ওয়ান্ট ইউ টু ওয়াজ ভেরি কেয়ারফুলি।’ পাশা হেইলিকে বলে সে প্রথমে অ্যাশলিকে হত্যা করবে এবং তা তাকে মনোযোগ সহকারে দেখার জন্য। অ্যাশলি তার দুই চোখ খুলে দেখে তার হাত-পা ও মুখ বাঁধা, সে বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে। অ্যাশলি চিৎকার করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু বোঝা যাচ্ছে না। পাশা এবার সময় নষ্ট না করে তার হাতে ধারালো লম্বা ছুরিটি নেয় এবং এক কোপে অ্যাশলির মাথা তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রক্তে চারিদিকে ভরে যাচ্ছে। পাশা সাধারণত মাথায় কোপ দিয়ে তার শিকারকে হত্যা করে না। আজ তার কী হয়েছে তা সে বুঝতে পারছে না। বেশি উত্তেজিত হয়ে সে অ্যাশলির মাথা কেটে ফেলে। এদিকে তার বান্ধবীর গলা কাটা শরীর দেখে হেইলি ছটফট করছে এবং চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করছে। অ্যাশলির মাথাটি এখনো জীবিত আছে। পাশা অ্যাশলির মাথাটি তার ডানহাত দিয়ে তুলে নেয়। এরপর সে অ্যাশলির মাথাকে ক্রিমেসান মেশিনের আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়। হেইলি তা দেখে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। এবার পাশা ধারালো লম্বা ছুরি দিয়ে অ্যাশলির বুকের চারপাশে কর্তন করে। এরপর তার দুই হাত দিয়ে অ্যাশলির শরীর থেকে ফুসফুস, কলিজা ও লিভার তুলে নিয়ে টেবিলের ওপর রাখে। ধারালো ছুরিটি দিয়ে পাশা অ্যাশলির ফুসফুস, কলিজা ও লিভার ছোট ছোট টুকরা করে পলিথিনের একটি ট্রেসব্যাগে নেয়। এরপর পাশা অ্যাশলির বাকি শরীরকে ক্রিমেসান মেশিনের ভেতর আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাশলির পুরো দেহ ভস্মীভূত হয়ে কয়েক মুঠো পরিমাণ ছাই হয়ে যায়।

পাশা এবার হেইলির পুনরায় জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার তর সইছে না। পাশে এক পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে পাশা হেইলির মুখে ছিটিয়ে দেয়। এতে হেইলির জ্ঞান ফিরে আসে। সে পাশাকে দেখে কাঁদতে শুরু করে। পাশা হেইলিকে বলে, ‘ডোন্ট ওরি হেইলি। আই উইল টেক কেয়ার ইউ ডিয়ার। ইফ ইউ টেল মি ইউর কম্পিউটার পাসওয়ার্ড অ্যান্ড ইওর ফোন পাসওর্য়াড। দেন আই প্রমিজ আই উইল নট কিল ইউ।’ হেইলিকে পাশা বলে যদি সে তার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড এবং তার মুঠোফোনের পাসওয়ার্ড দেয়। তাহলে তাকে পাশা খুন করবে না। ভীত হেইলি সঙ্গে সঙ্গে পাশাকে তার মুঠোফোনের এবং কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড বলে দেয়।

তখন সময় রাত তিনটা। পাশা হেইলির কপালে একটি চুমু দেয়। এরপর সে লুকিয়ে তার ডানহাতে লম্বা ধারালো ছুরিটি নেয়। হেইলি মরদহের গোসলের টেবিলে বাঁধা অবস্থায় আছে। তাই সে দেখেনি পাশা তার হাতে ছুরি নিয়েছে। এবার পাশা ছুরিটি দিয়ে জোরে হেইলির বুকে আঘাত করে। রক্তে চারদিক ভেসে যায়। পাশা একদৃষ্টিতে হেইলির দিকে চেয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হেইলির দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে। এবার পাশা ধারালো লম্বা ছুরি দিয়ে হেইলির বুকের চারপাশে কর্তন করে। এরপর তার দুই হাত দিয়ে হেইলির শরীর থেকে ফুসফুস, কলিজা ও লিভার তুলে নিয়ে টেবিলের ওপর রাখে। ধারালো ছুরিটি দিয়ে পাশা হেইলির ফুসফুস, কলিজা ও লিভার ছোট ছোট টুকরা করে পলিথিনের একটি ট্রেসব্যাগে নেয়। এরপর পাশা হেইলির বাকি শরীর ক্রিমেসান মেশিনের ভেতর আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে হেইলির পুরো দেহ ভস্মীভূত হয়ে ছাই হয়ে যায়।

পাশা এবার কক্ষটিকে ব্লিচ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়। পাশা তার শরীরের কাপড় পরিবর্তন করে। কারণ তার পরিহিত পোশাকে প্রচুর রক্ত লেগেছিল। পাশা নতুন জামা-প্যান্ট পরিধান করে কক্ষের ভেতর অবশিষ্ট যত কাপড় ছিল তা সব ক্রিমেসান মেশিনের ভেতর আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়। এখন কক্ষটি পুরোপুরি পরিষ্কার। পাশা হেইলিকে হত্যা করার আগে তার হাত ব্যাগ থেকে অন্যদের মতো পরিচয়পত্র ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে রাখে। এবার পাশা হেইলিদের নিচের তলায় বেজমেন্টের কক্ষে প্রবেশ করে। হেইলিদের বাসার কম্পিউটারে হেইলির দেওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে চালু করে। পাশা পূর্বেই সবার পকেট থেকে তাদের পরিচয়পত্র এবং ক্রেডিট কার্ড নিয়েছে তার অপরাধ চাপা দেওয়ার জন্য, টাকা চুরি করার জন্য নয়। পাশা সবাইকে খুন করার আগেই বুঝতে পারে যে, যেহেতু হেইলিদের বাড়ির আশেপাশে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই এবং সবাইকে হত্যা করে ক্রিমেসান মেশিনে পোড়ানো হবে। তাই এখানে তার ধরা পড়ার কোন ভয় নেই। যদি পুলিশ কোনভাবে পাশাকে সন্দেহ করে। কারণ সে হেইলিকে ম্যানহাটন থেকে তার ক্যাবে করে স্টেটেন আইল্যান্ডে নিয়ে গেছে তাতেও পাশার কোন সমস্যা নেই। এর কারণ হচ্ছে পুলিশ পাশার ক্যাবের রেকর্ড চেক করলে দেখতে পারবে যে, সে হেইলিকে তার বাড়ির সামনে নামিয়েছে।

পাশা জন জে কলেজে অপরাধবিদ্যা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে পড়াশোনা করছে। সে সুবাধে তার সাথে অনেক পুলিশ অফিসারের বন্ধুত্ব। তাই মাঝে মধ্যে সে তাদের তদন্তের গল্প শোনে। এতে তার পুলিশি তদন্তের অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে। তাই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে পাশা ঠিক করে, সে হেইলির কম্পিউটার চালু করে হেইলির কার্ড দিয়ে তার বান্ধবীদের এবং তার জন্য নিউজার্সির আটলান্টিক সিটি ক্যাসিনোর পাশে একটি হোটেল বুক দেবে। স্টেটেন আইল্যান্ড থেকে নিউজার্সির আটলান্টিক সিটি ক্যাসিনোতে যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। প্রায় একশ’ দশ মাইল রাস্তা। আটলান্টিক সিটিতে অনেক নিউইয়র্কবাসী অবকাশ-যাপন বা মজা করার জন্য যায়। সে জন্য পাশা হেইলিকে হত্যা করার আগে তার কাছ থেকে তার কম্পিউটার ও তার মুঠোফোনের পাসওয়ার্ড চেয়ে নেয়। এতে যদি কোন কারণে পুলিশ তদন্তে নামে। তাহলে পুলিশ বুঝতে পারবে যে, তারা সবাই আটলান্টিক সিটি ক্যাসিনোতে ব্যাচেলরেট পার্টি উপলক্ষে মজা করতে গিয়েছে। ফলে তদন্তটি আটলান্টিক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ওপর পড়বে। আর যেহেতু হেইলিরা ওখানে যায়নি। তাই আটলান্টিক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের তদন্তটি সহজেই বন্ধ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে পাশা হেইলির মুঠোফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে। কারণ পাশা হেইলির ফোন চালু করে হেইলির পক্ষ থেকে তার বান্ধবীদের নিউইয়র্কে থাকার অনিচ্ছার মেসেজ পাঠাবে এবং তার ফোনে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য সার্চ করে রাখবে। যাতে পুলিশ যদি কোনদিন তার ফোন রেকর্ড চেক করে তাহলে তারা যেন বুঝতে পারে যে, সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এতে তদন্ত ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। পাশারও ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ হবে। তাই পাশা হেইলির কম্পিউটার অন করে তার বান্ধবীদের জন্য আটলান্টিক সিটির একটি হোটেল বুকিং করে। পাশা সবার পরিচয়পত্র থেকে তথ্য নিয়ে একটি হোটেল বুকিং দেয়। তাছাড়া পাশা একই তথ্য দিয়ে আটলান্টিক সিটিতে সিনেমার টিকিট নেয়, রেস্তোরাঁয় বুক দেয় এবং জাদুঘর দেখার টিকিট কেনে। এরপর পাশা হেইলির মুঠোফোন চালু করে হেইলির পক্ষ থেকে তার মৃত বান্ধবীর সবার ফোনে পালিয়ে যাবার নানা মেসেজ পাঠায়। সবার সাথে সে তার পালানোর পরিকল্পনা শেয়ার করে।

রাত প্রায় চারটা। পাশা হেইলির কক্ষ থেকে তার কিছু ভালো কাপড় আর ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী নিয়ে দ্বিতীয় তলায় যায়। এরপর সবগুলো ক্রিমেসান মেশিনের আগুনে ফেলে দিয়ে ভস্ম করে। পাশা এবার ক্রিমেসান মেশিনটি বন্ধ করে দেয়। মেশিন থেকে সব ছাই সংগ্রহ করে একটি ট্রেসব্যাগে ভরে নেয়। ছাইয়ের পরিমাণ কম দেখে পাশা বিস্মিত হয়। সবমিলিয়ে তিন বা চার কেজি ছাই হবে। এবার পাশা ছাইয়ের ব্যাগ, হেইলি ও অ্যাশলি থেকে কেটে নেওয়া মাংসের ব্যাগ এবং তার ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে তার গাড়িতে চলে যায়। হেইলিদের বাড়িতে কোথাও কোন অপরাধের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। প্রায় সাড়ে চারটা বাজে পাশা হেইলিদের বাড়ি ত্যাগ করে ম্যানহাটনে চলে যায়। এরপর পাশা আরও কয়েক ঘণ্টা ম্যানহাটনে ক্যাব চালায়। সকাল আটটা বাজে পাশা তার বাড়িতে পৌঁছে।

চলবে...

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।