বার্ধক্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি


প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ছোট্ট শিশুটির যত্নে আমরা সচেতন থাকি। কিন্তু প্রবীণ যারা রয়েছেন, তাদের যত্নে আমরা খুব বেশি সচেতন নই। ৬০ বছর বয়সের পরবর্তী সময়কে বার্ধক্য বলা হয়। তবে এর প্রায় ১০-১৫ বছর আগে থেকেই দেহের ভেতর বার্ধক্যের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ৪০-৪৫ বছর বয়স থেকে দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ও কলার কার্যক্ষমতা কমতে থাকে, বিশেষ করে মেয়েদের প্রজনন তন্ত্রের পরিবর্তনের ফলে ঋতু বন্ধ হওয়ায় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য।

বৃদ্ধ বয়সে হৃৎপিণ্ড ও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে আসে। বয়সের সঙ্গে দৈহিক পরিশ্রমের মাত্রাও কমে। তাই অতিভোজন থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ করে রাতের আহার হালকা ও সহজপাচ্য হওয়া উচিত। লবণ, চিনি, মধু কম খাওয়া ভালো।

এ সময়ে অস্তি থেকে ক্যালসিয়ামের অপচয় হয়, দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অনেক মহিলাদের মেরুদণ্ডের হাড় বেঁকে যায়। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ছোট মাছ, ছানা, লবণ ছাড়া পনির গ্রহণ করা ভালো। কড-লিভার অয়েল, ভিটামিন-ডি গ্রহণে হাড়ের ক্ষয়পূরণ করা যায়।

দেহের মৌল বিপাক ক্রিয়ার গতি কমে যাওয়ায় শক্তি চাহিদা হ্রাস পায়। ঘি, চর্বি, মাখন, কেক, পেস্ট্রি, ক্রিম ইত্যাদি ফ্যাটি ফুড না খাওয়াই ভালো। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সঠিক রাখা খুবই দরকারী।

পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা ও পাচক রসের ক্ষরণ কমে যাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শরোগ, অজীর্ণতা প্রভৃতি রোগ দেখা দিতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে পর্যাপ্ত সবুজ শাক-পাতা খাওয়া উচিত। এতে ফলিক এসিড থাকে, যা রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজন হয়। শাক-পাতা ভাজি না করে সিদ্ধ করে ভর্তা আকারেও গ্রহণ করা যায়। রসালো ও পাকা ফল গ্রহণ করা ভালো।

বৃদ্ধ বয়সে ধীরে ধীরে খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। ঘন ঘন কড়া চা, কফি, নরম পানীয়, লবণ, মিষ্টি, চকোলেট প্রভৃতি গ্রহণ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে ফেলা উচিত।

রসালো ও পাকা ফল খাওয়া বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায়।

বৃদ্ধ বয়সে সঠিক ওজন বজায় রাখা আবশ্যক। ওজনাধিক্যের ফলে নানা রোগের উপসর্গ ও রোগ দেখা দেয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, হাড়ের রোগ প্রভৃতি অধিক ওজনের ফলে দেখা দেয়। দেহের জন্য আদর্শ ওজন কি তা সবারই জানা উচিত। দেহের উচ্চতা সেন্টিমিটারে মাপা হলে, তার থেকে ১০০ বিয়োগ করলে আদর্শ ওজন বের করা যায়। যেমন- একজন ব্যক্তির উচ্চতা ১৬০ সে.মি.। তার আদর্শ ওজন হবে (১৬০-১০০) ৬০ কেজি। এই ওজনের ১০ শতাংশ বেশি হলে ওভারওয়েট এবং ১৫-২০ শতাংশ বেশি হলে অবিসিটি বা স্থূল হিসেবে বিবেচিত হয়। ওজন কমানোর লক্ষ্যে প্রথমে ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে। ভাত, রুটি, তেল, চর্বি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে।

বৃদ্ধ বয়সে খাদ্যের পছন্দ-অপছন্দ বিবেচনা করে খাদ্য সুষম করা উচিত। আহার পাঁচমিশালী, হজম উপযোগী হওয়া ভালো। ননীতোলা তরল দুধ, সবজি, স্যুপ, মাছের ঝোল ক্ষুধা বৃদ্ধিতে ও দেহের পুষ্টি সাধনে সাহায্য করে। দৈনিক হাঁটাচলা ও কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম সুস্থতার জন্য আবশ্যক। নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করা হলে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তখন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিপূরক খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা যেতে পারে।

এইচএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।