গরু ভক্তি চোরের লক্ষণ
অদ্যকালে নিয়ত এই অধম পরান ভরিয়া ভারতবর্ষের গরু ভক্তির সন্দেশ শুনিতেছে। সম্প্রতি কিষৎ এই মনে কেন জানি ঘোর সন্দেহের জাগ্রত হইল। হঠাৎ গোমূত্রের জন্য জনগণের অত্যধিক আগ্রহ কেনইবা বাড়িয়াছে। তদতিরিক্ত মোদিজির গোপূজার আলোকচিত্র এবং দূরেক্ষণের ফেবুবিশেষজ্ঞদের স্বতন্ত্র সমালোচনা এই হৃদয়ের মধ্যে বিশেষভাবে নাড়া দিয়ে চাড়িল। যেমনটি মাস্টারমশাই সেই ছোটবেলাতে ইস্কুলে মোর চিবুক ধরিয়া টানিত আর বলিত, ‘বুঝিলি মূর্খ তোর দ্বারা বুঝি আর কিচ্ছু হইবে না’। ভাবি অকস্মাৎ কেনইবা মানব হৃদয়ে এমন পশুপ্রেমের বিনিদ্র হইয়াছে।
পড়িলাম, বহুবার সেই স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ‘জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’। কী বুঝিয়া তিনি তাহা কহিয়াছে, মোর বোধগম্য বুঝি এখনো হইল না। কারণ তাহা যদি বিন্দুমাত্র সত্য হইত, তবে গরুকে দুই হাত দিয়া প্রণাম করিয়া মানুষ পাঠা বা মহিষকে ঈশ্বরের নামে এককোপে বলি দিত না। গরু নিয়া বাড়াবাড়ি, গরু নিয়া কাড়াকাড়ি, অতঃপর গোহত্যার দরুণ মুসলমানের হত্যা দিন দিন ভারতবর্ষে বাড়িয়াছে। বাঙালি মোরা, তাই বলে আমরাই বা কেন পিছিয়া থাকিব। আপন পশুত্ব হত্যার উপলক্ষে তাহারা বহু গরু কুরবানি দিয়াছে, তৎসত্ত্বেও হিন্দুর অপসারণ বা ভিটা দখলে ইহাদের বিন্দুমাত্র ক্ষান্তি নাই। বঙ্গভূমিতে হিন্দুর অস্তিত্ব আজ সংকটপূর্ণ বটে। তাই ভাবিয়া ওপার বাংলার হিন্দুদের রক্ত ক্ষণিকের মধ্যে রকেটের মত প্রবৃত্ত হইয়া থাকে।
কলিযুগে রাম-নাম কত মধুর তাহা গোটাকয়েক হিন্দু ব্যতীত আর কেহ জানিল কি-না এতে মোর ঘোর সন্দেহ বিরাজমান। ইহারাই একদিন স্বর্গের বাসিন্দা হইবে। তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ আমার নাই। অথচ গোহত্যার দরুণ এক মুসলমানকে রক্তাক্ত করিয়া তাহার কণ্ঠে ‘জয় শ্রী রাম’ শুনিবার চেষ্টা বা স্বার্থকতাতে ইহারা কতদূর যাইতে পারিবে বলা বাহুল্য। তবে এটা জানি, এই কলঙ্কিতদের জন্য গোটা পৃথিবীটা আজ অপবিত্র হইল। গরু ভক্তি করিয়া ইহারা নরহত্যা করিতে পুরোদমে সক্ষম। অপরত্র, গরু কুরবানি দিয়া হিন্দুর বাড়িতে আগুন জ্বালাইতে মুসল্লিদের বিন্দুমাত্র হাত বুঝি কাঁপিল না। দুই ধর্মের মূলেই গরু, তাই বুঝি ইহাদের এমন গো-স্বভাব? যেন ইহাদের গরু ভক্তি চোরের লক্ষণ।
গরু কুরবানি দিয়া সাধারণের সম্পদ চুরি, দুর্বলের সর্বস্ব কাড়িয়া আপন পকেট ভর্তি এবং সেই অর্থ দিয়া হজ পালন করিলে বিন্দুমাত্র লাভ হইবে না। অপরত্র, গো-মূত্র পান এবং গো-পূজা করিলেই বৈকুণ্ঠ লাভ হয় না। সর্বজীবে যতদিন মানুষ সত্য প্রেমে না মজিল, ততদিন বেহেশতের দ্বার ইহাদের জন্য খুলিবে না।
লেখক: নিউ ইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা।
এসইউ/পিআর