বর্ষায় নারীদের মধ্যে বাড়ে ইউরিন ইনফেকশন, প্রতিরোধে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ১২ জুলাই ২০২৪
ছবি- আনপ্লাশ, পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি

ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই) সব বয়সী নারীদের মধ্যেই কখনো না কখনো দেখা দিতে পারে। পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি। মূত্রনালির সংক্রমণ হলে মূত্রতন্ত্র প্রভাবিত হয়, ফলে কিডনি ও মূত্রাশয়ের নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বর্ষায় কেন বাড়ে ইউটিআই?

স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ

বর্ষাকালের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ইউরিন ইনফেকশনের ঘটনা বেড়ে যায়। তবে কেন? প্রথমত, বর্ষায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে পরিবেশে বাড়ে স্যাঁতস্যাঁতেভাব। আর এই পরিবেশ যে কোনো জীবাণুর জন্য হতে পারে আঁতুরঘর।

বিশেষ করে ই.কোলাই’সহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির কারণে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পোশাক ও ভেজা পরিবেশ মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া স্থানান্তরকে সহজতর করতে পারে।

পরিষ্কার না থাকা

বর্ষাকালে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখলেও ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘসময় ধরে ভেজা কাপড়ে থাকা ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করা

পাবলিক টয়লেট হলো জীবাণুর আঁতুরঘর। নিয়মিত সেসব নারীরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি।

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা

বর্ষায় কম পিপাসা পাওয়াই অনেকেই পানি পান করতে ভুলে যান। আর দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরে ডিহাইড্রেশনের সৃষ্টি হয়।

এর থেকেও হতে পারে মূত্রনালির সংক্রমণ। অর্থাৎ পানি পান করার পরিমাণ কম হলে প্রস্রাব গাঢ় হতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ হতে পারে।

কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

দূর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে বর্ষায় অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ঠিক একইভাবে যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি।

ইউটিআই থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে?

প্রচুর পানি পান করুন

প্রচুর পানি পান করলে মূত্রনালি থেকে ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়। এজন্য দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। যা আপনার মূত্রাশয় থেকে ব্যাকটেরিয়া পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

প্রস্রাব ধরে রাখবেন না

নিয়মিত আপনার মূত্রাশয় খালি করার অভ্যাস করুন। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারে। যা ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রস্রাব অনুভব করলেই দ্রুত তা ত্যাগ করুন।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন

ইউটিআই প্রতিরোধে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য যৌনাঙ্গ ঠিকমতো পরিষ্কার করুন। এক্ষেত্রে ক্ষারহীন সাবান ব্যবহার করুন। সুগন্ধি কোনো প্রসাধনী বা সাবান ব্যবহার করবেন না, এতে জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।

ঢিলেঢালা পোশাক পরুন

এ সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। আঁটসাঁট জিন্স ও সিন্থেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন। এসব পোশাক শরীরকে আরও আর্দ্র করে তোলে ও ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। শরীর ভিজে গেলে ভেজা কাপড় দ্রুত পরিবর্তন করুন।

পরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করুন

পাবলিক টয়লেট যতটা সম্ভব এড়িয়ে যান। আর যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে ব্যবহারের আগে সিটে টয়লেট পেপার বা টিস্যু ব্যবহার করে তবেই বসুন।

মলদ্বার অঞ্চলের ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে ছড়িয়ে পড়া রোধে টয়লেট ব্যবহারের পরে সর্বদা সামনে থেকে পেছনে মুছুন। টয়লেট শেষে অবশ্যই হাত ধুতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে।

যৌন কার্যকলাপের পর প্রস্রাব করুন

যৌন কার্যকলাপের কারণে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারে। তাই শারীরিক সম্পর্কের পর প্রস্রাব করলে যে কোনো ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করতে পারে। যৌন সম্পর্কের আগে ও পরে যৌনাঙ্গ পরিষ্কারের মাধ্যমে আপনি মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।

পুষ্টিকর খাবার খান

আপনার ইমিউন সিস্টেম বুস্ট করতে বর্ষায় পাতে রাখুন প্রচুর ফল ও শাকসবজি। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও দুশ্চিন্তা এড়ানোর মাধ্যমেও আপনি স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখতে পারবেন।

প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন

প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া। যা অন্ত্র ও মূত্রনালি থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। তাই আপনার ডায়েটে প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার যেমন- টকদই রাখতে পারেন।

সূত্র: হেলথলাইন/বোল্ডস্কাই

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।