আকিমুন রহমানের সাহিত্য: প্রেক্ষিত সমাজ-বাস্তবতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৫

বঙ্গ রাখাল

গল্প কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হলেও উপন্যাস তৈরি হয় বিশাল ক্যানভাসে। সমাজের বিশাল প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত হয় উপন্যাসের ভূমি। কালের বিবর্তনে বদলে গেছে গল্প বলার ধরন। বাঁক-বদলে পাল্টে গেছে গল্পের কাঠামো কিংবা বুননের স্টাইল। বর্তমানে উপন্যাস বলতে যা বুঝি, প্রথম দিকে তা এমন ছিল না। প্রতি মুহূর্তে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাহিত্যিকরা বদল ঘটিয়েছেন শরীর বা কাঠামোর। অনেকে নানা ঘটনা নিয়ে গল্প ফাঁদলেও গ্রামীণতা এসেছে অনেক পরে। সাতচল্লিশের পরে এসে আমাদের দেশজ ঐতিহ্য গল্প-উপন্যাসে এলেও তা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। এই স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষত-বিক্ষত স্বদেশের চিত্রও ফুটে উঠেছে অনেক কথাকারের সাহিত্যে। স্বাধীন দেশে যারা লেখালেখি করছেন; তাদের মধ্যে অন্যতম লেখক আকিমুন রহমান। তিনি তার লেখার ক্যানভাস বানিয়েছেন একেবারেই নিরেট গ্রামীণ জীবনকে। যে জীবন আমাদের মজ্জাগত। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে লেখকের আখ্যানের জনজীবনকে কল্পনায় বুনে যাওয়া বানোয়াট জীবন মনে হবে। কেননা তারা তো সেই গ্রামীণ জীবনটাকে দেখেননি। তারা পেয়েছেন আধুনিক-প্রযুক্তিময় জীবন। যে জীবন তাদের যন্ত্র বা মেশিন কিংবা স্মার্ট বানানোর নামে গল্পহীন করে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের পূর্বসুরীদের জীবনে অনেক গল্প আছে; আমাদের জীবনে বহুমাত্রিক গল্প ছিল বা আছে কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের জীবনে সেই গল্প নেই। সেইসব জীবনের কথাই যেন লেখক তার ‘রক্ত পুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। সেই চোখে দেখা দিনের জীবন্ত চিত্র লেখক তুলে ধরেছেন। যাতে অনায়াসে আমাদের চোখে দেখা কোনো গ্রামকে দেখতে পাই। ‘আমার দাদীর মাথায় এই বড়ো ভোমা জট। আমার দাদীর শাশুড়ী, আমার বড়ো মার মাথায়ও ছিলো দড়ি দড়ি অগুনতি জট, বুজি বলে আমি বংশের প্রথম জন—আমার মাথায় না এই জিনিস ছোকালেই চলে আসে! শুনে ভয়ে আমি খালি কিছুক্ষণ পরপর চুল আঁচড়াই। ...মেহমান এলে আব্বাকে বুজি কখনো বাজার করতে বলে না। শাদা ভাত রাঁধে, আর পালা মুরগী দিয়ে কাজ সারে। আমাদের পালা মুরগী অনেক। উঠোন ভরে তাই সব সময় থাকে মুরগীর বাচ্চার চুক চুক, মা মুরগীর কোক কোক, আধ মাঝারি মুরগীর কক কক।’ এ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়, এ তো আমাদের জীবনেই ঘটে যাওয়া গ্রামীণ দৃশ্য। এই মনে হওয়ার কারণেই লেখক সার্থক।

আকিমুন রহমানের গল্প-উপন্যাস মানেই অতীত-ঐতিহ্যমণ্ডিত গ্রামকে দেখতে পাই—ফিরে যাই বাল্যের দিনে। বাবার মুখে শুনেছি, নানিদের ওখানে গেলে বাবাকে নানিজান বাড়িতে পালা মুরগির মাংস এবং চাউলের রুটি না খেয়ে কোনোদিন আসতে দেননি। সেই জীবন্ত স্মৃতি আবার মনের খোড়লে জেগে উঠল এই উপন্যাস পড়তে পড়তে। সাহিত্য তো সেই জিনিস, যা হৃদয়ের সহিত এক ধরনের সেতুবন্ধন তৈরি করে। এ কথা শতভাগ সত্য আকিমুন রহমানের জন্য। তার লেখনি অমূল্য দলিল। বিশেষ করে এ সময়ের জন্য। কারণ আমাদের গ্রামীণ জীবন প্রায় অবসান হতে চলেছে। সেখানে স্থান করে নিয়েছে নগরায়ন। গ্রামীণ বিষয়গুলো দেখতে আজ জাদুঘরে যেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ড. আকিমুন রহমানের জন্ম ১৯৬০ সালে নারায়ণগঞ্জে। তিনি কথাসাহিত্যিক, গবেষক ও নারীবাদী লেখক। তার গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’, ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’, ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’, ‘সোনার খড়কুটো’, ‘বিবি থেকে বেগম’, ‘যখন ঘাসেরা আমার চেয়ে বড়’, ‘এইসব নিভৃত কুহক’, ‘জীবনের পুরোনো বৃত্তান্ত’, ‘নিরন্তর পুরুষ ভাবনা’, ‘পৌরাণিক পুরুষ’, ‘বাংলা সাহিত্যে বাস্তবতার দলিল (১৩১৮-১৩৫০ বঙ্গাব্দ)’, ‘সাক্ষী কেবল চৈত্রমাসের দিন আদিপর্ব’, ‘যখন ঘাসেরা আমার বড়’, ‘অচীন আলোকুমার ও নগণ্য মানবী’ প্রভৃতি। পিএইচডি করেছেন ড. হুমায়ুন আজাদের তত্ত্বাবধানে। গবেষণাপত্রটি ‘আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ (১৯২০-১৯৫০)’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে। লেখালেখির শুরু আশির দশকের অন্তিমে। তবে ১৯৯৬ সালে ‘বিবি থেকে বেগম’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি ব্যাপক আলোচিত হন।

ড. আকিমুন রহমান লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। আকিমুন রহমান সব সময় নিয়ম ভাঙতে চেয়েছেন। যে বেড়াজাল আমাদের সমাজে বিশেষ করে নারীদের জড়িয়ে রেখেছে অক্টোপাসের মতো। তাই তো সমাজে জন্ম হয় আকিমুন রহমানদের মতো প্রকৃত মানুষের। যারা সমাজের বঞ্চিত নারীদের নিয়ে ভাবেন; তাদের অধিকারের কথা বলেন। এই কথাসাহিত্যিক সত্যিকার অর্থেই একজন লড়াকু মানুষ। সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় বা ছুঁড়ে দেওয়া হয় মিথ্যার বাণ; তাদের বিরুদ্ধে আকিমুন রহমানের কলম ফলার মতো কাজ করে। তিনি তার সব লেখাতেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন। সমাজের এ অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে। এ প্রতিবাদের কারণে তিনি অনেক রোষানলের শিকার হয়েছেন। লেখক আকিমুন রহমানের বিরুদ্ধেও অনেকের কলম সোচ্চার হয়েছিল। কারণ এই প্রগতির অন্তরালের যে পুরুষ, তাদের আসল চেহারা তিনি উন্মোচন করেছেন।

আকিমুন রহমানের ‘বিবি থেকে বেগম’ প্রকাশের পর বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন। বইটিকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ৫৬ জন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। তারা লিখিতভাবে বলেছিলেন, বইটির প্রকাশ এখনই বন্ধ করে দেওয়া হোক। তাদের কেউ বললেন না যে, এই কারণে বইটি বাতিলযোগ্য, চিন্তাটি খারাপ বা ভুল। সবাই শুধু বললেন, এটা বন্ধ করে দেওয়া হোক। লেখককে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই দেওয়া হলো না। আসলে ‘বিবি থেকে বেগম’-এর বিষয় বা বক্তব্য কী ছিল? এর উপশিরোনামে আছে বাঙালি মুসলিম নারীর ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস। বাঙালি মুসলমান নারীর জন্য কেমন ছক তৈরি করেছিলেন? বিভিন্ন লেখক এবং সেটি সমাজে কতখানি প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে বিষয়গুলো বইটিতে ছিল। আকিমুন রহমান মনে করেন, পুরুষ হচ্ছে পরিপূরক। যে সিস্টেমটা চলছে, তার মধ্যে কিন্তু মস্ত বড় গলদ রয়ে গেছে। যে কারণে পুরুষও বিপন্ন। কিন্তু পুরুষ যেহেতু নানা জায়গায় সক্রিয় থাকে, সে অনেক সুবিধা পায়, মনে হয় তার অনেক ক্ষমতা। আসলে সেও নিয়ন্ত্রিত, সেও বিপন্ন, সেও বুঝতে পারছে না যে কেমন করে একটি সিস্টেম তার সুস্থ মানবিকতা কেড়ে নিয়ে তাকে একরকমের হিংস্র করে তুলেছে। নারী কিন্তু তার চেয়ে বেশি বিপন্ন। পুরো বিধি-বন্দোবস্তের কারণে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় আকিমুন রহমানের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’। এ উপন্যাসে লেখক নারীর অবস্থাকে বার বার বলার চেষ্টা করেছেন। একজন নারী মানেই যেন সংসারে নারীর জীবন বেছে নেবে—সাংসারিক সমস্ত কাজ-কর্মে সে আত্মনিয়োগ করবে। নারী ছাড়া সংসারের কাজ হবে না। তবু নারীকে শুনতে হবে হাজারো কথা। তবে নারী ছাড়া কি আমাদের চলা সম্ভব? না নারী ছাড়া আমরা চলতে পারি না। এ সমাজ নারীকে যত খারাপ বা অবহেলিত ভাবেই উপস্থাপন করুক—নারী ছাড়া পুরুষ চলতে পারে না। এ উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই যে, পারভীন আক্তার নিজের জীবনেও কত কষ্ট-যাতনা ভোগ করেন। কত কষ্ট করেন সংসারের সবার জন্য। তবুও সমাজের মানুষের কত গালমন্দ শুনতে হয়। তিনি সমাজে চলছেন কিন্তু প্রতি পদক্ষেপে তাকে পা পিছলে পড়তে হয়। তিনি থেমে যান না আবার মাথা তুলে সামনের দিকে চলেন। পারভীন যখন বলে, ‘বৈধ পুরুষের নিচে যাওয়া ধারাচার্য হয়েও চিরকালের জন্য না হয়ে গেল যার—সে আমি।’ এভাবেই সমাজের জীবন্ত এবং অতীব বাস্তব কথা তার লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

আকিমুন রহমানের উপন্যাস পড়তে গিয়ে একটি কথাই মনে হয়, নারীকে তো আমরা বলি আজ মুক্তি পেয়েছে—কিন্তু নারী কি আসলে মুক্তি পেয়েছে? আসলেই কি আমরা নারীকে মুক্তি বা স্বাধীনতা দিতে পেরেছি? না, আমরা সত্যিকার অর্থে নারীকে মুক্তি দিতে পারিনি। তাকে সংসারের বন্ধন, নারী-পুরুষের সম্পর্ক কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বন্ধনও ঠিক রেখে সব কাজ করতে হয়। তবুও নারী নামের প্রাণীকে আমরা অবহেলার চোখে দেখি। এই নারীই আবার অন্যের অন্তরের দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করতে পারেন সূক্ষ্মভাবে, যা পুরুষের পক্ষে সম্ভব না। এ যেন লেখক আকিমুন রহমান নিজের যাতনা বা উপলব্ধির কথা পারভীনের ভাষ্যে আমাদের শোনাচ্ছেন। পারভীন তার প্রথম জীবনে আকস্মিকভাবে বাবা-মাকে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হতে দেখেছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ছোট ভাই শাহ আলমের কাছে শরীরবৃত্তীয় অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। বোনদের বাঁচাতে সংসারের হাল ধরেছেন। যেখানে নিজের জীবনের কথা ভাবেননি।

বিজ্ঞাপন

নারীকে আমরা ভোগ্যপণ্য বলেই মনে করি। নারী যেন শরীরসর্বস্ব প্রাণী। যে কারণে পারভীনদের বলতে হয়, চল্লিশ হলে মেয়েলোকের শরীর থাকে না। সব ঢিলা সব কুঁচকানো। সব ঢলে পড়া-সব ছাই-সব। এ মানসিকতা আমরা নারীদের মধ্যে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছি। সুলতান আলীরাও পারভীনদের মতো নারীদের সাথে ভালোবাসার ছলনা করে শরীর শরীর খেলায় মেতে উঠতে পারে। কিন্তু এই নারীই যখন সুলতানদের ছলনার কথা জানতে পারে; তখন প্রতিবাদ করে বা মুখে ছুঁড়ে দেয় জুতা। আর তখনই সব খারাপের কারণ নারী। তারাই সমাজের সবচেয়ে খারাপ প্রাণী। যত কিছু হোক না কেন প্রতিবাদ করা চলবে না। এসব কথাই আকিমুন রহমান তার ছোটগল্প বা উপন্যাসে বার বার বলার চেষ্টা করেছেন। তিনি গ্রামীণ নারী জীবনের অকাট্য দলিল হিসেবে এসব নারী চরিত্রের অবয়ব দাঁড় করান। শুধু তাই নয়, নারী চরিত্রের সাথে সামাজিক লোকাচার, কুসংস্কার, বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুভূতি যে কতটা সম্পৃক্ত তার বহিঃপ্রকাশও ঘটান তার সাহিত্যে। সমাজকে যেন আকিমুন রহমানের গল্প-উপন্যাসে চাক্ষুষ পাই। এ যেন লেখকের অন্য রকম পাওয়া—এক অন্য ধরনের ক্ষমতা। এ যেন দৃষ্টিভঙ্গির পালাবদল। যার জন্য শিল্পীর স্বাধীনবোধ যেন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই গভীর বোধ কিংবা দায় ও দরদ থেকে আকিমুন রহমান লেখেন। তিনি হাজারও প্রশ্নবোধের দায় মাথায় নিয়ে সাহিত্যচর্চা করেন। নিছক সাহিত্যের জন্য সাহিত্যচর্চা করেন না, যার প্রমাণ তার সাহিত্য।

‘আকিমুন রহমানের সাহিত্যে মর্মজ্বালা’ প্রবন্ধে শিবলী মোকতাদির বলেছেন, ‘নারী যদি পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হয়, পুরুষও নারীর অর্ধাঙ্গ। মেয়েদের কোমল অনুভূতি নিয়ে খেলতে গিয়ে আমরা অনেক সময় তাদের বার্বি ডলের ভূমিকায় রেখে দেই। ভাবি এই বুঝি তার ভালোবাসা উড়ে গেলো। প্রতিটি নারীই তার প্রিয়তম পুরুষকে অবশ্যই মনের মতো করে পেতে চায়, কিন্তু তা কখনোই মাথা নত করে নয়! পুরুষের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে নয়। দেখেও দেখে না যে পুরুষ, তার উদ্দেশে নারীর অবিরাম সংকেত, সন্দেহ, প্রতিবাদ চলতেই থাকে। তখন আর কিছু নয় শুধু তার ভাষাটা বদলায়। একুশ শতকে পা বাড়ানো মেধাবী, সৃজনশীল, সংবেদনশীল নারী রুহী, রুবি কেন শফিক-রফিকের উকিলের হুমকিতে কোর্ট-প্রাঙ্গণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসবে? যেখানে আশৈশব এই রুহীরা লড়াই করে এসেছে! যে মেয়েরা ভাষা, বয়স, ধর্ম ও শ্রেণির ব্যবধান সত্ত্বেও এক ভাষায় কথা বলে ওঠেন। প্রতিবাদে একই উপলব্ধির উন্মোচন ঘটান। সেই যন্ত্রণা থেকে উৎসারিত রুহীদের আকিমুন রহমান কেন যন্ত্রণা সাথে লজ্জার আঁচে ভাজলেন? এ এক বিরাট বিয়োগ চিহ্নের মতো মনে হলো আমার কাছে। হালহীন নাবিকের মতো তার এই অসহায় আত্মসমর্পণ অবশেষে প্রতিফলিত হল ব্যর্থতায়, বিদ্বেষে, বঞ্চনা ও অবিচারের দ্বন্দ্বে জর্জরিত সেই পুরুষশাসিত সাজানো সমাজের মধ্যে। আর এখানেই কাহিনির ঝুলে পড়া, এখানেই তার ভরাডুবি।’ (চিন্তাসূত্র, ১৮ মে ২০২০)

আকিমুন রহমান অতি সহজ-সরল ভাষায় গল্পের অবয়ব ছড়িয়ে দেন। যা বুঝতে কোনো পাঠকের বেগ পেতে হয় না। অতি সহজেই পাঠক তা অনুধাবন করতে পারেন। ঢুকে যেতে পারেন গল্পের ভেতরে। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী কথাসাহিত্যের একটা শক্তিশালী ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি। যে কারণে পাঠককে চিনিয়ে দিতে হয় না কথাসাহিত্যিক আকিমুন রহমানের গল্প বলার ঢং। তবে এ কথাও বলে রাখা ভালো, অনেকেই এই স্পষ্টভাবে সমাজের ক্ষত তুলে আনা বা ভোগবাদী সমাজের নারীর পক্ষে কথা বা তার ক্ষতের কথা বলা পছন্দ করেন না বলেই লেখক আকিমুন রহমানের সাহিত্য নিয়ে কুৎসা রটান এবং প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তবুও তাদের কথায় কান না দিয়ে লেখক নিজস্ব একটা ভাষার স্টাইল তৈরি করতে পেরেছেন। আজ তো মানুষ শহরের নিয়ন বাতি আর বাবুদের গল্প বলতেই ব্যাকুল। সেখানে গ্রামের কাছে ফিরে গ্রামের চালচুলাহীন, ছন্নছাড়া জীবনের গল্প বলা এক ধরনের বাতুলতা ছাড়া আর কী বলা যায়। আসলে এই বাতুলতার জীবনই তো আকিমুন রহমান বেছে নিয়েছেন এবং সারাজীবন ধরে বলে যেতে চান। বলতে চান সেইসব মানুষের কথা, যাদের নিয়ে কেউ কথা বলেন না। এই বোধ-ই যেন তাকে আজ লেখকের আসনে আসীন করেছে। ইচ্ছে করলেও তো কেউ প্রকৃত প্রেমিক কিংবা সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে পারেন না। প্রেমিক হওয়ার জন্য তো সত্যিকার মানুষ হওয়া প্রয়োজন। এই মানুষ হতে পেরেছেন বলেই তো তিনি প্রকৃত মানুষের গল্প বুনে যান। আমরা সেই গল্পের পাঠক হিসেবে দগ্ধ হই—প্রতিক্ষণে-প্রতি মুহূর্তে।

বিজ্ঞাপন

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।