প্রবাসীদের ভাবনা : জয় হবে লাল সবুজের


প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৫

ক্রিকেট জ্বরে সারা বিশ্বের সাথে আক্রান্ত আমেরিকাও। বিশেষ করে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও ব্রিটিশ ইমিগ্রান্টদের মাঝে এ ঝড় বইছে প্রবল ভাবে। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলছে কোয়াটার ফাইনাল খেলা দেখার প্রস্তুতি। বাংলাদেশের সব খেলাই হলে রাত জেগে উদযাপন হয়। ছেলে-বুড়ো সবার বিশ্বাস “আবার ধরিয়া দিব তাহাদের”। মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেগ আনুভতি গুলো প্রকাশ করেছেন এভাবে-

সাইফুল আজম সিদ্দিকী, গাড়ি প্রকৌশলী, যুক্তরাষ্ট্র : পত্রিকা পরে জানলাম, পুরো অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকের সংখ্যা মাত্র ২৭ হাজার। পক্ষান্তরে দেশটির শুধু ভিক্টোরিয়া প্রদেশেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। মেলবোর্নে গ্যালারিতে হয়ত লাল সবুজের গর্জন অনুপাতে কম থকাবে। তবে ভয় নেয়, তোমরা মাঠে গর্জে ওঠো, সারাবাংলার ১৬ কোটি গর্জন এভারেস্টে প্রতিধ্বনিত হয়ে কাঁপিয়ে দিবে সারা উপমহাদেশ। আমরা সারা রাত জেগে থাকবো উত্তর আমেরিকার সাগর পারে দখল নিতে লাল সূর্যের।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই, বরং এ জয় আমাদের কোটি প্রাণের উচ্ছাসের। এই জয় হবে অহংকার চুরমার করার, লাখ শহীদের সম্মানে। তবে নিজেদের সেরা দিনে কোনো বড় নামে কাজ হয় না, সেটি যেমন তোমরা জানো, আমরাও বিশ্বাস করি। তবে আমরাও এ বিশ্বকাপে বাঘের মতই খেলছি। আমাদের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে।

একটা আধ ঘণ্টা ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। সেটা কোহলি, ধোনি যেই খেলুক। আমাদের মনে আছে টেন্ডুলকার, গাঙ্গুলি, রাহুলের অনেক পরিণত দলও আত্মসমর্পণ করেছিল। আমাদের বিশ্বাস রুবেলের একটা বলই তছনছ করে দিবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি জোকার নভজিত সিধুর পাগলামি। নিজেদের একশ` ও দেড়শ’ তম ম্যাচে এ ভারতকেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার তিনশ` তম ম্যাচের মাইলফলকেও লেখা হবে ইতিহাস! মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড যে ইতিহাস লিখার জন্যই তৈরি। রেকর্ড ভাঙা-গড়া আর রানের বানে ভেসে যাবে প্রতিবেশীর দাম্ভিকতা। জয় হবে লাল সবুজের।

ডি এম নূর রুহুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র :  মিটিং চলছিল। ওয়ান অন ওয়ান মিটিং। গুরুত্বপূর্ণ একটা ওয়ার্ক ওয়ার্ডার  তৈরি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বসের টেবিলেই মিটিং চলছে। হঠাৎ চোখ পড়ল টেবিলের এক কোনে রাখা একটা ছবি তাতে দশ বারো বছরের দু’টো ছেলে বসকে জড়িয়ে রেখেছে। হাতে দু’জনেরই দুটো বেস বলের ব্যাট।

-তোমার ছেলেরা বুঝি?

কাজের মাঝখানেই মুখ থেকে কথা গুলো বেরিয়ে এল। মনে মনে বস ও হয়তোবা একাটা ব্রেক চাচ্ছিল। তাই উত্তর দিতে যেন দেরি হলো না।

-হ্যা, গত বছরের ছবি।

-ওরা বেস বল খেলে বুঝি, ক্রিকেট খেলে না?

প্রশ্নটা করে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। আমেরিকার মাটিতে ক্রিকেট এখনও তেমন প্রচলিত হয়ে উঠেনি, তাই এদেশে জন্মেছে এমন সাদা চামড়ার কারও পক্ষে ক্রিকেট না খেলাটাই স্বাভাবিক। অথচ আমার কাছে মনে হচ্ছিল, না খেলাটাই যেন একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কেন? এক মুহূর্ত যেতে না যেতেই নিজের কাছে পুরো ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেল। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্যে গত কয়েক সপ্তাহে এতটাই উত্তেজিত হয়ে আছি যে, কার সাথে কি বলছি, তার উপরে পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না অনেকটাই। এইতো গতকালই (মঙ্গলবার) অফিসে ভারতীয় এক সহকর্মীর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে আবিস্কার করলাম আমার গলার আওয়াজ “পা- ধা” স্কেলে অবস্থান করছে। কারণ কি? আলোচনার বিষয় বস্তু বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে ততক্ষনে মওকা মওকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। ঘরেও কি কম যাচ্ছে? দু’দিন আগে বউ এর সাথে তর্কের এক পর্যায়ে বলে ওঠি, খামোখা ফালতু কথা বোল না, নিজে নিজেই বোল্ড আউট হয়ে যাবে ......

খেলার প্রয়োজন মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য, মানসিক আনন্দের জন্য। কিন্তু খেলা যে মানুষের মাঝে ব্যবহার গতও এত পরিবর্তন এনে দিতে পারে, তা কিন্তু বুঝতে পারিনি এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে। এর আগের বিশ্বকাপ গুলোর প্রতিবারই আমাদের আশার পাখি ডানা না মেলতেই শিকারির আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে। এবারই প্রথম আমারা নিজেরা শিকারি হয়ে অপরের আশার পাখির ডানা মচকে দিচ্ছি। জাতি হিসাবে আমারা বাংলাদেশের বাঙ্গালি। নিজেদের উন্নতির জন্য সবাই এক মত হয়ে চলার মত উদাহরণ আমরা এখন পর্যন্ত খুব কমই দেখাতে পেরেছি। নিজের দেশে তো নয়ই বরং বিদেশের মাটিতেও রাজনৈতিক ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে বড় করে দেখে মুহূর্তেই নিজেদের মাঝে হাতাহাতি করতেও আমাদের একটুকু সময় লাগে না। অথচ ক্রিকেট বিশ্বকাপের এই আসর, আমাদের সেই চরিত্র কেউ যেন হঠাৎ আমূল পাল্টে দিয়েছে। প্রতিদিন লাঞ্চের সময়ে আমারা বাংলা ভাষাভাষী বাংলাদেশি যারা আছি আমাদের এই কোম্পানিতে, তারা সবাই এক সাথে খেতে বসি। খাওয়াও হয় আর তার সাথে সাথে চলে আড্ডার মহড়াও। সেই আড্ডার মহড়ায় মতের মিল না হলে একে অপরকে আবার আক্রমণ করতেও একদম সময় নেই না। অথচ গত তিন চার সপ্তাহ ধরে আমাদের সবার আলোচনার বিষয় বস্তু কেবল একটি ... ক্রিকেট।

সেখানে সবাই একই মন্ত্রে উদ্দীপ্ত। আমরা জিতব, আমরা জিততে পারি। আরও একটা বিষয়ে অফিসের অনেকেই আমরা একই আচরণ করছি। তা হল সবাই অতিরিক্ত চা আর কফি পান করছি বিশেষ বিশেষ দিনে। যে দিন বাংলাদেশের খেলা থাকে, রাত জেগে খেলা না দেখে কেউ থাকতে পারছি না যদিও মাথার উপর থাকছে সকাল বেলা যথা সময়ে অফিসে উপস্থিত হবার মানসিক তাড়না।

যেদিন বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করলো, সেদিন সারা রাত জেগে খেলা দেখেছিলাম। ভোরে অফিস কামাই করা যাবে না আর তার উপর বাচ্চাদের স্কুলে নিতে হবে। তাই খেলা চলাকালীন অবস্থায় ঘর থেকে বের হতে হয়। শীতের সকাল। লাল রঙা সূর্য আকাশে উঁকি দেয়া শুরু করেছে। মনে বেদনা এই জন্য যে বাকি খেলাটা দেখা গেল না। কিন্তু হাতে তো আজকাল সারাবিশ্ব। ফোনে ক্রিক ইনফো থেকে প্রতি মিনিটে খবর জানছি আর গাড়ি চালাচ্ছি। এমন অবস্থায় জানলাম বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়ের কথা। চলন্ত গাড়িতে চিৎকার করে উঠলাম। আমার চিৎকার শুনে নয় বছরের আর ছয় বছরের আমার দুই ছেলে অবাক। বড় জনের প্রশ্ন আমি চিৎকার করছি কেন। আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম কারণটা। সে মন দিয়ে শুনল। তারপর বলল- “ বাবা, তোমার বাংলাদেশ sucks....”  আমি তার উপর বিরক্ত হয়ে বললাম, তা কেন হবে ? আজ যে বাংলাদেশ জিতল। সে আগের মতন নির্বিকার ভাবে বলল, তাহলে আগে কেন বাংলাদেশ জিতে নাই? আমি ভাবলাম, আসলেই তো সত্যি কথা , আমরা আগে কেন জিতিনি? কেন অপরকে সুযোগ দিয়েছি আমাদের অপমানিত করতে, পরাজিত করতে বছরের পর বছর? সাথে সাথে নতুন প্রজন্মকে মনে মনে বাহাবা দিতে ভুললাম না। যা আমরা পারিনি, তা তোমরা পারছো, জয় হোক তোমাদের, পিছনে আর তাকিও নন। এবার কেবল সামনে এগিয়ে যাবার পালা।

মাহমুদুল খান (আপেল), মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র: সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের ছোট্ট এই ভু-খন্ডে ষোলো কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। অন্তহীন সমস্যার মধ্যে থেকেও আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জাতীগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। আর সেই সুখ, সেই প্রশান্তি ফুটে উঠে সবার চোখে মুখে। সুখে থাকার জন্য যে শুধু প্রাচুর্যের দরকার হয় না বা শুধু প্রাচুর্য যে মানুষকে সুখী করতে পারে না, সেটা আমরাই জাতি হিসাবে সারাবিশ্বের কাছে বার বার প্রমাণ করেছি। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলিতে বড় বড় উপলক্ষের দিনগুলোতে রাস্তায় বের হলে কোনো কাক পক্ষীও চোখে পরে না। সেখানে আমাদের প্রতিটি জাতীয় উৎসবে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। খেয়ে না খেয়ে আমরা মনের আনন্দ প্রকাশ করি। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। কিন্তু এই সুখী জাতির জীবনে তাদের সুখানুভুতি প্রকাশের উপলক্ষ্য সেই তুলনায় কমই বলা চলে। তাই খেলাধূলার জগতে বিশেষ করে ক্রিকেট বিশ্বকাপের এবারের এই বিশাল অর্জনকে আমরা কিভাবে উদযাপন করবো বা আমাদের উচ্ছাস কিভাবে প্রকাশ করবো সেই আয়োজনই চলছে দিকে দিকে। উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশি শহর গুলোতে চলছে নানা আয়োজন। উৎসব প্রিয় জাতির জন্য এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ বয়ে এনেছে এক বাড়তি উন্মাদনার। আন্তর্জাতিক আসর গুলোতে আমাদের পদচারণা এখনো চোখে পরার মতো না হলেও ক্রিকেট বিশ্বে আমরা এগিয়েছি বহুদূর। এইটা তারই স্বীকৃতি। আমরা এখন বিশ্বের প্রথম আটটি গর্বিত জাতীর একটি। বিশেষ করে ক্রিকেট এর জনক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এই অর্জন সত্যিই গৌরবের, আর কোয়ার্টার-ফাইনালের এই পর্যায়ে পাশের দেশকে প্রতিপক্ষ হিসাবে পাওয়াটা আর একটা বাড়তি পাওনা। খেলার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আর কোনো ধরনের স্নায়ু চাপে না ভুগলে কোয়ার্টার-ফাইনালে জেতাটা খুব অসম্ভব বলে মনে হয় না।

এই ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যেগুলো আমাদেরকে মাঠের লড়াইয়ে বাড়টি প্রেরণা গুজবে, তার মধ্যে একটি হলো-এই পর্যায়ে আমাদের হারানোর কিছু নেই, এই পর্যন্ত যেটুকু পেয়েছি সেটা ইতিমধ্যেই প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশের দিক থেকে অনেক বেশি পাওয়া। এই বিষয়টি মাথায় রাখলে মাঠে আমাদের সৈন্যরা অনেক নির্ভার বোধ করবে, সেটা তাদেরকে স্নায়ু চাপের বাড়তি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো- বিশ্বে আমরাই বোধকরি এক অনন্য সাধারণ জাতি যারা খেলাধূলার মতো একটি আসরে এত উন্মাদনা দেখায়। অনেকের মতে সেদিন মাঠে শুধু এগারো জন নামবে না, মাঠে নামবে ষোলো কোটি বাংলাদেশি। এতো বিপুল বিশাল অনুপ্রেরণা খুব কম দলের ভাগ্যে জোটে। এই বাড়তি অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে খেলোয়াড়রা মাঠে আরো বেশি উৎফুল্ল থাকতে পারে, মনোবল আরো সুদৃঢ় হতে পারে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।

বর্তমানে দেশে চলমান রাজনৈতিক হানাহানি, হিংসা বিদ্বেষ, অনিশ্চয়তা, উৎকণ্ঠার মাঝে ক্রিকেট এর এই প্রাপ্তি জাতিকে দিয়েছে একটুখানি স্বস্থির নিঃশ্বাস। রাজনীতির বিভাজন যেখানে গোটা জাতিকে দুইভাগ করে ফেলেছে, যেখানে কোথাও এতটুকু অবলম্বন নেই, যে খড়কুটো ধরে জাতি আবার ঐক্যবধ্য হবে, সেখানে এই খেলার প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ সমস্বরে বলে ‘উঠে গর্জে উঠো বাংলাদেশ’।

তুলনামূলক বিচারে এবারের বিশ্বকাপ দলে বাড়তি কোনো আকর্ষণ তো ছিলোই না, বরং একেবারেই সাদামাটা একটি দলকে পাঠানো হয়েছে। আর যে কারণে বরাবরের নেয় এবারও সমালোচকদের ধারালো সমালোচনার খোচায় নির্বাচক মন্ডলীকে হতে হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত। তবে এর মাঝেও একটি বিষয় বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে এবারের আসরে, সেটা হলো- অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু খেলোয়াড় পরিণত হয়েছে নির্ভরতার প্রতিক হিসাবে। যেখানে প্রতি বছর খেলোয়ার নির্বাচনে চলে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আর সেই ফাঁকে অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে বেশিরভাগ নতুন মুখের অনভিজ্ঞরা দলে স্থান পায়, যাদের বেশিরভাগই আবার পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জনের আগেই ঝরে পড়ে। আর তাই দর্শকদেরও প্রতিবছর নতুন খেলোয়ারদের সাথে পরিচিত হতেই গলদ ঘর্ম হতে হয়। এবারের আসরে কিছু বিশ্বমানের খেলোয়াড় উঠে এসেছে, যারা তাদের অভিজ্ঞতার চাপ রাখতে সক্ষম। যাদের মধ্যে দলপতি মাশরাফি মুর্তজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব-আল হাসান অন্যতম।

প্রতি বছর নতুন নতুন খেলোয়ার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কিছু নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। ব্রায়ান লারা, টেন্ডুলকারদের আমরা খেলতে দেখছি আজ কতো বছর, সেখানে আমাদের খেলোয়াড়রা কেন মাত্র এক থেকে দুই আসরের মধ্যে ঝরে পড়বে? প্রতি বছর আমাদেরকে কেনো একঝাক কিশোরের সমন্নয়ে একটি আন্ডার নাইন্টিন ধাচের দল গঠন করতে হয়। যাদেরকে দেখলেই মনে হয় সবাই অনভিজ্ঞ? এবারের আসরে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের খেলার মাধ্যমে প্রবীনরা দিয়ে গেলো। এর মানে এই না যে নতুনদের পথ রুদ্ধে করে দেয়া হলো, নবীন প্রবীন সমন্নয়েই দল গঠন করতে হবে, কিন্তু অভিজ্ঞতাকে স্থান দিতে হবে সবার উপরে, যেন দু-চারজন কিংবদন্তি খেলোয়াড় তৈরি হয়। যাদের সামনে বল বা ব্যাট করতে গিয়ে নতুনদেরকে দিতীয়বার চিন্তা করতে হবে। যেটা হয় আমাদের নবীন ছেলেদের ক্ষেত্রে। তারা যখন শচীনদের সামনে বল করতে যায়, তখন নার্ভাসনেস তাদের আগেই দুর্বল করে দেয়, যেটা আমাদের দলের কোনো খেলোয়ারের সামনে অন্যদের হয়না।

পরিশেষে আমাদের প্রতিপক্ষ ভারতের সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। এবারের আসরে সব চেয়ে শক্তিশালী তিনটি দলের একটি হলো ভারত। আসরের আগের সব প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে তাদের পারফরমেন্স ছিলো যারপর নাই হতাশাজনক। কিন্তু মূল পর্বে তারা নিজেদেরকে বদলে ফেলে। তবে আসার কথা হলো, কেনো যেন তারা বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ হিসাবে পেয়ে বেশ একটা নার্ভাসনেসে ভুগছে, হয়তো ভয় তাদের একটাই, আবার যেন ২০০৭ এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ভেনু পরিবর্তন হতে শুরু করে তাদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ এবং বিভিন্নজনের প্রতিক্রিয়ায় সেই বিষয়গুলোই উঠে এসেছে।

আর এটাই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা। আমাদের ছেলেরা যদি নির্ভার হয়ে দেশের ষোলো কোটি মানুষের ভালবাসায় অনুপ্রানিত হয়ে খেলতে পারে, ইনশাল্লাহ আমরা আবারও ২০০৭ এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবো। এগিয়ে যাও বাংলাদেশ। ষোলো কোটি প্রাণের অফুরন্ত ভালবাসা ও আশির্বাদ রয়েছে তোমাদের সাথে।

আরএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।