নাফ নদীর তীরে : ইতিহাসের রহস্য
নাফ নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের কক্সবাজার জেলার একটি নদী। নদীটিকে প্রথম অ্যাংলো-বার্মা যুদ্ধের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হয়। বহুল আলোচিত এই নাফ নদীর তীরের ইতিহাসকে কেন্দ্র রচিত হয়েছে আলী আহসানের উপন্যাস ‘নাফ নদীর তীরে’। বইটি এবার বইমেলা থেকে কিনেছিলাম। কভারের কাহিনি পড়ার পরই উপন্যাসটি আমাকে চুম্বকের মত টেনেছিল। কারণ বরাবরই আমি ইতিহাস পড়তে এবং জানতে পছন্দ করি।
উপন্যাসটি যেহেতু সম্রাট শাহজাহানের ছেলে মোগল সম্রাট শাহ সুজার ওপর লেখা। তাই আগ্রহের মাত্রাটা একটু বেশি ছিল। শাহ সুজার কথা ইতিহাসে খুব কমই বলা হয়েছে। আমার জানার ইচ্ছে ছিল, লেখক কিভাবে তার উপন্যাসে শাহ সুজাকে নিয়ে প্লট তৈরি করেছেন।
যুবরাজ শাহ সুজা আপন ভাইদের কাছ থেকে পালিয়ে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। তারপর আশ্রয় নেন জঙ্গলে ঘেরা রহস্যময় আরাকানের ম্রাউক-উ রাজ্যে। সঙ্গে নিয়ে আসেন হাজার পালঙ্কিভর্তি মূল্যবান ধন-সম্পদ। হীরা, চুন্নি, পান্না, সোনাসহ আরও এমন অনেক ধন-রত্ন।
যুবরাজের সম্পদ নাকি তার সুন্দরী মেয়ের প্রতি লোভ জাগলো আরাকানের রাজা থুডাম্বার? এর পরের ঘটনা নিয়ে ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে নানা গুজব। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শেষ করে ড. সরোজ তার মৃত্যুর আগে কিসের পাণ্ডুলিপি রেখে গেলেন? পাণ্ডুলিপির পাতায় পাতায় কিসের সূত্র আর ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন? কারা চুরি করেছে সেই পাণ্ডুলিপি?
রাফিন নামের দেবদূতের মতো ছেলেটা কি পাবে সেই পাণ্ডুলিপি? প্রফেসর, ড. সরোজ, হুসেইন আলী- এরা কারা? নাফ নদীর তীরে ঘুরতে এসে মিতা, সুমন কিভাবে এদের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন? বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাহের সাহেব কিভাবে জড়িত এদের সঙ্গে? কানা রাজার গুহায় কী আছে? সব ঘটনা ধীরে ধীরে জমে উঠছে নাফ নদীর তীরে। কী ঘটছে সেখানে? শাহ সুজার ফেলে যাওয়া ধন-রত্নের সন্ধান নাকি এটাকে ঘিরে অন্য কোনও নতুন ইতিহাস ঘটতে চলেছে নাফ নদীর তীরে? এসব প্রশ্নের উত্তর চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে। যা শিক্ষার্থীদের জন্যও বেশ উপকারে আসবে বলে আমার মনে হয়।
শুরু করার পর থেকে আমি এক নিঃশ্বাসেই পড়ে গিয়েছিলাম। লেখক অসাধারণভাবে প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই মোগল সাম্রাজ্যের ওপর বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। উপন্যাসটি লিখতে তিনি অনেক পড়াশোনা এবং সময় ব্যয় করেছেন; সেটা তার কাহিনি পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম।
তবে বইটির প্রিন্টে বেশকিছু ভুল রয়েছে। যেমন অনেক বানান, নামের বানান ভুল রয়েছে। তবে যারা খুব বেশি মনোযোগী পাঠক; তারা ছাড়া ভুলগুলো চোখে পড়ার কথা নয়। পুরো উপন্যাসটি পাঠককে ধরে রাখার প্রচণ্ড ক্ষমতা রাখে। লেখকের আরও বই আমি পড়তে চাই। যারা সাহিত্য এবং ইতিহাস নিয়ে উপন্যাস এবং ভিন্নধর্মী লেখা পড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য উপন্যাসটি ভীষণ সুখপাঠ্য হবে।
বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশনীর ২২ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বইটির যুক্তরাষ্ট্র পরিবেশক মুক্তধারা, জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক এবং যুক্তরাজ্য পরিবেশক সঙ্গীতা লিমিটেড। রকমারিতেও অর্ডার করতে পারবেন। আমি বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।
এসইউ/জেআইএম