ওজন কমান কর্মব্যস্ততার মধ্যেও
সামনে আপনার বিয়ে বা এনগেজমেন্ট? আধুনিক জগতের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? ভারী স্বাস্থ্য অথচ ডিজাইনার ড্রেস পরার শখ ষোল আনা? ফ্রেন্ড সার্কেলে নিজের স্বাস্থ্যের কারণে লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে? খেতে অসম্ভব পছন্দ করেন অথচ শরীর নিয়েও অস্বস্তিতে আছেন? আপনার এ জাতীয় সমস্যার চটজলদি সমাধান নিয়েই আজকের সাজগোজের এই বিশেষ আয়োজন।
কেন এত মোটা হচ্ছি?
কিছু বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, ওজন বৃদ্ধির সবচাইতে বড় কারণ হল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা। অর্থাৎ শরীরের প্রধান প্রয়োজন মেটানোর পর যেটুকু খাবারের দরকার আর শরীরের নেই, সেটা গ্রহণ করা। সেই খাবারটুকুই পরিপাকের পর শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়ে যায়, যা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মেদ।
অনেকে ডিপ্রেশনের সময়টুকুতে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি খেয়ে ফেলে। ফলে মোটা হবার প্রবনতা বেশি হয়। রোগ বা বংশগত কারণেও অনেকে মোটা হতে পারে।
এখন কী করব?
প্রথমেই নিজের মধ্যে ডিটারমিনেশন আনতে হবে যে, যাই হয়ে যাক না কেন আমাকে এবার ছিপছিপে হতেই হবে। আপনার যদি মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ না হয়ে থাকে, তবে মিষ্টিকে একেবারেই না বলুন। চায়ে একেবারেই চিনি খাবেন না। স্যুইটেনার ব্যবহার করতে পারেন। তেলে ভাজা খাবার সম্পূর্ণ ছেড়ে দিন। এর পরিবর্তে গ্রিলড বা বেকড খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। সুষম খাবার গ্রহণ করুন। খাবারে পরিমিত স্নেহ জাতীয় খাবার থাকাটাও কিন্তু খুবই জরুরী। কেননা ফ্যাট আমাদের স্কিন সুন্দর নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
প্রচুর পানি পান করুন। পানি দেহের টক্সিন কে ফ্লাশ আউট করতে সাহায্য করে। তবে ঠাণ্ডা পানি পান করবেন না। কিছুটা উষ্ণ পানি পান করুন। ঠাণ্ডা পানি ফ্যাট কে জমাট বাঁধিয়ে দেয় ফলে খাবার হজম হতে দেরি হয়। নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন।
শুধু খাবার কন্ট্রোল করলে আপনি ফিট থাকতে পারবেন না। যদি রেগুলার এক্সারসাইজ করবার সময় না পান তাহলে অন্তত রোজ ২০ মিনিট করে হাঁটুন। কর্মস্থলে হেঁটে যাওয়া বা হেঁটে আসার চেষ্টা করুন একটু কষ্ট করে হলেও। বেশি দূরে কর্মস্থল হলে কিছুদূর অন্তত হেঁটে যাতায়াত করুন। মনে রাখতে হবে, সুন্দর ও আকর্ষণীয় স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চাইলে আপনাকে একটু ত্যাগ স্বীকার তো করতেই হবে।
হালকা এক্সারসাইজ আপনার অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসুন। যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং , জগিং, সাইক্লিং, সুইমিং করুন। এতে আপনার বডি শেইপ টোনড থাকবে।
রেগুলার ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এখন তো শীতকাল, টাটকা মৌসুমি ফল ও সবজি অনেক কম মূল্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো রোজকার খাবারে রাখুন। শীতের টাটকা রঙিন সুস্বাদু সবজি খেতে কার না ভালো লাগে? খাদ্যতালিকায় কিছু কাঁচা সবজি যেমন গাজর, লেটুস, টমেটো, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, বীট, ব্রকলি রাখুন। এতে সবজির খাদ্যগুণ ও পুষ্টিমান থাকে অটুট।
সকালে তুলনামূলক ভারী নাস্তা করুন। ভাত বা রুটি সকালে খান কেননা সারা সকালের কর্মব্যস্ততায় এ খাবারটুকু ভালো ভাবেই কাজে লেগে যাবে।
দুপুরে তুলনামূলক কম খান। ভারী খাবার আলস্য এনে দেয় যার ফলে কাজে অনীহা আসে এবং দুপুরে ঘুম পায়। আর দুপুরে খাবার পর ঘুম খাদ্য হজম প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দেয়।
সবচে কম খান রাতে। কারণ রাতে আপনি আর তেমন কোন কাজ করবেন না যাতে ক্যালরি বার্ন হয়। রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে আপনার শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। রাতে জাগলে সকালে কর্মোদ্যম কমে যায়, রাতে ক্ষুধা লাগলে অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায় যা আর হজম হয় না। ফলে মেদ জমে যায়। মোট কথা রাত জাগার অভ্যাস একদমই ত্যাগ করা উচিত।
নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন। গ্রিন টি আপনার বডি মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। একেবারেই কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবেন না। মনে রাখবেন ১ গ্লাস কোল্ড ড্রিঙ্কে ৮ থেকে ১২ চামচ চিনি থাকে। বোতলজাত ফলের রসও খাবেন না। ফ্রেশ ফ্রুট জুস, ডাবের পানি, গ্রিন টি পান করুন।
মাসে ১ দিন বা ২ দিন ১ বেলা নিজের পছন্দের কোন খাবার খান, তা একটু অস্বাস্থ্যকর হলেও। এতে আপনার মনে কোন অতৃপ্তি থাকবে না আর আপনি আবার রুটিনে স্বাচ্ছন্দ্যে ফেরত যেতে পারবেন। নিজের কর্মজীবনে বা সংসারে যত ঝামেলাই আসুক না কেন, নিজের মোটিভেশন থেকে কোনভাবেই সরে যাবেন না। মনটাকে শক্ত করুন।
সর্বোপরি সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করুন। ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন ও সুস্থ থাকুন। সূত্র: সাজগোজ