টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ০৯

ড. রাজুব ভৌমিক
ড. রাজুব ভৌমিক ড. রাজুব ভৌমিক , কবি ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৯

পাশার দেওয়া ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত ওই স্ট্রবেরি ফলটি লিলিয়ানা তাড়াতাড়ি না জেনে খেয়ে ফেলে। তখন পাশা লিলিয়ানার সাথে নানা বিষয়ে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর পাশা লিলিয়ানাকে বলল, ‘লেট মি হেল্প ইউ উইথ ইউর হুইল চেয়ার।’ বলে পাশা লিলিয়ানার হুইল চেয়ারের পেছনে আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। স্ট্রবেরিটি খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে লিলিয়ানা অচেতন হয়ে যায়। পাশা চারিদিক একটু তাকিয়ে দেখে। পাশা কাউকে দেখেনি। হুইল চেয়ারে বসা অচেতন লিলিয়ানাকে পাশা আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে চলে। ধীরে ধীরে পাশা লিলিয়ানাকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর রাস্তায় চলে আসে। পাশা রাস্তার আশেপাশে আর একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখে। পাশা কাউকে দেখতে না পেয়ে লিলিয়ানার হুইল চেয়ারটি রাস্তা থেকে নামিয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢোকায়। লিলিয়ানার হুইল চেয়ার ধাক্কা দিতে দিতে পাশা লিলিয়ানাকে নিয়ে জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে যায়।

জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করার পর পাশা লিলিয়ানাকে তার হুইল চেয়ার থেকে নামিয়ে মাটির উপরে ফেলে রাখে। লিলিয়ানার হাত-পা এখনো বাঁধা হয়নি। পাশা তার ব্যাগ থেকে কিছু রশি বের করে। এরপর রশি দিয়ে লিলিয়ানাকে একটি গাছের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখে। পাশা তার ব্যাগেতে কাপড়ের টুকরা খোঁজে কিন্তু কোন অতিরিক্ত কাপড়ের টুকরা খুঁজে পায়নি। আজ তার প্রস্তুতি ভালো ছিল না বলে পাশার নিজের প্রতি ভীষণ ক্ষোভ হয়। পাশা চিন্তা করে লিলিয়ানার মুখের ভেতর কী দেওয়া যায়? তা না হলে লিলিয়ানার যখন জ্ঞান ফিরে আসবে; তখন তাকে গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখলে চিৎকার শুরু করবে। তাছাড়া লিলিয়ানাকে হত্যা করার পর যে রক্ত বের হবে; সে রক্ত মুছতে কাপড়ের অনেক দরকার হবে। পাশা বিরক্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়ে।

তখন পাশার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। ‘লিলিয়ানার শরীরের কাপড়গুলো ব্যবহার করা যায়।’ পাশা ভাবল। এরপর পাশা একে একে লিলিয়ানার শরীরের সব কাপড় খুলে নেয়। কিছু কাপড় পাশার কাছে সযত্নে রাখে। লিলিয়ানার লাল রঙের ওড়নার মত কাপড়ের একখণ্ড পাশা ব্যাগে ভরে রাখে। পাশা এটি তিন্নীর জন্য রেখেছে। লিলিয়ানার মুখে তার শরীর থেকে নেওয়া কিছু কাপড়ের একটি টুকরো পুরে দেয়। লিলিয়ানা এখনো অচেতন। পাশা তার ব্যাগের ভেতর থেকে লম্বা ধারালো ছুরিটা বের করে নেয়। পাশা জঙ্গলে ভেতর মাটিতে পড়ে থাকা শুষ্ক পাতা সংগ্রহ করতে শুরু করে। জঙ্গলের ভেতর মাটির উপরে অনেক শুষ্ক পাতা পড়ে আছে। মুহূর্তের মধ্যে পাশা অনেকগুলো পাতা কুড়িয়ে নেয়। পাতাগুলো দিয়ে পাশা লিলিয়ানার চারিদিকে মাটির উপরে বিছানার মতো করে, যাতে লিলিয়ানার শরীর থেকে পড়া রক্ত মাটিতে না লাগে। পাশার মনে আছে, এরিকাকে খুন করার পর মাটিতে পড়া রক্তগুলো পরিষ্কার করতে তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাই পাশা এবার সে ভুল করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

লিলিয়ানার আশেপাশে গাছের পাতার বিছানা করার পর পাশা লিলিয়ানার দিকে একবার তাকায়। সে এমনভাবে তাকায়, যেন এক সিংহ তার হরিণ শিকারকে প্রথম দেখে কিংবা এক টিনেজার বালক তার ক্রাশকে প্রথম দেখার মিশ্রিত অনুভূতি। এ তাকানোতে আছে এক অদ্ভুত ভালোবাসা, আছে সীমাহীন লালসা। এ লালসায় আছে অনিয়ন্ত্রিত এক শক্তি, যেটা পাশাকে এখন দিনদিন নিয়ন্ত্রণ করছে। এ লালসায় আছে এমন ক্ষুধা, যে ক্ষুধা পৃথিবীর অন্য কিছু দিয়ে মেটে না। পাশা তার হাতে ধারালো ছুরি নিয়ে লিলিয়ানার জাগ্রত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। পাশা অচেতন অবস্থায় খুন করা পছন্দ করে না। এতে তার তৃপ্তি যেন মেটে না। তার চোখের ক্ষুধা যায় না। যেমন কুরবানির ঈদে পশু জবাই না দেখলে অনেকের কুরবানির মাংস খেয়ে তৃপ্তি হয় না। তাই পাশা লিলিয়ানার জাগ্রত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

লিলিয়ানা উলঙ্গ অবস্থায় গাছের সামনে বাঁধা। পাশা মাটিতে বসে লিলিয়ানার জাগ্রত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জঙ্গলের চারিদিকে কোন সাড়া-শব্দ নেই। মাঝে মাঝে দু’একটা পাখির যেন ব্যর্থ ডাক পাশার কানে এসে লাগছে। প্রকৃতি কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে। আজ পাশার কাণ্ড দেখবে বলে প্রকৃতির দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলছে। হঠাৎ পাশা একটি সাপ দেখতে পায়। সাপটি যে গাছে লিলিয়ানা বাঁধা আছে; সে গাছের উপরে একটি ডাল আঁকড়ে আছে। সাপটি আস্তে আস্তে লিলিয়ানার দিকে আসতে শুরু করে। বিলম্ব না করে পাশা তার ছুরিটি সাপের দিকে জোরে নিক্ষেপ করে। এতে সাপটি দুই টুকরা হয়ে যায়। ‘লিলিয়ানা শুধু আমার।’ পাশা বিড়বিড় করে বলে। এদিকে বিকেলের প্রায় পড়ন্ত। লিলিয়ানার এখনো অচেতন অবস্থা। পাশা লিলিয়ানার উলঙ্গ শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র বাসনা নেই। পাশার লালসা শুধু লিলিয়ানার কলিজা, ফুসফুস আর লিভার খাওয়া আর তার দুই চোখে মৃত্যুর পলায়ন দেখা। যেমন ছোটবেলায় বাবা পুকুর থেকে একটি বড় মাছ ধরে আনলে ছেলেটি তার মায়ের পাশে বসে মাছটির কর্তন অধীর আগ্রহ নিয়ে দেখে। মাছটি জীবন্ত অবস্থায় কাটার সময় যত লেজ লাফায়; বালকটি তত আনন্দিত বোধ করে। এতে কেমন জানি বালকটির এক অদৃশ্য ক্ষুধা মেটে। তারপর যত বড় মাছ হোক না কেন, বালকটির মাছের মাথা খাওয়ার জন্য থাকে অদৃশ্য এক লালসা। যে লালসা না মিটলে বালকটির খাবার টেবিলে কান্নার অন্ত থাকে না। তেমনি পাশার লিলিয়ানাকে জীবন্ত অবস্থায় তার দুই চোখ থেকে মৃত্যুর প্রস্থান দেখবে বলে অপেক্ষা করছে। আর লিলিয়ানাকে হত্যা শেষে তার কলিজা, ফুসফুস ও লিভার খাবে বলে মনে মনে খুব আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।

কিছুক্ষণ পর লিলিয়ানা আচমকা জাগ্রত হয়। লিলিয়ানা তার চোখ খুলে দেখতে পায়, সে একটি গাছের সাথে বাঁধা। তার সারা শরীরে বিন্দুমাত্র কোন কাপড় নেই। তার মুখের ভেতরে কাপড় ঢোকানো। লিলিয়ানা কোন কথা বলতে পারছে না। সে পাশার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। লিলিয়ানা দেখছে পাশা তার শরীরের কোন অংশের দিকে লক্ষ্য না করে শুধু তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পাশা এতক্ষণে খেয়াল করেনি যে, লিলিয়ানা তার চোখ খুলেছে। যদিও পাশা লক্ষ্য করছে লিলিয়ানা তার চোখ খুলেছে। কিন্তু লিলিয়ানা বিন্দুমাত্র আওয়াজ করার চেষ্টা করেনি। অথবা রশি থেকে নিজেকে মুক্ত করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি দেখে পাশা বিস্মিত। সে মনে মনে চিন্তা করে, লিলিয়ানার কি কোন মৃত্যুর ভয় নেই? পাশা বারবার লিলিয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর প্রত্যেকবার পাশা তাকে দেখে বিস্মিত হয়। লিলিয়ানার চোখে-মুখে কোন মৃত্যুর ভয় নেই। পাশার এতে কৌতূহল বাড়ে। সে ভাবল লিলিয়ানাকে জিজ্ঞেস করবে, কেন সে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনেও বিন্দুমাত্র ভয় করছে না।

পাশা লিলিয়ানার মুখে বাঁধা কাপড়টি খুলে নেয়। লিলিয়ানা কোন কথা বলছে না। তার চোখে-মুখে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ‘আর ইউ নট আফ্রেইড টু ডাই?’ পাশা লিলিয়ানাকে বলল। তা শুনে লিলিয়ানা একটি মুচকি হাসি দেয়। পাশা আরও অবাক হয়ে যায়। ‘হোয়াই আর ইউ স্মাইলিং?’ পাশা বলল। লিলিয়ানা এবার মুখ খুলল, ‘ইউ বিট মি আই সি। ইট ওয়াজ ইউ হু ইজ সাপোজ টু বি মাই ভিক্টিম বাট নাউ আই অ্যাম ইউর ভিক্টিম।’ কথা বলে পাশা জানতে পারল যে, লিলিয়ানাও তার মতো একজন। যার ক্ষুধাও সীমাহীন। লিলিয়ানা আসলে পঙ্গু নয়। সে পঙ্গুত্বের অভিনয় করে আসছে। এতে তার শিকার করা সহজ হয়। প্রথম দিন পাশাকে সোমাদের বাড়ির সামনে দেখার পর লিলিয়ানার পাশাকে পছন্দ হয়। তাকে হত্যা করবে বলে লিলিয়ানা তার হুইল চেয়ার নিয়ে বের হয়। লিলিয়ানার উদ্দেশ্য ছিল, সে পাশাকে তার বাড়ির ভেতরে কোন ছলনা করে নিয়ে আসবে। তারপর পাশাকে বাড়ির ভেতরে হত্যা করবে। লিলিয়ানা আর পাশার মধ্যে পার্থক্য হলো: পাশা তার মহিলা শিকারদের জীবন্ত অবস্থায় ধীরে ধীরে হত্যা করে এবং তাদের কলিজা, লিভার আর ফুসফুস খেতে পছন্দ করে। কিন্তু লিলিয়ানা তার পুরুষ শিকারের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে উপুর্যপরি আঘাত করে যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়। লিলিয়ানা তার পুরুষ শিকারদের উপরে যৌন নির্যাতনও করতে পছন্দ করে। লিলিয়ানা কিন্তু তার শিকারদের মাংস খায় না।

পাশা লিলিয়ানার কথা শুনে খুবই বিস্মিত হয়। ‘আই হ্যাভ কিলড ওভার ফিফটি ম্যান ইন লাস্ট ফাইভ ইয়ার্স।’ লিলিয়ানা বলল। লিলিয়ানা গত পাঁচ বছরে পঞ্চাশ জনেরও বেশি পুরুষকে এভাবে হত্যা করেছে। লিলিয়ানা সবসময় হুইল চেয়ারে পঙ্গুত্বের অভিনয় করে পুরুষদের তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর তাদের ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত মদ খেতে দেয়। তারপর লাঠি দিয়ে উপুর্যপরি তাদের শরীরের নানা স্থানে আঘাত করে হত্যা করে এবং যৌন নির্যাতন করে। মারা যাওয়ার পর লিলিয়ানা তার হত্যার শিকারদের বাড়ির নিচে পুতে রাখে। পাশার লিলিয়ানার কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না। সে ভাবছে লিলিয়ানা হয়তো তার হাত থেকে বাঁচার জন্য এখন হত্যার অভিনয় করছে। পাশা বলল, ‘আই ওয়ান্ট টু আস্ক ইউ টু কোয়েশ্চান্স।’ লিলিয়ানা বলল, ‘ওকে, গো হেড অ্যান্ড আস্ক মি।’ পাশা তখন বলল, ‘ওয়ান, হোয়াই ডু ইউ সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজ ইওর ভিক্টিম, অ্যান্ড টু, ডু ইউ হ্যাভ অ্যানি প্রুফ দ্যাট ইউ কিলড অল দিজ পিপল?’

লিলিয়ানা সব প্রশ্নের স্বাভাবিক উত্তর দেয়। পাশা তার কাছ থেকে জানতে পারে যে, সে পুরুষের ওপর অমানসিক যৌন নির্যাতন করে প্রচুর আনন্দ পায়। আর প্রমাণ হিসেবে সে পাশাকে বলে তার বাড়ি যাওয়ার জন্য। তার ঘরে প্রবেশ করে বেজমেন্ট দেখার জন্য পাশাকে বলছে। লিলিয়ানার বেজমেন্টে সব পুরুষের মৃত চোখ ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে বলে পাশাকে জানায়। পাশা এর সত্যতা যাচাইের জন্য লিলিয়ানার বাড়ি যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সে লিলিয়ানাকে পুনরায় ভালো করে বেঁধে নেয়। তারপর লিলিয়ানার বাড়ির উদ্দেশে হাঁটতে থাকে। লিলিয়ানার বাড়ি ওই জঙ্গল থেক খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটে বড়জোর দশ মিনিটের মতো লাগে। পাশা লিলিয়ানার বাড়িতে কিছুক্ষণ পরে পৌঁছে যায়। লিলিয়ানার ঘরে সে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। পাশা দেখতে পায় লিলিয়ানার ঘরের রুমগুলো বেশ সুসজ্জিত। পাশা লিলিয়ানার কথামতো তার বেজমেন্টে প্রবেশ করে। বেজমেন্টে ঢুকতেই মানুষের শক্তিশালী পঁচা গন্ধে পাশার প্রায় যায়যায় অবস্থা। বেজমেন্টে পাশা অনেকগুলো ফ্রিজার দেখতে পায়। পাশা একে একে সব ফ্রিজার খুলে দেখে।

ফ্রিজারগুলো খুলে পাশা দেখতে পায় অনেকগুলো বোতল। প্রত্যেকটি বোতলের ভেতর তরল পদার্থসহ দুটি মানুষের চোখ আছে। বেজমেন্টে পাশা সব ফ্রিজার খুলে দেখে। পাশা সর্বমোট একচল্লিশটি বোতল ফ্রিজারের ভেতর গুনে দেখে। প্রত্যেক বোতলে দুটি করে মানুষের চোখ আছে। পাশা বুঝতে পারে লিলিয়ানা এখন পর্যন্ত একচল্লিশ জনকে হত্যা করেছে। পাশা বেজমেন্টের আশপাশে ভালো করে দেখছে। বেজমেন্টের একটি রুমে প্রবেশ করে পাশা একটা বিকৃত লাশ দেখতে পায়। এ রুমের দেয়াল রক্তে পরিপূর্ণ। লাশটিকে দেখে পাশা বুঝতে পারে যে, লাশটি এখনো অনেক তাজা। পাশার মনে হচ্ছে এ ব্যক্তিকে লিলিয়ানা আজ সকালে হয়তো হত্যা করেছে। লাশটি এখনো প্রক্রিয়া করতে লিলিয়ানা সময় পায়নি। লাশটির সারা শরীর লাঠির আঘাতে থেতলে গেছে। লাশটি চেনা একদম অসম্ভব। লাশের পাশে একটি হাতে বানানো শক্ত লাঠি ও একটি হাতুড়ি দেখতে পায়। পাশা বুঝল যে, লিলিয়ানা প্রথমে তার শিকারের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে। তারপর লাঠি দিয়ে সারা শরীরে আঘাত করে থেতলে দেয়। আবার লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুরুষের যৌনাঙ্গও থেতলে দেয়। স্মৃতি বা উপহার হিসেবে লিলিয়ানা তার শিকারের দু’চোখ খুলে সযত্নে ফ্রিজারে রাখে। যাতে সে ভবিষ্যতে চোখগুলো দেখে স্মৃতির জোয়ারে ভেসে যায়।

পাশা বুঝল যে, সে যখন লিলিয়ানার সাথে কথা বলেছিল তাকে হত্যা করার উদ্দেশে; তখন আসলে লিলিয়ানার উদ্দেশ্য ছিল পাশাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার। লিলিয়ানা কখনো বুঝতে পারেনি যে, পাশার স্ট্রবেরিতে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত ছিল। লিলিয়ানা নিজের খেলায় নিজে পরাজিত হয়। পাশা লিলিয়ানার বাড়ি ত্যাগ করে জঙ্গলের দিকে এগোচ্ছে। যেতে যেতে সে ভাবছে লিলিয়ানাকে নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। লিলিয়ানাকে এখন পাশার খুন করার ইচ্ছে নেই। যার চোখ ভয়-ডরহীন তাকে খুন করে পাশা বিন্দুমাত্র মজা পাবে না। তাছাড়া লিলিয়ানা তো অনেকটা পাশারই মতো। তারা দু’জনেই কোন এক অদৃশ্য অনিয়ন্ত্রিত শক্তির কাছে পরাজিত। সে অদৃশ্য শক্তিকে সন্তুষ্ট করতে তারা এখন দায়বদ্ধ। দৈনন্দিন পেটের ক্ষুধা বা চোখের দর্শনের তৃপ্তি হলেও তাদের দু’জনকে এক অজানা ক্ষুধা ও লালসা সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায়। অন্যদিকে লিলিয়ানাকে ছেড়ে দিলেও কোন সমস্যা নেই। অন্য সাধারণ ভিক্টিমের মতো লিলিয়ানা পুলিশকে ফোন করে সব বলে দেবে না। কারণ পাশা লিলিয়ানার সব গোপন ঘটনা জেনে ফেলেছে। তাই লিলিয়ানাকে ছেড়ে দিলেও সমস্যা নেই।

কিন্তু পাশা অনেক পরিশ্রম করে লিলিয়ানাকে তৈরি করেছে হত্যা করার জন্য। কতই না পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। সব পরিশ্রম বৃথা যেতে দেবে না পাশা। তাই সে জঙ্গলে পৌঁছে লিলিয়ানাকে বলল, ‘আই হ্যাভ সিন এভরিথিং ইউ ডিড। ইটস এমেজিং হাউ ইউ কিলড ফোরটি টু পিপল অ্যান্ড ডিডং গেট কট। আই মাস্ট সে দ্যাট ইউ আর এ মাস্টার মাইন্ট বাট আই ডিফিটেড ইউ। সো, আই ক্যান লেট ইউ গো আন্ডার ওয়ান কন্ডিশন।’ পাশা লিলিয়ানাকে বলল, সে এক শর্তে লিলিয়ানাকে ছেড়ে দিতে পারে। ‘হোয়াট ইজ ইউর কন্ডিশন?’ লিলিয়ানা বলল। ‘আই ডিড এ লট অব ওয়ার্ক টু ক্যাপচার ইউ টুডে। আই ওয়ান্টেড টু কিল ইউ অ্যান্ড ইট ইওর ফ্লেশ। বাট আই ক্যান্ট ডু ইট নাউ বিকজ ইউ আর লাইক মি টু। সো, ইফ ইউ ক্যান প্রমিজ টু হেল্প মি কিল ওয়ান ওমেন দেন আই উইল লেট ইউ গো।’ পাশা লিলিয়ানাকে বলল, সে লিলিয়ানাকে এক শর্তে ছেড়ে দিতে পারে। আর শর্তটি হচ্ছে- লিলিয়ানাকে একদিন পাশার জন্য একজন মহিলাকে অপহরণ করে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আজকে তার জন্য পাশার অদৃশ্য লালসার তৃপ্তি মিটছে না।

লিলিয়ানা পাশার দেওয়া শর্তে সাথে সাথে রাজী হয়ে যায়। লিলিয়ানাকে পাশা বলল, নিউইয়র্ক শহরে সামনের মাসে যেন সে আসে পাশার সাথে দেখা করার জন্য। নিউইয়র্কে লিলিয়ানাকে কোথায় বা কখন দেখা করতে হবে, সেটা পাশা বিস্তারিত খুলে বলল। পাশার কাছে লিলিয়ানা এখন বড় ঋণী। তাই সে বলল, ‘পাশা, আই উইল বি দেয়ার। মাই প্রমিজ ইজ ট্রু। আই উইল হেল্প ইউ টু কিডন্যাপ এ ওমেন। আফটার দ্যাট ইউ অ্যান্ড আই আর ডান।’ পাশা ধীরে ধীরে লিলিয়ানার শরীরে বাঁধা রশি খুলতে শুরু করে। তখন লিলিয়ানা পাশাকে তার হত্যার অভিজ্ঞতা টেনে এনে পাশাকে কিভাবে আরো ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে, তার উপদেশ দেয়। লিলিয়ানা পাশাকে বলে, ‘আই ক্যান টেল ইউ আর নিউ। ইউ হ্যাভ এ লট টু লার্ন।’ পাশা লিলিয়ানার সব রশি খুলে দেয়। এরপর পাশা লিলিয়ানাকে তার সব কাপড় ফিরিয়ে দেয়। এরপর দু’জন জঙ্গলের মধ্যে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। দু’জনে তাদের হত্যার গল্প শেয়ার করে। লিলিয়ানা পাশাকে কিভাবে আরও দক্ষতার সাথে অপহরণ করতে হয়, সে উপদেশ দেয়। দু’জনে কিছুক্ষণ গল্প করে জঙ্গল থেকে চলে যায়।

চলবে...

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।