টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ১১

ড. রাজুব ভৌমিক
ড. রাজুব ভৌমিক ড. রাজুব ভৌমিক , কবি ও লেখক
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সিয়ারা লিলিয়ানার হাত থেকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত স্ট্রবেরিটি হাতে নিল। স্ট্রবেরিটি আকারে একটু ছোট হওয়ায় সিয়ারা পুরো স্ট্রবেরিটি তার মুখে ঢুকিয়ে খেয়ে ফেলে। লিলিয়ানা সব দেখল এবং না দেখার ভান করে তার হুইলে চেয়ারে বসে বসে অন্য স্ট্রবেরি খেতে থাকে। লিলিয়ানা জানে সিয়ারার অজ্ঞান হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সিয়ারা লিলিয়ানার হুইল চেয়ারটি ঠেলছে আর লিলিয়ানা হুইল চেয়ারে বসে স্ট্রবেরি খাচ্ছে আর ধৈর্য ধরে সিয়ারা অজ্ঞান হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

ইতোমধ্যে লিলিয়ানা হুইল চেয়ারে বসে প্রায় তার গাড়ির সামনে পৌঁছে যায়। সিয়ারা এখনো অজ্ঞান হয়নি। সে লিলিয়ানার হুইল চেয়ারটি এখনো পেছন থেকে ঠেলছে। লিলিয়ানার গাড়ির সামনে এলে সিয়ারা তাকে তার চালকের আসনে বসতে সাহায্য করে। হঠাৎ সিয়ারা বলল, ‘আই ডোন্ট ফিল গুড। ক্যান আই সিট ইন ইওর কার ফর এ লিটল বিট। ইট সিমস লাইক মাই হেড ইজ স্পিনিং।’

সিয়ারা লিলিয়ানাকে বোঝাল যে, সে খুব একটা ভালো বোধ করছে না। হঠাৎ তার মাথাটা কেমন করছে এবং সে লিলিয়ানার গাড়িতে একটু বসতে চাইছে। এই বলে সিয়ারা লিলিয়ানার গাড়ির পেছনের দরজা খুলে সিটে বসে পড়ে। লিলিয়ানা সব বুঝতে পেরে একটি মুচকি হাসি দেয়। কারণ সিয়ারা যদি গাড়ির দিকে আসার সময় রাস্তায় অজ্ঞান হতো তাহলে তাকে অনেক কষ্ট করতে হতো। এমন হতে পারত, সে মানুষের হাতে বা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে যেত। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেটা আজ হয়নি। সিয়ারা ঠিক সময়ে অজ্ঞান হয়। খাঁচার পাখি যেমন খাঁচায় ঢুকে যায় তেমনি সিয়ারা অজ্ঞান হয়ে লিলিয়ানার গাড়ির পেছনে বসে পড়ে। লিলিয়ানা এতে খুব মজা পেল।

লিলিয়ানা এবার তার গাড়ি থেকে নেমে তার হুইল চেয়ারটি গাড়ির পেছনে তুলে রাখে। এরপর দ্রুত সে ওই এলাকা থেকে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ গাড়ি চালানোর পর লিলিয়ানার মনে পড়ল যে, সে সিয়ারার হাত ও পা বাঁধতে ভুলে গেছে। লিলিয়ানা হাইওয়ের পাশে গাড়ির জরুরি বাতি জ্বালিয়ে থামল। এরপর তার গাড়ির ট্র্যাংক থেকে কিছু রশি নিল। এ সময় সিয়ারা অজ্ঞান হয়ে লিলিয়ানার গাড়ির পেছনে সিটে কাত হয়ে শুয়ে আছে। লিলিয়ানা রশি দিয়ে সিয়ারার হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে দেয়। এরপর সিয়ারার মুখ ডাক টেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। যাতে সে জ্ঞান ফিরে কোনভাবে চিৎকার করতে না পারে। লিলিয়ানা সিয়ারার পুরো শরীরকে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে, যাতে কেউ বাহির থেকে বুঝতে না পারে যে তার গাড়ির পেছনের সিটে কে বা কী আছে। লিলিয়ানা প্রথমে ভাবল যে, সিয়ারার শরীরটি গাড়ির পেছনে ট্র্যাংকের ভেতর রাখবে। কিন্তু বেলা এখন প্রায় বারোটা। হাইওয়ে রাস্তায় এখন প্রচুর গাড়ি চলাচল করছে। তাই লিলিয়ানা অযথা ঝুঁকি নিতে চায়নি।

লিলিয়ানা তার গাড়িটি আবার চালু করে। এবার তার গন্তব্য হচ্ছে পাশার ট্রাকের পার্কিংয়ের স্থান। প্রায় চল্লিশ মিনিট গাড়ি চালিয়ে লিলিয়ানা তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে লিলিয়ানা দেখে যে, পাশার ট্রাকটি নাই। ‘বোধ হয় পাশা এখনো তার ট্রাকটি দিয়ে মাংসের ডেলিভারি দিচ্ছে।’ লিলিয়ানা ভাবল। বেলা প্রায় একটা বাজে। লিলিয়ানা তার গাড়িটি রাস্তার একপাশে পার্ক করে পাশার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পাশা সাধারণত বেলা একটার দিকে মাংসের ডেলিভারি শেষ করে আসে। বেলা এখন প্রায় দুইটা বাজে। পাশার কোন খোঁজ-খবর নেই। ‘পাশা কি কোথাও চলে গেছে?’ লিলিয়ানা তার গাড়িতে বসে বসে ভাবছে আর তার গাড়ির পেছনে তাকাচ্ছে। সিয়ারার জ্ঞান যে কোন মুহূর্তে ফিরে আসতে পারে। তাই লিলিয়ানা তার গাড়ির পেছনের সিটের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। একটু পরে সে দেখল সিয়ারার জ্ঞান ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। সিয়ারা তার পা নাড়াচ্ছে। লিলিয়ানা একটু ভয় পেয়ে যায়। এদিকে পাশারও কোন দেখা নাই। সব মিলিয়ে লিলিয়ানা খুব বিরক্ত-বোধ করছে।

লিলিয়ানা তার গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির ট্র্যাংকটি চাবি দিয়ে খুলল। ট্র্যাংকের ভেতরে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ আছে কি-না তা দেখতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ট্র্যাংকের ভেতর সে আরেকটি ঘুমের ওষুধ দেখতে পায়। এরপর একটি পানির বোতল অর্ধেকের বেশি মাটিতে ফেলে দিয়ে সে বোতলে ঘুমের ওষুধটি মেশায়। সিয়ারার জ্ঞান ফিরে আসার পর লিলিয়ানা তার মুখের উপর লাগানো ডাক্ট টেপটি খুলে নেয়। সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করতে থাকে। লিলিয়ানা আবার ডাক্ট টেপটি তার মুখের উপরে লাগিয়ে দেয়। এরপর সে বলল, ‘লুক, আই ওয়াজ ট্রাইং টু গিভ ইউ সাম ওয়াটার বিকজ আই থট ইউ মে বি থ্রাস্টি। বাট সিনজ ইউ আর স্ক্রিমিং, সো নাউ ইউ ওন্ট গেট এনি ওয়াটার।’ লিলিয়ানা সিয়ারাকে বলে যে, সে তার মুখের উপর লাগানো ডাক্ট টেপটি খুলেছে শুধুমাত্র তাকে কিছু পানি দেবার জন্য কিন্তু যেহেতু সে চিৎকার করছে তাই এখন আর তাকে কোন পানি দেওয়া হবে না। এবার সিয়ারা মাথা দিয়ে কি জানি ইশারা করতে থাকে। লিলিয়ানা বলল, ‘ওকে, আই উইল রিমুভ ডাক্ট টেপ অনলি ইফ ইউ প্রমিজ নট টু স্ক্রিম।’ সিয়ারা মাথা নেড়ে এতে সায় দেয়। লিলিয়ানা আবার সিয়ারার মুখ থেকে ডাক্ট টেপটি তুলে নেয়। এবার আর সিয়ারা কোন চিৎকার করছে না। সে শান্ত গলায় বলল, ‘হোয়াই ডিড ইউ কিডন্যাপ মি? হোয়াট ডিড আই এভার ডু টু ইউ? আই ওয়াজ ট্রায়িং টু হেলপ ইউ!’ লিলিয়ানা ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানির বোতলটি তার মুখে সামনে এনে তাকে পান করতে সাহায্য করে। ‘ইটস নট পার্সোনাল। জাস্ট হেলপিং এ ফ্র্যান্ড।’ লিলিয়ানা সিয়ারার মুখে পানি ঢালতে ঢালতে বলল।

সিয়ারা খুবই তৃষ্ণার্ত ছিল। তাই সহজেই বোতলের সব পানি পান করে নেয়। ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত বোতলের পানি পান করার পর সিয়ারা আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এদিকে বেলা প্রায় তিনটা বাজে। এখনো পাশার কোন দেখা নাই। লিলিয়ানা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। একদিকে সে নিউইয়র্ক পুলিশের ডিটেক্টিভের স্ত্রীকে অপহরণ করে তার গাড়িতে অজ্ঞান করে রেখেছে। তার উপর পাশার কোন দেখা নেই। অন্যদিকে ভার্জেনিয়া পুলিশ সিয়ারাকে হন্যহন্য করে খুঁজছে। বেলা সাড়ে তিনটা বাজে। হঠাৎ লিলিয়ানা পাশার ট্রাকটি রাস্তায় পার্ক করতে দেখে। অবশেষে লিলিয়ানা তার স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

লিলিয়ানা তার গাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশার ট্রাকের সামনে যায়। ‘হোয়াট হেপেন্ড? হোয়াই আর ইউ সো লেইট টুডে? আই ওয়াজ রিয়েলি ওরিড পাশা।’ লিলিয়ানা পাশাকে বলল। পাশা লিলিয়ানাকে বুঝিয়ে বলে যে, আজ তার অনেকগুলো ডেলিভারি ছিল এবং রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল তাই তার দেরি হয়ে গেছে। লিলিয়ানা পাশাকে বলে, ‘ও আই সি, লুক এজ প্রমিজ আই ব্রট ইওর প্রেজেন্ট টুডে।’ এই বলে লিলিয়ানা পাশার হাত ধরে তার গাড়ির দিকে নিয়ে যায়।

লিলিয়ানা তার গাড়ির পেছনের সিটের দরজা খুলল। পাশা দেখে সিয়ারা গাড়ির পেছনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। পাশা সিয়ারাকে দেখে যেন তার দু’চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ‘ও ওয়াও, ইউ আর এমেজিং লিলিয়ানা। অনলি ইউ ক্যান ডু সাচ থিং ভেরি ইজিলি। ইউ আর দ্য বেস্ট।’ পাশা লিলিয়ানাকে বলল যে, শুধু তার পক্ষেই এ অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় এবং সে তাকে অনেক ধন্যবাদ জানায়। পাশা চারিদিকে একটু তাকিয়ে দেখে কেউ রাস্তায় আছে কি-না। কাউকে পাশা রাস্তায় দেখছে না। তবে পাশার কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ একজন তাদের দেখছে। তাই সে লিলিয়ানাকে বলে তার ট্রাকের পেছনে লিলিয়ানার গাড়িটি পার্ক করার জন্য। তাহলে সেখান থেকে কেউ তাদের দেখবে না। লিলিয়ানা তার গাড়িটি পাশার ট্রাকের পেছনে পার্ক করে। এবার পাশা লিলিয়ানার গাড়ির পেছনের সিটের দরজা খুলে সিয়ারার নিথর দেহটিকে তার ট্রাকের ভেতর নিয়ে যায়।

লিলিয়ানাও পাশার পেছনে পেছনে তার ট্রাকের ভেতর প্রবেশ করে। লিলিয়ানা স্বভাবত একজন উৎসুক ধরনের। সে ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারত কিন্তু তা না করে লিলিয়ানা দেখতে চেয়েছে পাশা কিভাবে তার শিকারকে হত্যা করে। তাছাড়া লিলিয়ানার কোথাও যাবার তেমন কোন তাগাদা নেই। তাই লিলিয়ানা এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে চায়নি। শুধু গভীর মনোযোগ দিয়ে পাশা কিভাবে কী করছে তা সব লক্ষ্য করছে। পাশা প্রথমে সিয়ারাকে ট্রাকের ভেতর মাংসের টেবিলটির উপর রাখে। যেহেতু পাশা এইমাত্র মাংসের ডেলিভারি দিয়ে এলো। তাই আজ তার ট্রাকটি সম্পূর্ণ খালি। ট্রাকের ভেতর আজ যথেষ্ট খালি জায়গা। পাশা সিয়ারার শরীর থেকে লিলিয়ানার বাঁধা রশিগুলো খুলল। এরপর তার নিজের রশি দিয়ে সিয়ারাকে মাংস কাটার স্টিলের টেবিলের উপর শক্ত করে বেঁধে নেয়। লিলিয়ানা ট্রাকের ভেতর ছোট্ট একটি বাক্সের উপর বসে বসে সব দেখছে। কোন কিছুই সে বলছে না। সিয়ারা এখনো অজ্ঞান হয়ে মাংসের টেবিলের উপর পড়ে আছে। এদিকে পাশার মগজের ভেতরে লালসাটি যেন ক্ষণে ক্ষণে মহা-প্রখর হচ্ছে। এই লালসা চায় সিয়ারাকে জীবন্ত ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করতে আর সিয়ারার মৃত্যুপথযাত্রী চক্ষু দুটি আনমনে দেখতে। কিন্তু সিয়ারা এখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। পাশা সিয়ারার টেবিলের পাশে একটি বাক্সের ওপর বসে সিয়ারার জ্ঞান ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।

পাশা বারবার সিয়ারার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন সে তার নিজ চক্ষুকে বিশ্বাস করতে পারছে না। লিলিয়ানা পাশার কাণ্ড দেখে বসে বসে মুচকি হাসছে। পাশা তা একবারও লক্ষ্য করেনি। তার দুই চোখ এখন সিয়ারাকে নিয়ে ব্যস্ত। পাশা অন্য তেমন কিছু আর লক্ষ্য করছে না। বিকাল প্রায় পাঁচটা বাজে। সিয়ারার এবার জ্ঞান ফিরে আসে। সিয়ারা তার চোখ খুলে দেখতে পায়, সে বাঁধা অবস্থায় একটি ট্রাকের ভেতরে টেবিলের উপর আছে। আর যে মহিলাকে সে পঙ্গু ভেবেছে সে এবং পাশা ট্রাকের ভেতর বসে আছে। সিয়ারা পাশাকে দেখেই চিনতে পারে। সম্প্রতি পাশা ও তার স্ত্রী সিয়ারাদের বাড়িতে গিয়েছে। সিয়ারা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে কিছু বলার চেষ্টা করছে। এদিকে সিয়ারাকে জাগ্রত দেখে পাশা উঠে দাঁড়ায়। তার ভেতরের লালসাটি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। পাশা তার ডানহাতে লম্বা ধারালো ছুরিটি নেয়। আর দেরি না করে পাশা সিয়ারার বুকে ছুরি দিয়ে জোরে এক আঘাত করে। সাথে সাথে সিয়ারার রক্ত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কোন দিকে পাশার চোখ নেই। পাশা সিয়ারার বুকে ছুরি ঢুকিয়ে শুধু তার চোখের দিকে চেয়ে আছে। এভাবে পাশা কিছুক্ষণ সিয়ারার দিকে অপলকে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সিয়ারার চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যায়।

সিয়ারাকে হত্যা করার পরও কেন জানি পাশার লালসার ক্ষুধাটি মেটেনি। সে আরও ক্ষুধার্ত হয়ে যায়। পাশার বামদিকে একটি বাক্সের ওপর লিলিয়ানা বসে আছে। লিলিয়ানা দেখতে হুবহু সিয়ারার মত। লালসার ঘোরে সে লিলিয়ানাকে মুহূর্তের জন্য চিনতে পারে না এবং তার হাতের রক্তাক্ত ধারালো ছুরিটি দিয়ে লিলিয়ানার বুকে জোরে আঘাত করে। লিলিয়ানার বুকে ছুরি ঢুকিয়ে পাশা আগের মত তার চোখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর লিলিয়ানা মারা যায়। পাশা লিলিয়ানার দেহ ট্রাকের মেঝের উপরে রাখে। পাশার মনে এবার স্বস্তি ফিরে আসে। বহুদিন পর যেন তার ক্ষুধা নিবারণ হয়। তার মাথা একটু শান্ত হয়। পাশা দেখতে পায়, তার সামনে দুটো লাশ পড়ে আছে। তার সামনে অনেক কাজ। এই ভেবে পাশা তিন্নীকে ফোন করে বলে যে, তার আজ আসতে দেরী হবে। ডেলিভারি দিতে আজ পাশার দেরি হচ্ছে।

তিন্নীর সাথে কথা বলার পর ফোনটি পাশার প্যান্টের পকেটে রাখে। পাশা এরপর অতিরিক্ত পানি ও কাপড়ের টুকরা দিয়ে ট্রাকের ভেতরটি ভালো করে মুছে নেয়। পাশা তার প্রথম খুনের সময় অনেক ভুল করলেও এবার সে পুরোদমে প্রস্তুত। এবার ট্রাকে রক্ত পরিষ্কার করার জন্য ব্লীচ, অতিরিক্ত কাপড়ের টুকরা ও পানি ছিল। তাই সহজেই পাশা রক্তগুলো ভালো করে মুছে নেয়। পাশা ধারালো সেই লম্বা ছুরি দিয়ে সিয়ারার বুকের চারপাশ কাটে। এরপর তার দুই হাত দিয়ে সিয়ারার শরীর থেকে ফুসফুস, কলিজা ও লিভার তুলে নিয়ে টেবিলের একপাশে রাখে। ধারালো ছুরিটি দিয়ে পাশা সিয়ারার ফুসফুস, কলিজা ও লিভার ছোট ছোট টুকরা করে পলিথিনের একটি থলেতে নেয়। এরপর পাশা সিয়ারার শরীর থেকে হাড্ডি ছাড়া মাংস কেটে নেয়। কারণ হাড্ডি দেখলে সবাই বুঝতে পারবে যে, এটা মানুষের হাড্ডি। তাই পাশা ধারালো ছুরি দিয়ে সিয়ারার শরীরে উপরের অংশ থেকে মাংস কেটে নেয়। এরপর সেগুলোকে টুকরা টুকরা করে ট্রাকের একদিকে রাখে। কাল সকালে সে গরুর মাংসের সাথে মিশিয়ে সেগুলো কুইন্সের বিভিন্ন মাংসের দোকানে ডেলিভারি দেবে। সিয়ারার কঙ্কালসহ বাকি শরীরটি পাশা একটি ব্যাগে ভরে রেখেছে।

এবার পাশা লিলিয়ানার শরীরটি মাংসের টেবিলের ওপর রাখে। সিয়ারার মত লিলিয়ানারও বুকের চারপাশে গভীরভাবে কাটে। এরপর তার দুই হাত দিয়ে লিলিয়ানার শরীর থেকে ফুসফুস, কলিজা ও লিভার নিয়ে টেবিলের একপাশে রাখে। ধারালো ছুরিটি দিয়ে পাশা লিলিয়ানার ফুসফুস, কলিজা ও লিভার ছোট ছোট টুকরা করে আরেকটি পলিথিনের থলেতে নেয়। এরপর পাশা লিলিয়ানার শরীর থেকে হাড্ডি ছাড়া মাংস কেটে নেয়। মাংসগুলোকে ধারালো ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করে সিয়ারার মাংসের সাথে মেশায়। পুরো ট্রাকটি হিমায়িত। তাই মাংস বেশি যত্ন করে রাখতে হয় না। পরদিন পাশা লিলিয়ানা ও সিয়ারার মাংস গরুর এবং খাসির মাংসের সাথে মিশিয়ে কুইন্সের বিভিন্ন দোকানে ডেলিভারি দেবে। এতে তার ভালো আয়ও হবে এবং সহজেই বডি লুকানো যাবে। এখন লিলিয়ানার মাথা ও পাসহ কঙ্কাল রয়ে গেছে। সিয়ারারও মাথা-পাসহ কঙ্কাল রয়ে গেছে। পাশা এরিকার মাথা, পা ও শরীরের কঙ্কাল মিট গ্রাইডারের মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু এবার পাশা সেটা করবে না। এর কারণ হচ্ছে এবার লিলিয়ানা।

লিলিয়ানার গাড়িটি পাশার ট্রাকের পেছনে পার্ক করা আছে। তার গাড়িটি কিভাবে পরিত্যক্ত করবে, সে নিয়ে পাশা চিন্তা করতে থাকে। কেননা গাড়িটি এ জায়গায় বেশিদিন থাকলে পুলিশ এসে নিয়ে যাবে। পুলিশ তদন্ত করলে বুঝতে পারবে যে গাড়িটি লিলিয়ানার। পরে গাড়িটি নিয়ে পাশা ফেঁসে যেতে পারে। তখন পাশার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। পাশা ভাবল সে লিলিয়ানার গাড়িটিকে সাগরের পাশে পার্ক করে দুই সিটে লিলিয়ানা ও সিয়ারার কঙ্কাল বসিয়ে গাড়িতে অকটেন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেবে। এতে কোন ফরেনসিক নমুনা অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু থাকবে দু’জনের ডিএনএর নমুনা। লিলিয়ানাকে এমনিতে ভার্জেনিয়া পুলিশ খুঁজছে। তারা জানে লিলিয়ানা একজন সিরিয়াল কিলার। তাই নিউইয়র্কের পুলিশ যখন ভস্মিভুত গাড়িতে সিয়ারার এবং লিলিয়ানার ডিএনএর নমুনা পাবে, তখন ভাববে এসব সিরিয়াল কিলার লিলিয়ানার কাণ্ড। এতে সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না। লিলিয়ানার গাড়িটি ফরেনসিক নমুনাসহ ধ্বংস করা যাবে। আবার এ হত্যাকাণ্ডের ভার লিলিয়ানার ওপর চাপবে। এতে তার বন্ধু ডিটেক্টিভ সমরবাবু তাকে সন্দেহ করবে না।

চলবে...

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।