সৌমেন্দ্র গোস্বামীর কবিতা ভাবনা ও পাঁচটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কবিতা ভাবনা: সংগোপন সংকল্পই কবিতা

চঞ্চল কিশোরীর প্রথম প্রেমের পবিত্রতার মতো ততধিক সৌন্দর্য আছে কবিতার। কবিতা শহরের আদিম কোনো স্থাপত্যের ন্যায় নিরুপম; পথের চেয়েও বেশি গতিশীল। রাত্রির অন্ধকার কিংবা আলোর উচ্ছ্বাসে বৃক্ষের শাখায় শিশিরের স্ব-শব্দ পতনের মতো কবির হৃদয় হিল্লোলেও সুর বেজে চলে অনবরত। সংগোপন সংকল্পে আপন আলোর পরশে কবি শব্দে শব্দে অক্ষরে আঁচড়ে সে সুর আঁকেন ছবির মোড়কে; আলোর মতো ক্রমাগত বিবর্ধিত হতে হতে তা কবিতা হয়ে ওঠে।

সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি প্রেক্ষিতে কবিতা কখনো অস্ত্র হয়ে তো কখনো আবার বাঁশরীর বাঁশির মতো জেগে থাকে। মোহ, মায়া এমনকি আত্মাহুতির বাস্তবতা অবাস্তবতাও কবিতার রঙে, ঢঙে, প্রকাশে অকৃত্রিম ভাবে ধেয়ে চলে। কবিতা যেমন জাগরণে তেমন নৈরাশ্যেও পুরোনো বীণার ঝঙ্কারের মতো আন্দোলিত হয়।

বিজ্ঞাপন

মুখের ভাষা আর কবিতার ভাষাতেও আছে বিরাট ব্যবধান। শব্দ কবিতার পঙ্ক্তিতে সুরশলাকার মতো নিস্তব্ধ তরঙ্গ বহন করে। আবেদনের শুদ্ধতা, অভিব্যক্তি ও শব্দ চয়নের দক্ষতা কবিতায় যেমন বহুমাত্রিকতা আনে। তেমনই কবিতা থেকে পরবর্তী কবিতার পার্থক্যই কবিকে স্বার্থক করে তোলে। কবিতার জন্ম হয় আকস্মিক; তবে নির্মাণ সময় সাপেক্ষও হতে পারে।

কবিতার পরীক্ষা কবিকে যেমন দিতে হয়। তেমনই শব্দের নিরীক্ষাও চালাতে হয় ক্রমাগত। কবি পরাজিত হলে একটি বোধের ও একটি পরিস্থিতির মৃত্যু হয়। আর বিজয়ী হলে প্রতিটি নতুন কবিতা প্রতিবার একজন নতুন কবির জন্ম দেয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মেট্রো সেভেন ফোরট্রি এএম

প্রতারণার গোপন কৌশলে শহরে গ্রামে মাটির পালক
পরে আছে যারা—
পাখিটি রোজ তাদের কাছে উড়ে যায়
আপাত সবুজ পাখিটির ঠোঁট পুরোপুরি লাল নয়

দূর থেকে দেখা, কাছ থেকে দেখার বিরাট ব্যবধান
দেবতাও রাবণ হতে পারেন
রাবণও হতে পারেন রাম
তবুও ভালোবাসার জন্য ভালোবেসে যেতে হয়

ইত্যাদি ধারাবাহিকতার ভেতরে একটি চোখ
অজ্ঞাত পরিচয়ে
কোনো কোনো দিন কোনো কোনো সকালে
প্রজ্ঞাপনের মতো নির্দেশ জারি করে

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মেট্রোর এক্সেলটরে দাঁড়িয়ে
মৃত্যুহীন দুর্ভাগ্যের অন্ধকারের ভেতরে
নিজেকে বড় বেশি সুখী মনে হয় তখন
কারওয়ানবাজারও হয়ে ওঠে অদেখা স্বর্গের ঝুলন্ত উদ্যান।

প্রার্থনা

ভগবানকে বলব ভেবেছিলাম
রাশিফল ভেঙে যে দিনগুলো
ছিনতাই হওয়া সিকনেসের মধ্যে ডুবে আছে
জলে ভেজা মুড়ির মতোন কল্পনার সহবাসে
কোমল যে তরতাজা ফল
বিভা ও বিভ্রমে হাতের করতল
ছুঁয়ে থাকে—দ্বায় মোচনে তাদের যেন না লাগে
ইত্যাদি আরও অনেক কথাই বলার ছিল
কিন্তু তিনি সব জানেন ভেবে বলা হয়ে ওঠেনি…

প্রত্যাগমন

কিছুই হচ্ছে না যখন
চিরচেনা পথে ফিরে যাওয়া ভালো
একটা কিছু হবে ভেবে অনেকদিন হলো
এখানে নতুন
কথা ছিল ফেরার আগে
অগ্রিম কোনো প্যাকেজে বিক্রি হবো
তা-ও হচ্ছে না যখন
পুরোনো দৃশ্যের ভেতর
নতুন দৃশ্যের ইশারা পেয়েছিল যারা
যারা বলেছিল, সুগন্ধ বাঁচিয়ে রাখতে
আমি তাদের কথাও রাখছি না আর

বিজ্ঞাপন

ফিরে যাচ্ছি
যেখানে রাত আর দিন মিলেমিশে
এক হয়ে যায়…

বোধন

হয়তো একদিন ফুল ফুটবে ব্যর্থ অঞ্জলিও ফলপ্রসূ হবে
আনন্দ বৃক্ষটিকে উপড়ে ফেলার পর
রাতের মেকাপ সেদিন পরবো না আর
সংসারী
অনাহারী
সন্ন্যাসী
কারো জীবনই আজ আর আমাকে প্রেরণা দেয় না
শুধু অনুমতির অপেক্ষা—মা রায় দিলে
আমি কীর্তনের দলে যাব,
বাকিটা জীবন হারমোনিয়ামে জাগরণের গান গাব।

অস্তমিত সূর্য

বাড়ি ফেরার পথে ঘড়ির কাঁটা কেন জানি না দ্রুত
ঘুরতে থাকে, মনে হয় দাঁড়িয়ে পাশে, কাছে
কোথাও কেউ যেন নজরে রাখে

বিজ্ঞাপন

দুধসাদা বিড়ালটার শরীরে ক্ষত, রক্তজবার মতো
ফুটে আছে চোখের লাল
চিঠির ভারে লেটার বাক্সের
দরজা গেছে খুলে
তারপরও কোথাও কোথাও অপরিবর্তিত পারদ স্তম্ভ
প্রাচীর ভেঙে নেমে আসছে কস্তুরী রাত

দূরে দাঁড়িয়ে যেন কেউ দেখছে সব, নজরে রাখছে আমাকে।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।