টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ১০

ড. রাজুব ভৌমিক
ড. রাজুব ভৌমিক ড. রাজুব ভৌমিক , কবি ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৯

পাশাকে আজও সোমাদের বাড়ি খালি হাতে ফিরে যেতে হবে। হরিণ শিকারের কথা বলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে সেই কত আগে। কিন্তু কোন কিছু তো পাশা শিকার করতে পারেনি। পাশার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, সে লিলিয়ানাকে হত্যা করার পর তার কলিজা, ফুসফুস, লিভার বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর সোমা তা গরুর মাংস ভেবে রান্না করে তাকে খাওয়াবে এবং সে নিজেও খাবে। পাশা জানে গরুর মাংস সোমার খুব পছন্দ। তাই পাশা আজ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে খালি হাতে সোমাদের বাড়ি না গিয়ে পাশের লাইভ মিটের দোকানের দিকে যাচ্ছে। সেখান থেকে প্রকৃত গরুর মাংস নিয়ে যাবে। মাইলখানেক হাঁটার পর সে লাইভ মিটের দোকানে পৌঁছায়। তারপর সোমার জন্য গরুর মাংস কিনে বাড়ি ফিরে যায়।

রাতে সবাই খাওয়া শেষ করে ঘুমাচ্ছে। পাশাও শুয়েছে কিন্তু ঘুম আসছে না। তার মগজে লুকায়িত এক লালসা তাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। এ লালসায় আছে অনিয়ন্ত্রিত এক শক্তি। যেটা পাশাকে এখন দিনদিন নিয়ন্ত্রণ করছে। এ লালসায় আছে এমন ক্ষুধা, যে ক্ষুধা পৃথিবীর অন্য কিছু দিয়ে মেটে না। পাশার বারবার মনে পড়ছে এরিকার কথা। আরও কত কী মনে ভাসছে। কিন্তু কিছুতেই যেন পাশার ঘুম আসছে না। এভাবে প্রায় সারারাত নিদ্রাহীন কেটে যায়।

সকালে বিছানা থেকে উঠে পাশা সবার সাথে নাস্তা করতে টেবিলে বসে। ‘আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনি কয়েক বছর ধরে ঘুমাননি, ভাইজান।’ সোমা মজা করে পাশাকে বলল। ‘তুই কি বলিস? পাশার ঘুম আর কুম্ভকর্ণের ঘুম... সে একই কথা।’ তিন্নী হাসতে হাসতে সোমাকে বলল। পাশা কিছু না বলে শুধু নাস্তা খাচ্ছে। আর মুঠোফোনের ভেতর বিভিন্ন খবর পড়ছে। যদি কোথাও এরিকাকে নিয়ে কোন সংবাদ পাওয়া যায়। অনেক দিন হয়ে গেল, এরিকাকে নিয়ে নিউইয়র্কের গণমাধ্যমে কোন সংবাদ একেবারেই নেই। ‘তার মানে কি ডিটেক্টিভ সমরবাবুর কথাই ঠিক।’ পাশা ভাবল। পাশার মনে আছে ডিটেক্টিভ সমরবাবুর কথা। সমরবাবু বলেছিল, ‘এ দেশে আঠার বছর হলে ছেলে-মেয়ে বাড়িতে মা-বাবার কাছে কিছু না বলে অন্যত্র চলে যায়। এ ঘটনা প্রায়ই হয়ে থাকে। অনেক মা-বাবা এসে পুলিশি রিপোর্ট করে কিন্তু পুলিশের আসলে করার কিছুই থাকে না।’

‘হতে পারে কেউ এরিকাকে হত্যা করেছে- সেটা জানতে পারেনি।’ পাশা ভাবল। এরিকার পরিবার হয়তো এরিকার নিখোঁজ নিয়ে পুলিশি রিপোর্ট করেছে। যেহেতু এরিকা একজন প্রাপ্তবয়স্ক; সেহেতু পুলিশ তাদের রিপোর্ট এত গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। পুলিশ হয়তো ভেবেছে যে, এরিকা সবাইকে ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে চলে গেছে।

অধিকন্তু, পাশা গত কয়েকদিন ধরে সোমাদের বাড়িতে বসে নিউইয়র্কের সব খোঁজ-খবর রাখছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এরিকাকে নিয়ে কোন সংবাদ পরিবেশন করা হয়নি। তাই পাশা এখন অনেকটাই নিশ্চিত যে, এরিকাকে নিয়ে পাশা যে ভয় করেছিল সেটা শুধু মিছে ছিল। পাশা ভাবল, এখন তার নিউইয়র্কে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বহুদিন ধরে সে নিউইয়র্ক ছেড়ে ভার্জিনিয়াতে সোমাদের বাড়িতে তিন্নীর সাথে বেড়াচ্ছে।

এতক্ষণ নাস্তার টেবিলে পাশা কোন কথাই বলেনি। পাশাকে নিয়ে তিন্নী ও সোমা ঠাট্টা করছে। কিছুক্ষণ পর পাশা বলল, ‘তিন্নী, অনেক দিন হলো আমরা বেড়াচ্ছি ভার্জেনিয়াতে। এখন নিউইয়র্কে যেতে হবে। ডেলিভারির কাস্টমাররা আমাকে প্রতিদিন ফোন দিচ্ছে। তুমি এখানে অনেক মজা করছো। তাই এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু শীঘ্রই নিউইয়র্কে না গেলে কোম্পানি অন্য ড্রাইভার খুঁজে নেবে। তখন আমি চাকরি হারাবো। চলো, আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে যাই।’ পাশার হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া তিন্নীর একদম পছন্দ না। তবে পাশার কথায় যুক্তি ছিল ভেবে তিন্নী রাজী হয়ে যায়। এদিকে যাওয়ার কথা শুনে সোমার মন খারাপ হয়। সবার সাথে সোমার এতদিন বেশ ভালো কাটছিল। কিন্তু এখন তিন্নীরা চলে যাবে বলে তার মন খারাপ হয়ে যায়। তার স্বামী শাহেদ একজন ডাক্তার। তাই সবসময় সে হাসপাতালের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সোমাকে ঠিকমত সময় দিতে পারে না। সোমা সারাদিন বিশাল বাড়িতে একা থাকে। কেউ বেড়াতে এলে সোমা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।

বেলা প্রায় চারটা বাজে। পাশা ও তিন্নী সোমাদের বাড়িতে দুপুরের খাবার শেষ করে গাড়িতে নিউইয়র্কের দিকে যাচ্ছে। তিন্নীর মনটা ভীষণ খারাপ। পাশা নিঃশব্দে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে সামান্য ভলিউমে তিন্নীর প্রিয় রবীন্দ্রসংগীত চলছে। পাশা পথে একটি ফিলিং স্টেশনে থামিয়ে গাড়িতে জ্বালানি নেয়। এরপর পাশা আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে। প্রায় ছয় ঘণ্টা ড্রাইভিং করে পাশা তার বাড়ি পৌঁছায়।

পরের দিন পাশা তার নিয়মিত কাস্টমারদের আবার ডেলিভারি দেওয়া শুরু করে। সবাই পাশাকে জিজ্ঞেস করে, কোথায় ছিল সে এতদিন। অনেকে পাশার সন্তান হবে বলে ঠাট্টা করে। পাশা সব হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেয়। এভাবে কয়েক দিন চলে যায়। পাশাকে নিয়ে তিন্নী একটি জিইডি হাই স্কুল প্রোগ্রামে ভর্তি করে দেয়। পাশা সেখানে নিয়মিত যায়। পাশার ইচ্ছা সে জিইডি প্রোগ্রাম শেষ করে জন জে কলেজে অপরাধ বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করবে। এদিকে ডিটেক্টিভ সমরবাবু একদিন পাশাকে ফোন দেয়। ‘পাশা, কী খবর তোমার? অনেক দিন তোমার কোন খোঁজ-খবর নাই।’ সমরবাবু বলল। পাশার মুঠোফোনে সমরবাবু ফোন করছে দেখে ভয় পেয়ে যায়। প্রথমে সমরবাবুর ফোন নম্বর দেখে পাশা ফোন রিসিভ করবে না ঠিক করে। কিন্তু পরে কেন জানি পাশা সমরবাবুর ফোনটি রিসিভ করে। ‘এই তো সমরবাবু, ভালো আছি। অনেকদিন নিউইয়র্কের বাইরে ছিলাম, তাই কথা হয়নি।’ পাশা বলল।

সমরবাবুর পাশাকে দারুণ পছন্দ হয়েছে। পাশাকে সে একজন সৎ ও কর্মঠ মানুষ হিসেবেই চেনে। তাছাড়া সমরবাবু ও একসময় নিউইয়র্কে ক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। পাশাও বহুদিন ধরে শহরে ক্যাব চালাচ্ছে। তাই হয়তো পাশার সাথে কথা বলতে সমরবাবুর ভালো লাগে। ফোনে কথা শুনে পাশা বুঝতে পারছে সমরবাবু তার বাড়িতে আসতে চাইছে। তাই পাশা অগত্যা সমরবাবুকে তার বাড়িতে সন্ধ্যায় আসার জন্য নিমন্ত্রণ করে। সমরবাবু সন্ধ্যায় পাশাদের বাড়িতে আসে। অনেকক্ষণ ধরে পাশা সমরবাবুর সাথে আড্ডা দেয়। পাশারও সমরবাবুকে অনেক পছন্দ হয়েছে। সমরবাবু একেবারে হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ। মজা করতে ভীষণ পছন্দ করে। তার মজার মজার গল্প শুনলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। অনেকক্ষণ গল্প করে এবং রাত্রে পাশার বাড়িতে খাওয়া শেষ করে সমরবাবু তার বাড়িতে চলে যায়। যাওয়ার আগে পরের দিন বিকেলে পাশা ও তিন্নীকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করে যায়।

পরের দিন বিকেলে পাশা ও তিন্নী সমরবাবুদের বাড়িতে যায়। সমরবাবুর বাড়ি নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে। সমরবাবুর বাড়িতে যেতে পাশাদের বাড়ি থেকে গাড়ি চালিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। সমরবাবুর বাড়িটি বিশাল। দেখতে পুরোদমে একটি রাজপ্রাসাদের মত। চার তলার বাড়িটির চারিদিকে কত ফুলের বাগান। পাশা সমরবাবুর বাড়ির দরজায় নক করে। দরজা খোলে এক ভদ্রমহিলা। পাশা তাকে দেখে অবাক। ভদ্রমহিলাটি হচ্ছে সমরবাবুর স্ত্রী সিয়ারা। যে দেখতে হুবহু সেলিনার মত। সিয়ারার উচ্চতাও সেলিনার মত ৫ ফুট ২-৪ ইঞ্চি হবে। ওজন প্রায় ৫০ কেজির মত। মাথার চুলগুলো অনেক কালো। ফর্সা তার গায়ের রং। পাশা সিয়ারাকে প্রথম দেখে তিন্নীর বান্ধবী মনিকাদের বাসায়। সেদিন তিন্নী এবং পাশা মনিকার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাদের বাড়িতে যায়। পাশা সিয়ারার কথা প্রায় ভুলেই যায়। হঠাৎ তাকে আবার দেখে পাশার মগজের লালসাগুলো পুনরায় জাগ্রত হয়। আবার এক অজানা ক্ষুধার জন্ম হয়। এ এমন এক ক্ষুধা, যে ক্ষুধা পৃথিবীর কোন দ্রব্যাদি দিয়ে মেটে না।

পাশা ও তিন্নী সমরবাবুদের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। সিয়ারা তিন্নীকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে বরণ করে। সমরবাবু এসে পাশার সাথে করমর্দন করে। পাশা সমরবাবুর সোফাতে বসে আর সুযোগ পেলে সিয়ারার দিকে একটু তাকিয়ে দেখে। তার মগজে যে নতুন লালসার জন্ম নিয়েছে তাকে এবার মেটাতে হবেই। এ ক্ষুধা এবার না মিটলে পাশার মনে হচ্ছে সে বাঁচবে না। কিছুক্ষণ পর সমরবাবু নাস্তা নিয়ে পাশার সাথে বসে। সমরবাবু পাশার সাথে সোফায় বসে গল্প করছে। কিন্তু পাশা অন্যমনস্ক। তার আর কোন কিছুতে মন নেই। পাশার মগজের ক্ষুধা মেটাতে এখন শুধু সিয়ারাকেই চায়। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? সিয়ারা ডিটেক্টিভ সমরবাবুর স্ত্রী। ডিটেক্টিভ সমরবাবু শুধু একজন ভালো গোয়েন্দা নন, তিনি পাশার বন্ধুও বটে। তাছাড়া সিয়ারা কোন চাকরি করে না। বিশাল বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকে। সিয়ারাকে হত্যা করা একেবারে অসম্ভব।

অনেকক্ষণ সমরবাবুর সাথে গল্প করে পাশা সবার সাথে রাতের খাবার খায়। এরপর আরও কিছুক্ষণ গল্প করে পাশা ও তিন্নী তাদের বাড়িতে চলে যায়। পাশা ঘুমাতে যায়। কিন্তু তার ঘুম আসছে না। অজানা সে ক্ষুধা পাশাকে আজ ঘুমাতে দিচ্ছে না। পাশার হঠাৎ লিলিয়ানার কথা মনে পড়ে। লিলিয়ানা পাশাকে কথা দিয়েছে, সে পাশাকে তার পছন্দের একজনকে খুন করতে সহায়তা করবে। লিলিয়ানা একজন বড় মাপের সিরিয়াল কিলার। সে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ জনকে হত্যা করে গুম করেছে। লিলিয়ানা দেখতে সেলিনার মত। কিন্তু তাকে হাতে পেয়েও পাশা হত্যা করেনি কারণ সে পাশার মতই একজন। লিলিয়ানা ভার্জিনিয়ায় থাকে।

সে পাশাকে প্রমিজ করে, সে এক মাসের মধ্যে নিউইয়র্কে আসবে এবং পাশাকে সেলিনার মত একজন নারীকে হত্যা করতে সহায়তা করবে। ভাবতে ভাবতে পাশার ঘুম চলে আসে।

পরের দিন সকালে পাশা তার নিয়মিত ডেলিভারি সম্পন্ন করে। নাইট শিফটে ম্যানহাটনে ক্যাব চালায়। এভাবে কয়েক সপ্তাহ চলে যায়। ভার্জিনিয়া থেকে আসার পর প্রায় এক মাসের বেশি হয়ে গেল। কিন্তু লিলিয়ানার কোন দেখা নেই। পাশা লিলিয়ানাকে তার ডেলিভারি ট্রাকের রাত্রে পার্কিং করার স্থানটির ঠিকানা দেয় এবং তাকে তার ট্রাকের একটি অতিরিক্ত চাবিও দেয়। পাশা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তার ডেলিভারি ট্রাকটি দেখতে যায়। কিন্তু লিলিয়ানার কোন দেখা নেই। পাশা লিলিয়ানাকে তার ডেলিভারি ট্রাকের নম্বর ভুল করে বলেনি। সে জন্য সে একটু চিন্তিত। কিন্তু পাশা তাকে চাবি দিয়েছে, তাতে লিলিয়ানার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া ওই এলাকায় শুধু পাশার ডেলিভারি ট্রাকটি পার্ক করা থাকে। যদিও মাঝে মাঝে অন্য ট্রাকও সেখানে দেখা যায়। কিন্তু লিলিয়ানার পাশার ট্রাকটি চিনতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

এভাবে প্রায় দুই মাস হয়ে গেল পাশা ভার্জিনিয়া থেকে এসেছে। কিন্তু লিলিয়ানার কোন দেখা নেই। অন্যদিকে পাশার মগজের ভেতর লালসার ক্ষুধাটি প্রতিক্ষণে ভোগাচ্ছে। সে ক্ষুধা শুধু সিয়ারাকে দিয়েই নিবারণ সম্ভব। সিয়ারা একেবারেই তার বাড়ি থেকে বের হয় না। তাছাড়া তার স্বামী একজন নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের ডিটেক্টিভ। পাশা জানে, সিয়ারাকে খুন করতে হলে একমাত্র লিলিয়ানাই পারবে। আজ পাশা সারাদিন মাংসের ডেলিভারি দিয়ে তার পার্কিংয়ের জায়গায় যায়। পাশা দূর থেকে দেখে কেউ একজন রাস্তার পাশে একটি কাঠের টুকরার উপরে বসে আছে। একটু কাছে গেলে পাশা দেখতে পায় লিলিয়ানা বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। পাশা লিলিয়ানাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা।

পাশা তার ট্রাকটি পার্ক করে লিলিয়ানার সামনে আসে। ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ? আই ওয়াজ ওরিড ইউ উডন্ট শো আপ।’ পাশা লিলিয়ানাকে বলল। লিলিয়ানার কাছ থেকে জানতে পারে, সে তার শেষ খুনটি করতে গিয়ে প্রায় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায়। ভার্জেনিয়া পুলিশ এখন তাকে খুঁজছে। পাশা লিলিয়ানাকে একটি বাঙালি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যায়। রেস্তোরাঁ বসে খেতে খেতে পাশা লিলিয়ানাকে সিয়ারা সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলে। লিলিয়ানা পাশাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে মানা করে। লিলিয়ানা বলল, ‘ডোন্ট ইউ ওরি। আই গট ইউ।’

রেস্তোরাঁয় খাবার শেষে পাশা লিলিয়ানাকে একটি হোটেলে থাকার জন্য নিয়ে যায়। হোটেলটি সিয়ারার বাড়ির কাছেই। লিলিয়ানার অনুরোধেই পাশা তাকে সিয়ারার বাড়ির কাছে হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে চেক-ইন করার পর লিলিয়ানা পাশাকে বলে, ‘আই উইল ব্রিং সিয়ারা টু ইউ ইন ফাইভ ডেজ।’ লিলিয়ানা সিয়ারাকে অপহরণ করে পাশার কাছে পাঁচ দিনের মধ্যে নিয়ে আসবে বলে ঘোষণা দেয়। পাশা এ কথা শুনে অনেক আনন্দিত হয়। লিলিয়ানা পাশাকে আরও জানায় যে, পাঁচ দিনের মধ্যে সে সিয়ারাকে অপহরণ করে তার ডেলিভারি ট্রাকে রাখবে। এরপর সে পাশার ঋণমুক্ত হয়ে নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে যাবে।

পরের দিন লিলিয়ানা তার ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার নিয়ে বের হয়। সে সিয়ারার বাড়ির আশেপাশে হুইল চেয়ারে বসে ঘুরে ঘুরে দেখে। এলাকাটি অনেক শান্ত, কোথাও কোন কোলাহল নেই। মাঝে মাঝে দু’একটি গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে যায়। পাশাপাশি অনেকগুলো বাড়ি আছে। বাইরে তেমন কাউকে হাঁটতে দেখা যায় না। লিলিয়ানা সিয়ারাদের বাড়ির সামনে দিয়ে কয়েকবার হুইল চেয়ার দিয়ে গেছে। সিয়ারাদের বাড়ির সামনে একটি ফুলের বাগান আছে। মাঝে মাঝে সে বাগানে ছোট ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়। কিন্তু অনেকক্ষণ ঘুরেও সে সিয়ারাকে দেখতে পায়নি। বেশিক্ষণ না থেকে লিলিয়ানা আজ চলে যায়। কারণ বেশিক্ষণ থাকলে মানুষ সন্দেহ করতে পারে। যদিও সাধারণত মানুষ হুইল চেয়ারে বসা একজনকে ভয় বা তেমন লক্ষ্য করে না। তারপরও আর একটু থাকলে ওই এলাকার মানুষগুলো আস্তে আস্তে লিলিয়ানাকে লক্ষ্য করতে পারত। তাই লিলিয়ানা আজকের মত সেখান থেকে চলে যায়।

লিলিয়ানা পরের দিন সিয়ারাদের বাড়ির সামনে তার হুইল চেয়ারে বসে আবার আসে। অনেকক্ষণ লিলিয়ানা তার সিয়ারাদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরে। কিন্তু সে সিয়ারাকে একদম দেখে না। ব্যর্থ হয়ে লিলিয়ানা আবার ফিরে যেতে উদ্যত হয়। ফুটপাত দিয়ে লিলিয়ানা হুইল চেয়ারে বসে সিয়ারাদের বাড়ি পেরিয়ে অনেক দূর চলে যায়। হঠাৎ লিলিয়ানা একজন ভদ্রমহিলাকে তার দিকে আসতে দেখে। ভদ্রমহিলার হাতে অনেকগুলো ব্যাগ আছে। মনে হচ্ছে মহিলাটি এইমাত্র গ্রোসারি বাজার থেকে কিছু কিনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। মহিলাটি লিলিয়ানার যত কাছে আসে, লিলিয়ানার কাছে তত পরিচিত মনে হচ্ছে। লিলিয়ানার আরও কাছে এলে সে সিয়ারাকে মুহূর্তের মধ্যে চিনতে পারে। সিয়ারা দেখতে ঠিক লিলিয়ানার মত। তাই সিয়ারাকে দেখতে লিলিয়ানার বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। ‘হেই! ডু আই নো ইউ? ইউ লুক লাইক মাই সিস্টার।’ লিলিয়ানা সিয়ারাকে বলল। সিয়ারা প্রায় লিলিয়ানাকে অতিক্রম করে চলে গেছে। তার হাতে বাজারভর্তি কিছু ব্যাগ। ‘ও হেই, সরি। ইয়া, উই ডু লুক সিমিলার। হাউ আর ইউ?’ সিয়ারা হঠাৎ থেমে লিলিয়ানাকে বলল।

সিয়ারা তার কথার উত্তর দেওয়ার পর লিলিয়ানা বুঝতে পারে, সিয়ারাকে অপহরণ করা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। কারণ কথায় কথা বাড়বে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সিয়ারাকে বলে যে, তার ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারটি এখন কাজ করছে না। যদি সে দয়াকরে তার হুইল চেয়ারটি ঠেলে তার গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায়। সিয়ারা লিলিয়ানার কথায় সহজেই রাজী হয়ে যায়। সিয়ারা তার হাতের ব্যাগগুলো লিলিয়ানার হুইল চেয়ারের পেছনে রাখে এবং হুইল চেয়ারটি ঠেলতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর লিলিয়ানা তার হাতে কয়েকটি স্ট্রবেরি নেয় এবং আগেই ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত একটি স্ট্রবেরি হাতের মাঝখানে রাখে। ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত স্ট্রবেরির বুদ্ধিটি সে পাশার কাছ থেকে শিখেছে। এ কৌশল অবলম্বন করে পাশা তাকে ভার্জেনিয়ায় কুপোকাত করেছে। তাই এ কৌশল ভুলে যাওয়ার মত নয়। লিলিয়ানা আস্তে আস্তে তার স্ট্রবেরি খাচ্ছে এবং সিয়ারা পেছন দিয়ে তার হুইল চেয়ার ঠেলে যাচ্ছে। ‘দিজ স্ট্রবেরিজ আর রিয়েলি গুড। উড ইউ লাইক টু ট্রাই ওয়ান?’ লিলিয়ানা সিয়ারাকে বলল। সিয়ারা স্ট্রবেরি একদম পছন্দ করে না। কিন্তু সে লিলিয়ানার কথায় খেতে রাজী হয়ে যায়। কারণ লিলিয়ানা একজন মেয়ে মানুষ এবং তার উপর সে একজন প্রতিবন্ধী। লিলিয়ানা যে প্রতিবন্ধীর ভান ধরেছে, সেটা সিয়ারার জানা নেই। তাই সিয়ারা তার মনে আঘাত দেবে না ভেবে বলল, ‘সিওর, জাস্ট ওয়ান প্লিজ।’ এরপর লিলিয়ানা সিয়ারাকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত স্ট্রবেরিটি খেতে দেয়।

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।