গরুর নেহারি খেলে কি সত্যিই শরীরে ক্যালসিয়াম বাড়ে?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ০২ জুলাই ২০২৪
গরুর নেহারি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার

মো. বিল্লাল হোসেন

গরুর নেহারি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। দেশের আনাচে-কানাচে ফুটপাতে কিংবা নামিদামি রেস্তোরাঁয় এই পদ প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। জানলে অবাক হবেন, খাবারটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।

খবরটি মূলত গরু, ভেড়া কিংবা ছাগলের পা প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন ধরনের মসলাযোগে রান্না করা হয়। অনেকেরই ধারণা আছে, নেহারি খেলে দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ে। আর এ কারণেই বেশি দাম দিয়ে হলেও অনেকেই নেহারি খান। তবে আদৌ কি নেহারি খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়ে?

নেহারি তৈরি করা হয় গরুর পা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে। গরুর পায়ের যে হাড়ের মাঝখানে নরম যে তুলতুলে স্পঞ্জের মত অংশ থাকে, সেটিকে বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা বলা হয়।

মূলত গরুর অস্থিমজ্জা খাওয়ার জন্যই নেহারির পদ জনপ্রিয়। গরুর অস্থিমজ্জা সাধারণত দু’ধরনের হয়। একটি হলো লাল অস্থিমজ্জা (রেড বোন ম্যারো) আরেকটি হলো হলুদ অস্থিমজ্জা (ইয়োলো বোন ম্যারো)।

আমাদের দেশে যেসব গরুর পায়ের হাড় সংগ্রহ করে নেহারি তৈরি করা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগই পূর্ণবয়স্ক হয়। আর পূর্ণবয়স্ক গরুর পায়ের হাড়ে সাধারণত হলুদ অস্থিমজ্জা থাকে ও লাল অস্থিমজ্জার পরিমাণ খুবই কম থাকে। হলুদ অস্থিমজ্জার মোট ওজনের অন্তত ৮০ শতাংশ অ্যাডিপোজ টিস্যু দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে।

আরও পড়ুন

এই টিস্যুতে থাকে ফ্যাট সেল বা অ্যাডিপোসাইটস, যা সাধারণত ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে শক্তি সঞ্চয় করে। মূলত এই কোষগুলো অস্থিমজ্জাকে হলুদ রঙে রঞ্জিত করে।

এছাড়া এই টিস্যুতে আছে ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন কনজুগেটেড লিনোলেয়িক অ্যাসিড) ও মনোআনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন অলেয়িক অ্যাসিড)। স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন এ, ডি, ই, কে ইত্যাদি সঞ্চিত থাকে ও শোষিত হয় এই কোষের মাধ্যমে।

গরুর অস্থিমজ্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কোলাজেন। আর এই কোলাজেন হলো এক ধরনের প্রোটিন বা আমিষ। গরুর অস্থিমজ্জায় সাধারণত টাইপ ১ ও টাইপ ২ কোলাজেন পাওয়া যায়।

রান্নার পর সাধারণত কোলাজেন জিলাটিনে রূপান্তরিত হয়। আর জিলাটিনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে যেমন গ্লাইসিন, প্রোলিন, হাইড্রোক্সিপ্রোলিন ও গ্লুটামিক এসিড ইত্যাদি।

গরুর অস্থিমজ্জার মধ্যে আরও আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিন সালফেট। মজার ব্যাপার হলো, গরুর অস্থিমজ্জায় ক্যালসিয়ামের মাত্রা থাকে খুবই কম। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর অস্থিমজ্জায় মাত্র ১৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, যা অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় খুবই কম।

এর থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নেহারি খেলে দেহে ক্যালসিয়ামের ততটাও বাড়ে না, যতটা আমাদের ধারণা। তবে কিছু উপকারী স্নেহ (লিপিড) ও কোলাজেন এর মাত্রা বাড়ে, যা শরীরের জন্য উপকারী। তাই নেহারি খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত প্রয়োজনীয় পরিমাণ পরিমাণে গ্রহণ করা।

লেখক: প্রভাষক, খাদ্য প্রকৌশল ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।