দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা উচিত

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ৩১ মে ২০২৩

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুষম পুষ্টি। আর সুষম পুষ্টি পাওয়ার প্রধান মাধ্যম দুধ। পুষ্টিবিদদের মতে, ‘শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের ভূমিকা অপরিহার্য।’ শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ ভীষণ প্রয়োজনীয় খাবার। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে তুলে ধরতে ১ জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস’। ২০০১ সাল থেকে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের প্রতিপাদ্য—‘দুগ্ধজাত খাবার উপভোগ করুন’।

দুধ এবং দুগ্ধজাত উপকারিতা নিয়ে বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান পুষ্টিবিদ অধ্যাপক আখতারুন নাহার বলেন, ‘সুষম খাবারের কথা বলতে হলে প্রথমেই আসে দুধের কথা। দুধ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ খাবার। মানবজীবনের শুরু হয় দুধ দিয়ে। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ ভীষণ প্রয়োজনীয় খাবার। যেসব শিশু জন্মের পর ঠিকভাবে দুধ পান করতে পারে না, তারা অধিকাংশ সময় নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে।’

দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন ও মেধাবিকাশে সাহায্য করে। এটি মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান। এছাড়া দুধে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন- ক্রোমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিংক ও আয়োডিন। গরুর দুধে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, চর্বি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন: কোন ডাবে পানি বেশি চিনবেন যেভাবে 

দুধের সবচেয়ে উপকারি দিক হলো এর ক্যালসিয়াম। মানুষের হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। এটি ভিটামিন ডি-র ভালো একটি উৎস। ভিটামিন ডি হাড়, দাঁত, নখ, চুল ও ত্বকে পুষ্টি জোগায়। রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে। আরও আছে ভিটামিন এ, যা সব বয়সের মানুষের চোখের জন্য উপকারী। দুধের মধ্যে আছে ফোলেট ও ম্যাগনেশিয়াম, যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে। আয়োডিন আমাদের হরমোনজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভিটামিন বি বেরিবেরি অসুখ প্রতিরোধ করে, স্নায়ুকে রাখে কর্মক্ষম। এ সুষম খাবারের উপকারিতা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।

এতটা গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে দুধ পান করার প্রবণতা কম। প্রতিদিন নানা ধরনের খাবারের মাঝে তারা অত্যাবশক হিসেবে দুধকে রাখছেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা দরকার। যা বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ মেনে চলেন।
দেশে দুধ কম পান করার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো, যে পরিমাণ দুধ প্রয়োজন তা উৎপাদন না হওয়া। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে দুধের উৎপাদন খরচ। যদিও দেশে গত এক দশকে দুধের উৎপাদন বেড়েছে, তারপরও সাধারণ মানুষ এখনো প্রয়োজনের তুলনায় কম দুধ পান করেন। সেই সঙ্গে আছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার দুধ কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। মানুষ খাবারের তালিকা থেকে যেভাবে দুধ বাদ দিচ্ছে, তাতে জনস্বাস্থ্য আরও ক্ষতির মুখে পড়বে বলেই মনে করেন পুষ্টিবিদেরা।

আরও পড়ুন: বিস্কুট খাওয়ার দিন 

তাই নিজে সুস্থ থাকার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মকেও শক্তি, বুদ্ধি ও সুস্থতার সঙ্গে গড়ে তুলতে সামর্থ অনুযায়ী নিয়মিত দুধ পান করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত দুধ পান করার জন্য তরল দুধ বাজার থেকে কিনে এনে তা ফুটিয়ে খেতে হয়। কর্মব্যস্ত এ সময়ে অনেকেই এ পুরো প্রক্রিয়াকে কিছুটা ঝামেলাই মনে করছেন। ফলে যারা নিয়মিত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী দুধ পান করছেন না, তাদের জন্য পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হলো, হাজারো ব্যস্ততার ফাঁকে খুব সহজেই তারা ইউএইচটি দুধ পান করতে পারেন।

ইউএইচটি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে উচ্চ তাপমাত্রা বা অতি-উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে দুধের শেলফ লাইফ বা মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ পদ্ধতিতে গরুর দুধকে ১৩৫ থেকে ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চার সেকেন্ডের জন্য গরম করা হয় এবং সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করার পর ৬টি প্রতিরক্ষামূলক স্তর দিয়ে তৈরি বিশেষ শক্ত কাগজের প্যাকেটে প্যাক করা হয়। ফলস্বরূপ বাতাস, আর্দ্রতা এবং সূর্যালোক টেট্রা প্যাক কার্টনে প্রবেশ করতে পারে না এবং এটি নিশ্চিত করে যে, যতক্ষণ প্যাকটি খোলা না হবে; ততক্ষণ দুধ নষ্ট না হয়। এ কারণে না খোলা প্যাকের ভেতরে থাকা দুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে, কোনো রেফ্রিজারেশনের প্রয়োজন ছাড়াই।

আরও পড়ুন: ধনিয়াপাতার আচার 

ইউএইচটি দুধের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সরাসরি প্যাকেট থেকেই খাওয়া যায়, সিদ্ধ করার কোনো দরকার পড়ে না। তাই শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আপনি নিরাপদে ইউএইচটি দুধ খেতে পারেন।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।