চশমা এলো কেমন করে
চোখ নাকি মনের কথা বলে। এই চোখ নিয়ে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা কতশত কবিতা গান নিখেছেন। কেউ চোখকে সমুদ্রের সাথে কেউ আবার তুলনা দিয়েছেন পাখির বাসার সাথে। আমাদের চারদিকে কী ঘটে যাচ্ছে তা আমরা যতটা দেখে উপলব্ধি করতে পারি তা আর কোনো ভাবেই পারি না। তাই চোখের সুরক্ষায় আমরা চোখে চশমা ব্যবহার করি। এটি বর্তমানে ফ্যাশনের যেমন একটি অংশ তেমনি আপনার চোখকে বাইরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করতে একটি মাধ্যম। তবে আমরা যে চশমা পরি তা আসলে এলো কোথা থেকে?
চশমার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। যখন মানুষ জানতোই না যে প্রকৃতপক্ষে চশমা বলতে কোনো শব্দ আছে। ইতিহাসবিদরা এটি আবিষ্কার করেন মিসরীয় সভ্যতায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তখন চশমার পরিবর্তে ব্যবহার করা হতো কাচের বৃত্ত। সাধারণত কোনো জিনিসকে পরিষ্কার দেখার জন্য ওই সময় বিভিন্ন ধরনের কাচের প্রচলন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য চোখে কাচের ব্যবহার দেখা যায়। তাও বৃত্তাকার কাচ, যা সুতা কিংবা চেইনের সাহায্য নিয়ে গলায় কিংবা হাতে ঝুলিয়ে রাখা হতো।
সত্যিকার অর্থে চশমা বলতে যা বোঝায় তা পাওয়া যায় ইতালিতে দ্বাদশ খ্রিস্টাব্দের দিকে। ওই সময় চোখে আতশী কাচ লাগিয়ে ছোট জিনিসকে দেখার চেষ্টা করা হতো। ১২৮৬ সালের দিকে ইতালিতে প্রথম চশমা তৈরি হয়েছিল। জিওদার্নো দা পিসা নামের এক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেছিলেন। তার চশমা তৈরির পিছনে উদ্দেশ্য ছিল মানুষের দৃষ্টিশক্তির সীমা বাড়ানো। তবে আধুনিক চশমার উদ্ভাবক হিসেবে যাকে জানা যায় তার নাম গিরোলামো সাভোনারোলা। তিনি একজন ইতালিয়ান। ১৭২৭ সালে তিনি প্রথম আধুনিক চশমার নকশাটি তৈরি করেন। তার আগে একটি লম্বা লাঠিতে কিংবা লোহার তৈরি খাঁচে বসিয়ে আতশী কাচ ব্যবহার করা হতো। সাভেনারোলের চশমার নকশাটি সামনে রেখে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা শুরু হয়। এবং দীর্ঘ একটি সময় পার করে তা রূপ নেয় বর্তমানের চশমায়।
চশমা শুধু চোখকে রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। এটি ব্যবহার করা হয় ফ্যাশনের বিষয়টি মাথায় রেখেও। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ হয়েছে উন্নত আর তাদের রুচিতেও এসেছে পরিবর্তন। তাই ফ্যাশনে চশমার কদরও দিন দিন বাড়ছে। তাই তো পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে ফ্যাশনপ্রেমী মানুষেরা তাদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই করে দিচ্ছেন চশমাকে।
এইচএন/পিআর