ব্রেস্ট ক্যান্সার: প্রাথমিক পরীক্ষা নিজেই করুন
ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার, আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ক্যান্সার। সাধারণত যেসব মহিলাদের বয়স ৪৫ এর উপরে তারাই বেশি এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপ মাসটেকটমি(Mastectomy) সার্জারির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব হলেও যদি আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে ক্যান্সার ধরা পরে তাহলে অধিকাংশ সময়ই এই ক্যান্সারের চিকিৎসা সফল হয়না। এর পিছনে মূলত যে কারণ গুলো আছে-
১. স্তন ক্যান্সার হওয়ার একটি লক্ষণ হল ব্রেস্ট লাম্প(Breast Lump)। স্তনে যদি গোটা বা চাকার মত থাকে সেটিই ব্রেস্ট লাম্প। আক্রান্তদের অধিকাংশই জানেন না তাদের এই গোটা রয়েছে। যতদিনে তারা এটি লক্ষ্য করেন, ততদিনে হয়তো অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে!
২. ব্রেস্ট লাম্প লক্ষ্য করার পরেও অনেক মহিলা লজ্জা পেয়ে বা এটিকে গুরুত্বপূর্ন মনে না করে ডাক্তার দেখান না।
নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করার পদ্ধতি(BSE-Breast Self Examination) পুরো বিশ্বেই এখন পরিচিতি পেয়েছে। এই পদ্ধতিতে নিজের বাসায় বসেই আপনি পরীক্ষা করতে পারবেন আপনার ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার আশংকা আছে নাকি। নিয়মিত যদি আপনি এই পরীক্ষা করে থাকেন তাহলে প্রাথমিক ধাপেই আপনি সচেতন হবেন স্তন ক্যান্সারের ব্যাপারে। জেনে নিন কিভাবে বাসায় বসেই নিজের চেকআপ করবেন।
১ম ধাপ
প্রথমেই আয়নার সামনে সোজা হয়ে দাড়ান। এ সময় কাধ সোজা থাকবে এবং দুই হাত কোমরের উপরে রাখুন। আপনার স্তন লক্ষ্য করে দেখুন। দেখুন দুইটি স্তন`ই সাধারণ আকার, আকৃতির এবং রঙের নাকি। এটিও লক্ষ্য করুন স্তন দুইটি ফোলা ভাব ও কোন রকম বিকৃতি ছাড়া সমান আকৃতির নাকি।
খেয়াল করুন আপনার
স্তনে টোল পড়েছে/ ফুলে গিয়েছে/ কুঞ্চিত হয়েছে নাকি, স্তনবৃন্তের জায়গা সরে গিয়েছে নাকি, স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে গিয়েছে নাকি, স্তনে র্যাশ/ লাল দাগ/ ঘা হয়েছে নাকি, উপরের কোনটি ধরা পড়লে ডাক্তার দেখান।
২য় ধাপ
এবার হাত দুইটি উপরের দিকে তুলে প্রথম ধাপে যা লক্ষ্য করেছেন আবার তা লক্ষ্য করুন। আয়নার দিকে লক্ষ্য করে দেখুন স্তনবৃন্ত থেকে রস পড়ছে বা পড়তে পারে নাকি। এ রস পানি জাতীয়/ হলুদ রঙের/ দুগ্ধপূর্ণ বা রক্ত`ও হতে পারে।
৩য় ধাপ
এবার শুয়ে পড়ুন এবং ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও বাম হাত দিয়ে ড়ান স্তন অনুভব করুন। আপনার হাতের কয়েকটি আঙ্গুল সমান করে বৃত্তাকার গতিতে স্তনের উপর হাল্কা চাপ দিয়ে ঘুরিয়ে দেখুন। পুরো স্তন এভাবে আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন। স্তনবৃন্ত থেকে শুরু করলে আপনি প্রথমে বৃন্তের চারপাশে ছোট করে বৃত্ত তৈরী করুন এবং ক্রমান্বয়ে বৃত্তের আকার বাড়াতে থাকুন ও পুরো স্তন এভাবে চেক করুন।
এরপর আপনার কন্ঠাস্থি থেকে শুরু করে তলপেটের আগ পর্যন্ত এবং বগল থেকে শুরু করে স্তনসংকট পর্যন্ত সব জায়গায় বৃত্তাকার গতিতে আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেখুন। আপনার এই বৃত্তাকার গতিতে পরীক্ষা করার সময় বুকের সব কলা/টিস্যু(Tissue) অনুভব করতে ভুলবেন না। যখন বুকের উপরে পরীক্ষা করবেন তখন হাল্কা চাপ দিবেন, বুকের মাঝের টিস্যু অনুভব করার জন্য মাঝারি চাপ এবং বুকের নিচের টিস্যু অনুভব করার জন্য দৃঢ় চাপ দিবেন।
৪র্থ ধাপ
৩য় ধাপে স্তন যেভাবে পরীক্ষা করেছেন এই ধাপেও সেভাবে পরীক্ষা করবেন কিন্তু এবার বসে বা দাঁড়িয়ে আপনাকে পরীক্ষা করতে হবে। এই পরীক্ষা করার সময় স্তন ভেজা থাকলে সুবিধা হয়। তাই যদি পারেন স্নান করার সময় পরীক্ষাটি করবেন।
আপনার যদি ব্রেস্ট লাম্প হয়ে থাকে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধরা পরবে। যদি লাম্প ধরা পরে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন। নিয়মিত এই পরীক্ষা করুন, আপনার কাছের সবাইকেও করতে বলুন। সূত্র: উর্বশী