বুক ধড়ফড় করা প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ নয় তো?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০২৩

ডা. রিফাত আল মাজিদ

প্যানিক ডিজঅর্ডার এক ধরনের মানসিক সমস্যা। বর্তমানে নানা কারণে মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও ভীতি জন্মাচ্ছে। এর কারণে মানুষ নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ সময় মানুষ তার মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

প্যানিক ডিজঅর্ডার মূলত কী?

প্রথমে যে নেতিবাচক চিন্তাটা মাথায় আসে তা হলো শরীরে অস্বস্তি অনুভব করা। একই সঙ্গে হাঁটতে মন চায় না, বসে থাকতে ইচ্ছে করে না, শুলে ঘুম আসে না, মনের ভেতর প্রচণ্ড চিন্তা আসে যে মৃত্যুভয় কাজ করে, আমার মারাত্মক অসুখ হয়েছে, ডাক্তাররা কিছুই ধরতে পারছেন না, আমি আর সুস্থ হব না, মনে হয় প্রেশার বেড়ে গেছে কিন্তু মাপলে দেখা যায় প্রেশার ঠিকই আছে।

আরও পড়ুন: মানসিক চাপ যেভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়

আরও মনে হতে থাকে বুকে ব্যথা, হয়তো হার্টফেল হবে, কেউ কষ্ট বুঝতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেরও স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায় ও জীবনযাপনেও ব্যাঘাত ঘটে।

প্যানিক হওয়ার কারণ কী?

প্যানিক ডিজঅর্ডার মূলত আমাদের স্নায়ুতন্ত্র অটোনমিক সিস্টেমের দুটি অংশ আছে, সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। আমরা যখন কোনো কারণে নিজেদের বিপদাপন্ন মনে করি, ভয় পাই বা নার্ভাস হয়ে পড়ি তখন আমাদের শরীরের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে যায়।

এই সময় অ্যাড্রেনালিন নামক একটি বিশেষ হরমোন ক্ষরণ হতে থাকে, যা আমাদের দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ও অঙ্গকে আসন্ন বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে তোলে।

আরও পড়ুন: মানসিক চাপসহ আরও যেসব কারণে পেশিতে টান ধরে 

শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে, অ্যাড্রেনালিন অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ ও পরিপাক প্রক্রিয়ায় রক্ত সংবহন কমিয়ে দিয়ে স্নায়ু, মাংসপেশী ও মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় এটি হৃৎস্পন্দন কমায়। এভাবে আমাদের দেহে আক্রমণ থেকে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চিত হয়।

তবে এই অ্যাড্রেনালিন যদি সঠিক উপায়ে কাজ না করে। নেতিবাচক চিন্তায় আমরা নিজেকে আটকে রাখি, আমরা দীর্ঘদিন মানসিক উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্কের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। যে কারণে আমরা তুচ্ছ বিষয়েরও অতিরঞ্জিত ব্যাখ্যা করে বিপজ্জনক হিসেবে ধরে নিই।

ফলে একে বিপদ হিসেবে ধরে নিয়ে সৃষ্ট তথাকথিত বিপদ আর শিগগিরই কাটে না (কারণ আসলে তো কোনো বিপদই নেই)। তবে দেহ এটিকে বিপদ হিসেবে ধরে নেয়, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় থাকে ও আমরা উৎকণ্ঠিত বোধ করি।

আরও পড়ুন: মানসিক শান্তি পেতেই ৯০ শতাংশ মানুষ পরকীয়া করেন, বলছে সমীক্ষা 

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী?

• বুক ধড়ফড় করা ও হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা
• তীব্র আতঙ্ক
• বুকে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
• অবশ বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি
• দেহে কাঁপুনি সৃষ্টি হয় ও প্রচুর ঘাম হয়
• হাত-পা ঝিনঝিন করে
• পেটে গণ্ডগোল, ভুটভাট শব্দ হয়
• বিভিন্ন ধরনের ভয়ের চিন্তা মাথায় আসে যেমন- এখনই মারা যাবো, কেউ বাঁচাতে পারবে না ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে 

সাধারণত প্রতিটি প্যানিক অ্যাটাকের স্থায়িত্বকাল ১০-১৫ মিনিটের মতো হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আধা ঘণ্টারও অধিক হতে পারে। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ ব্যাধির বিস্তারের হার অধিক, যে কোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে, তবে কিশোরদের সর্বাধিক ঝুঁকি থাকে।

প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব সময় উৎকণ্ঠায় থাকেন, অসুখ বাড়ল কি না, তা খতিয়ে দেখতে সার্বক্ষণিক শরীরের ওপর নজরদারি চালিয়ে যান। কেউ কেউ মিনিটে কতবার শ্বাস নিচ্ছেন, সেটা পরিমাপ করতেও বাদ রাখেন না।

আরও পড়ুন: মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ উপায়

চিকিৎসা

এরকম লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন এটা প্যানিক ডিজঅর্ডার তবে তিনি সেটা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা সাইকিয়াট্রিস্ট চিকিৎসকের কাছে রেফার করবেন।

মানসিক সমস্যায় অবশ্যই সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শে চিকিৎসা সেবা, কাউন্সিলিং ও সাইকোথেরাপি চলবে। রোগীর অবস্থা ও রোগের তীব্রতা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।