বৈশাখী স্মৃতি
হৈ চৈ হৈ হুল্লোড় সারাদিন,
খেলাধুলা ঘুরাফেরা বিনোদন প্রচুর।
আমাদের শৈশব কৈশোর ছিল
কত আনন্দের; উল্লাসে ভরপুর।
কালের ডানায় ভর করে
যদি ফিরে যাই,
অতীত সাগর তীরে
দুরন্ত শৈশব কৈশোরে;
বৈশাখী সোনালি স্মৃতিকণাগুলো
মনে পড়ে বারে বারে।
একটা অখণ্ড সবুজ-তামাটে
বিশাল চাদরে ঢাকা মাঠ;
নদীর পাড়ে
গোপাটের শেষ প্রান্তে,
বিশাল বট গাছ,
মম উন্নত শিরের মত
বীর বেশে দাঁড়িয়ে
যেন এক বিশাল প্রাকৃতিক ছাতা!
নীলাকাশের নিচে মাটিতে পোতা
পরম মমতায় ছায়া বিতরণে
মানবের তরে বৃক্ষের কত আকুলতা!
তারই চারিপাশে সাজ সাজ রব,
হাজার মানুষের কোলাহল
চুড়ি-ফিতা মণ্ডা মিঠাই
বাহারি পণ্য কেনার ঢল;
হরেক রকম খেলনা,
পসরা শত শত
পাতার বাঁশির পু-পু শব্দ
বাঁজতো অবিরত!
ঢাক, ঢোলের ঢুং ঢাং
ঢুলির তালমাতাল উদ্দাম নৃত্য
সকাল থেকে চলে সারা বেলা;
এই তো বাঙালির বর্ষসেরা উৎসব
মনের মেলা মিলন মেলা
সবার প্রিয় বৈশাখী মেলা!
আমের গাছে ঢিল ছোড়া,
দস্যি ছেলের দলের হয়ে জামের
মগডালে উঠে জামের রসে মুখ রাঙানো!
কাঁঠাল-কলা চুরির আসামি হয়ে
দাদিমার আদালতে
ভালো মানুষের ভং ধরা!
উজির ছোট চাচার রাজদণ্ড
কান ধরে উঠবস শতবার,
মেকি কান্নায় তাঁর মন গলানো
কত কঠিন যেন ঢেঁকি গেলার!
আর কোনদিন হবে না আবার!
মুক্তি পেয়েই কে শোনে কথা কার!
হৈ হৈ রৈ রৈ করে সারাটা দিন পার!
সবাই টো টো কোম্পানির ম্যানেজার!
আমরা নিজেই রাজা
ধারি না কো কারো ধার!
মনে বড় সাধ যদি ফিরে পেতাম
সেই হারানো দিনগুলো আবার!
বাবার বকুনি মায়ের আদুরে শাসন
বোনের ভালোবাসা যায় না ভোলা,
কত প্রিয় ছিল
আমাদের সেই সোনালি ছেলেবেলা!
আজও সামনে দেখি
মহানগরের ইট-কাঠ দালানের মেলা
মানসজগতে ভাসে
শৈশবের স্মৃতি সারাবেলা
চৈত্রের অলস দুপুরবেলা!
কী মধুর ছিল আমাদের ছেলেবেলা!
দুপুরের পরে পড়ন্ত বিকেল
তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে বার বার;
খোশমেজাজে ঘুর ঘুর করা
তাঁকে দেখানো আমার
বৈশাখী পোশাকের বাহার।
লাল শার্ট নীল প্যান্ট
কপালে ট্যাগসহ সানগ্লাস,
মনে মনে ভাবতাম আমিই এ প্লাস!
অন্যসব থার্ড ক্লাস!
ছেলেবেলায় যা ছিল বীরেশ,
সেইদিনের সেই সল্টুর বেশ
মনে পড়ে আজও
মোছা যায় না কো হাসির রেশ!
সাঝের পরে সব চুপচাপ,
আফসোস আহা, বৈশাখী মেলা শেষ!
সারা বছর ধরে প্রতীক্ষার প্রহর গুনি
মনে নিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনের রেশ!
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা।
এসইউ/এমকেএইচ