ঘর থাকুক জীবাণুমুক্ত
সুস্থ থাকতে চাইলে বাসা-বাড়িকে জীবাণুমক্ত রাখা খুবই জরুরী। জীবাণু আমাদের এমনই এক শত্রু যাকে খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, তবে তার অত্যাচার সহ্য করতে হয়! পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আবার এই জীবাণুর প্রধান শত্রু। যেসব জায়গা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা হয়, সেখানে জীবাণু জন্মাতে পারে না-
১. ঘর জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য খুলে রাখুন ঘরের সব জানালা। সপ্তাহে অন্তত এক দিন গুছিয়ে, ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করুন ঘরের ধুলোবালি। পরিষ্কার করতে পারেন আলমারি, বুক শেলফ, ওয়ার্ডরোবসহ যাবতীয় আসবাবপত্র। সোফার ফোমের কভার খুলে রোদে দিলে মারা যাবে সব রোগজীবাণু। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করতে পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এসব কাজ।
২. বিছানার তোশক বা ফোম বাসার ছাদে বা ব্যালকনির কড়া রোদে দিন। এতে মারা যাবে ছারপোকাসহ যাবতীয় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক। রোদে দেওয়া সম্ভব না হলে সপ্তাহে বা মাসে অন্তত এক দিন ইস্ত্রি গরম করে তোশক বা ফোমে দিন। দরজা-জানালার পর্দা ধোয়ার সময় পানিতে সামান্য জীবানুনাশক তরল মিশিয়ে নিন।
৩. তবে এসব তরল বেশি দিলে কাপড়ের ঔজ্জ্বল্য দ্রুত নষ্ট হবে। পোকামাকড়ের উৎপাত হলে বাথরুমের ড্রেন, কলের পাইপলাইনের স্থানে ছিটিয়ে দিতে পারেন কীটনাশক পাউডার। তবে এসব পাউডার ভীষণ ক্ষতিকর চোখ, মুখের জন্য। বেসিনের পাইপের মুখে জীবাণুনাশক তরল ঢালুন। আর দুটি করে ন্যাপথলিন দিয়ে রাখুন বেসিনের পাইপের মুখে। এতে পাইপের ভেতর দিয়ে রোগজীবাণু সহজে বংশ বিস্তার করবে না।
৪. অনেকেই দাঁত ব্রাশের পরে টুথব্রাশ খোলা রেখে দেন। সারা রাতে তেলাপোকা, মাকড়সাসহ ছোট অণুজীবগুলো লাগতে পারে টুথব্রাশে। তাই ব্রাশে ঢাকনা লাগান বা ব্রাশের বক্সে ভরে রাখুন।
৫. অনেক সময় পরিষ্কার করে ধোয়া কাপড়েও ছত্রাক সংক্রমণ হয়। কাপড়ে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকলে এই অবস্থা হয় বেশি। বাসায় রোদ কম এলে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে দূর করতে পারেন কাপড়ের স্যাঁতসেঁতে ভাব।
৬. ছোট শিশু রয়েছে এমন বাসায় নিয়মিত জীবানুনাশক তরল সহ গরম পানিতে কাপড় ধোয়া দরকার। ছোট শিশুর বিছানায় প্রস্রাবের গন্ধ থাকলে পিঁপড়াসহ নানা রকম পোকামাকড় আসে। এগুলো বাচ্চার কানেও ঢুকতে পারে। তাই শিশুর বিছানা শুকনো ও গন্ধমুক্ত রাখুন। বাচ্চাদের পটি সর্বদা রাখুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
৭. তেলাপোকা ও অন্যান্য জীবাণু মারার জন্য সপ্তাহে অন্তত এক দিন পোকামাকড় মারার স্প্রে দিয়ে কিছুক্ষণ ঘরের দরজা-জানালা বন্ধু রাখুন। এ সময় ঘরের ভেতরে কেউ থাকবেন না। কারণ, এই স্প্রেগুলো নানা রাসায়নিক পদার্থ ও অ্যাসিডের সংমিশ্রণে তৈরি। নাকে এর গন্ধ যাওয়াটাও অনুচিত।
৭. রান্নাঘরের কেবিনেট, বুকশেলফ, বাথরুম, আলমারি বা যেকোনো আসবাবের কোনায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন। কালো জিরা, নিমের পাতাও কাজ করে কীটনাশক হিসেবে। বুকশেলফ বা রান্নাঘরের কেবিনেটগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন এবং পাতলা সুতির কাপড়ে নিমপাতা বা কালো জিরা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন।
৮. সম্ভব হলে নিয়মিত স্প্রে করুন। স্প্রে করার সময় ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখুন অন্তত ৩০ মিনিট বা এক ঘণ্টা। এতে ছোট পোকার বাচ্চাগুলোও মারা যাবে। রান্নাঘরের কেবিনেটে স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখুন যেন তেল, মসলা, চাল, ডাল, আটা—এসব কৌটার ঢাকনা ভালোভাবে লাগানো থাকে। তা না হলে খাবারে বিষাক্ত পদার্থ মিশে যাবে।
৯. রান্নাঘরের বেসিনের নিচের অংশ বা সিঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করুন। যে পরিষ্কারক দিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করবেন, সেটা বাথরুমে নিয়ে যাবেন না। দুই স্থানের জন্য দুটি আলাদা পরিষ্কারক হওয়া জরুরি। নিয়মিত পরিষ্কারক তরল ব্যবহার করতে না পারলে গরম পানি ঢালুন। গরম পানিতে রোগজীবাণু মারা যাবে। সাবান বা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন।
১০. ফুলদানির ফাঁকে, পর্দার কাপড়ে বাসা বাঁধতে পারে অণুজীব। তাই সপ্তাহে অন্তত একটি দিন এগুলো মুছে পরিষ্কার রাখুন। টিভির ট্রলিতে ড্রয়ার থাকলে সেখানেও স্প্রে করুন।
এইচএন/এমএস