ঈদের কেনাকাটায় এগিয়ে নারীরা
ঈদ সামনে রেখে পুরোদমে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। নতুন ডিজাইনের পোশাক কিনতে রাজধানীর শপিং মলগুলোয় দিন দিন বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। আর এ কেনাকাটায় এগিয়ে রয়েছে মধ্য বয়স্ক নারী ও তরুণীরা।
নতুন ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ : রাজধানীর নিউমার্কেট, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সেসহ সকল শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে নতুন ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ শোভা পাচ্ছে। তবে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ঈদকে কেন্দ্র করে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, বিভিন্ন চরিত্রের নামে ও নায়ক-নায়িকার নামে নাম রাখা হয়েছে শাড়ি ও থ্রিপিসের।
বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, ধুম-থ্রি, লুঙ্গিড্যান্স, রামলীলাসহ হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্র পাখি, গুঞ্জন, বিড়া, মধুরমা, মনের খুশি, তেরেঙ্গা, ফড়িং, কলকাতার নায়িকা কোয়েল মল্লিকের নামেও পোশাকের নামকরণ করা হয়েছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, নয়াপল্টন, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডির শপিংমল, বসুন্ধরা সিটি, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় এ সব পোশাক। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানিকারকরাই পোশাকের বিচিত্র নাম দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
গাউছিয়া মার্কেটের শাড়ি মেলার স্বত্বাধিকারী ওসমান ফারুক বলেন, ‘ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মূলত এ সব নাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের বাজারের পোশাকের নাম ভারতীয় নায়িকা, সিরিয়ালের নামে নামকরণ করা হচ্ছে। ক্রেতারা খুশি হয়েও নতুন নামের পোশাকে কিনতেই এখন পছন্দ করে।’
দেখা যায়, এ সব পোশাকের জৌলুস বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে লেইস, চুমকি, পুঁতি, ব্লক, পট্টি, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, অ্যাপলিক, কুচি এবং হরেক রকমের সুতোর বুনন। এদিকে গরমের সিজন হওয়ায় ডিজাইনাররা লাল-নীল-হলুদ-সাদা-গোলাপীসহ অনেক উজ্জল রং বেছে নিয়েছেন।
নিউমার্কেটে আসা ক্রেতা তানিয়া জাহান বলেন, ‘এবার ঈদে নতুন ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ এসেছে। তবে পোশাকের দাম যাই হোক, ওই দামেই তিনি কিনবেন।’
ওড়নার ফ্যাশন : কামিজের সঙ্গে তো বটেই, ফতুয়া দিয়ে ওড়না পরার ফ্যাশনও এখন বেশ চলছে। পাশাপাশি ছেলেদের টি-শার্ট কিংবা পাঞ্জাবির সঙ্গেও মানানসই ওড়নার ব্যবহার নজরকাড়া। আর ঈদে তো চাই বাড়তি ফ্যাশন। ফ্যাশন হাউসগুলোর পাশাপাশি রাজধানীর গাউছিয়া ও চাঁদনী চকে হরেক রকমের ওড়না পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদনী চকের ওড়না ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে মসলিনের ওড়না বিশেষ করে সাদা ও সোনালি রঙের মসলিন ওড়নাই বেশি চলছে। মসলিনের ওড়নাগুলো সাত-আটটি রঙে পাওয়া যায়। এ ছাড়া চুনট ওড়না ১১০ টাকা, এমব্রয়ডারির কাজ করা ও পাড়সহ জর্জেটের ওড়না ২৫০ টাকা, নাইলনের টানা সুতি ও বিন্দু ওড়না ১৫০ টাকা, খাদি ও তাঁতের ওড়না ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
নিউমার্কেটের ওড়না ক্রেতা নাজনীন নাহার জানান, তৈরি পোশাকের চেয়ে দর্জি দিয়ে তৈরি পোশাকের মান অনেক ভালো। তাই এখান থেকে কাপড় কিনেছি। এখন ম্যাচিং করে শিফনের ওড়না কিনছি।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এখানে অল্প দামে ভালো ওড়না পাওয়া যায়। কাপড় অনুপাতে দাম রাখছে। এ ছাড়া অন্যান্য পোশাকের চেয়ে ওড়নার দাম অনেক কম।’
ফ্যাশন হাউস নগরদোলায় রয়েছে মসলিনের স্ক্রিন প্রিন্টের ওড়না, সুতির ওড়না, খাদির ওড়না, বিভিন্ন শেড ও এক কালারের ওড়না, মণিপুরি ওড়না পাওয়া যাচ্ছে। এ সব ওড়না ২৭০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
ফ্যাশন হাউসে বাঙালিয়ানা পোশাক : ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউসগুলোতে খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না এ ট্রেন্ড বা ধারার। সিজনটা গরমের হওয়ায় সালোয়ার-কামিজের কাপড় হিসেবে সুতিই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে বলে জানালেন ডিজাইনাররা। এ ছাড়া অ্যান্ডি কটন, তাঁত, সিল্ক, হাফসিল্ক, শিফন, চিনন আর কাতানটাও চলছে বেশি। রঙেও এসেছে বৈচিত্র্য। লাল, নীল, মেরুন, সবুজ, ফিরোজা, ম্যাজেন্টা, কমলা, গোলাপিসহ নানা উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হচ্ছে কাপড়ে।
আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন ডিজাইনার নীপা খালিদ জানান, এবার নরমাল ছাঁটের কামিজে ভ্যালু অ্যাডিশন হিসেবে কারচুপি, লেইস, পট্টি ব্যবহার করা হয়েছে। আর কামিজ হচ্ছে লম্বায় ছোট। শর্ট চুড়িদার ও সামান্য একটু ভাঁজ করা ধুতি সালোয়ারের পাশাপাশি নরমাল সালোয়ারতো আছেই। কামিজের সঙ্গে মিল রেখে সালোয়ারে করা হয়েছে মেশিন এমব্রয়ডারি।
আড়ং, মায়াসির, কে-ক্রাফট, প্রবর্তনা, রঙ, বাংলার মেলা, চরকা, অন্যমেলা, অঞ্জনস, নগরদোলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, ক্রিয়েশনস, কীত্তনখোলা, ওজি, দেশাল, বাঙ্গাল, মাঠসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে বিভিন্ন ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ উঠেছে। আর এ সব পোশাকের দাম নিম্নে ১৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পছন্দের শীর্ষে শাড়ি : ঈদকে ঘিরে এবার ফ্যাশন হাউসগুলো এবং দোকানিরা বাহারি নাম আর ডিজাইনের শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এর সঙ্গে মিরপুরের বেনারসী পল্লীর ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী কাতান, জামদানি, তাঁত ইত্যাদি শাড়ির।
নিউমার্কেটের রাজশাহী সিল্ক-এর দোকানি মাহবুব হায়দার জানান, ঐতিহ্যবাহী শাড়ির চাহিদা সব সময়ই থাকে। তবে ঈদ মৌসুমে শাড়ি বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। এর মধ্যে আবার রাজশাহী সিল্কের শাড়ি নারীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে। এ সব শাড়ির দাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
জানা যায়, ঢাকাই জামদানি আড়াই হাজার থেকে ৮-৯ হাজার টাকা, সুতি তাঁতের শাড়ির দাম ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, মিরপুরের তৈরি কাতানের দাম দেড় হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের শো-রুমগুলোতে আনা হয়েছে হাজার রকমের বুটিক, চুমকি, অ্যাপ্লিক, কারচুপি, প্যাঁচওয়ার্ক ও হাতের কাজ করা বাহারি ডিজাইনের শাড়ি। ডিজাইনের পাশাপাশি দামটাও বেশ চড়া হওয়ায় অনেক ক্রেতা এখনও এই শাড়িগুলো দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এখানকার শাড়ির দাম নিম্নে ৮ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
জামদানি শাড়ি কুটিরের বিক্রেতা সাইফুল আহমেদ জানান, তার দোকানে সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের জামদানি শাড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে টাঙ্গাইল শাড়ি, সুতির জামদানি শাড়ি ইত্যাদি।