মায়ের হাত এবং অন্যান্য কবিতা

মায়ের হাত
খিরাই কাটতে গিয়ে কেটে গেল হাত
ক্ষত স্থান খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ল—
মায়ের কথা!
আব্বার ঘরে না হলেও
পঞ্চাশ বছরের সংসার তার
আঠারো হাজার দিন
আমার ধারণা
মায়ের দশ আঙুলে
অন্তত পঞ্চাশ হাজার কাটার চিহ্ন আছে।
***
মেসের খালা
আপনার কিংবা আমার
বা ধরেন আমাদের মেসে যারা রান্না করে
টুকটাক আরও কিছু করে যারা
তাদের কখনোই ডাকি না— মামি, চাচি বা আন্টি।
সমস্ত অভিধানে তাদের ডাকনাম কেবল— খালা!
খালারা রান্না করে ঝটপট, কম সময়
এত তড়িঘড়ি যেন এই বুঝি কেয়ামত!
আমরা তিনবেলা সব গিলে ফেলি প্রবল অনীহায়
খেতে খেতে চোখে-মুখে দারুণ বিরক্তিতে বলি
এইসব বালছাল খাওয়া যায় কতদিন—
আহ মা, তোমার রান্না মনে পড়ে খালি!
তবুও এভাবে এভাবে গড়িয়ে যায় মাস
বাড়বাড়ন্ত বসন্ত, শীত-বর্ষা-গ্রীষ্ম সব
জিভ ততদিনে সয়ে নেয় স্বাদের অত্যাচার
আর অন্তরে কেবল বাজে—
আহ, আমার মায়ের রান্নার কী স্বাদ!
তারপর, দুম করে মনে পড়ে
খালারও তো আছে ঠিক মায়া মায়া মুখ ভরা সন্তান
হয়তো ওরা কোনো সকালে হাত-প্লেট চেটেপুটে বলে
আহ মা, আজ আলু ভর্তাটা এত মজা হলো, তোমার রান্নার কী স্বাদ!
***
আপন
তার সাথে দেখা হলো সেই—
মনে নেই বিশদ সেসব
সবখানে বাজে কেন তবু—
তার সুরে সব কলরব!
মিহি গলা মায়া ভরা যেন—
অবিকল রাতের শিশির
আমি তো নাকাল হয়ে যাই—
হয়ে যাই ভীষণ অধীর।
তারপর দেখা নেই আর—
হয়ে গেল বাতাসে বিলীন
হরদম খুঁজে ফিরি হায়—
কেটে যায় ভারী রাত-দিন।
মিছরির মতো মুখ তার—
চোখেতে মায়ার ঝলকানি
দরদিয়া যত দূরে যাও—
ফিরে পাব এতটুকু জানি।
ফিরে পেলে ঠিক বলে দেবো
জেগে ওঠা বন এই মন
নরম নয়না মেয়ে শোনো—
ভালো লাগে তোমায় ভীষণ।
এসইউ/এএসএম