গুচি-শ্যানেল’সহ বিশ্বসেরা ৭ ফ্যাশন ব্র্যান্ড

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি
জান্নাতুল মাওয়া সুইটি জান্নাতুল মাওয়া সুইটি , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২৪
ছবি- ফ্যাশন সচেতনরাই এসব ব্র্যান্ডের মূল গ্রাহক

বিশ্বসেরা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর নাম জানেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বিশেষ করে গুচি, শ্যানেল লুইস ভ্যুত্তন এসব ব্র্যান্ডের পোশাক থেকে শুরু করে প্রসাধনী সবকিছুই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। এ কারণেই এসব ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করে নিজেদেরকে জাতে তোলেন সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে ধনী ব্যক্তিরা।

মোটকথা ফ্যাশন সচেতনরাই এসব ব্র্যান্ডের মূল গ্রাহক। বিশ্বে এমন অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ড আছে যেগুলো তাদের পণ্যের কোয়ালিটি নিশ্চিত করে বাজারে টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। তেমনই বিশ্বসেরা ১০ ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও তাদের উৎপত্তি সম্পর্কে জেনে নিন, ‘ফ্যাশন দিবস’ উপলক্ষে আজকের এই লেখায়-

শ্যানেল

শ্যানেল হলো এমন একটি ব্র্যান্ড, যার উত্তরাধিকার আছে ফ্যাশনের ইতিহাসেই। এর কিছু আইকনিক ডিজাইনের মধ্যে আছে ওয়েস্টার্ন মিনি ব্ল্যাক ড্রেস, শ্যানেল নং ৫ পারফিউম, চ্যানেল ২.৫৫ ব্যাগ, টুইড পোশাক, মুক্তার নেকলেস ও ব্যালে ফ্ল্যাট।

কোকো শ্যানেল একজন কিংবদন্তি ডিজাইনার। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে ভ্যানিটি ব্যাগ ও ইয়টিং প্যান্ট প্রবর্তন করেন তিনি। এতে নারীদের ফ্যাশনে বিপ্লব ঘটে, তার ডিজাইনকৃত পণ্যের মাধ্যমেই।

তার লক্ষ্য ছিল আরও আরামদায়ক পোশাক তৈরি করা। কোকোর উত্তরাধিকারের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে কার্ল লেগারফেল্ড ৮০ এর দশকে তার নিজস্ব ডিজাইন আধুনিকীকরণ করেন ও সেগুলোকে পুনরায় বাজারে আনেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে শ্যানেল ব্র্যান্ডের বর্তমান বাজারমূল্য ১৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শ্যানেলের পণ্যের গুণমানই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে ও ব্র্যান্ডটিকে টিকিয়ে রেখেছে।

লুইস ভ্যুত্তন

১৬৭ বছর ধরে লুইস ভ্যুত্তনের পোশাক, ব্যাগ, জুয়েলারিসহ বিভিন্ন পণ্য একচেটিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ কেড়ে আসছে। এই ব্র্যান্ডের আইকনিক ও অসামান্য ডিজাইন মূলত যুগ যুগ ধরে একই রয়েছে। জানলে অবাক হবেন, করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে চীন, জাপান ও কোরিয়াতে এলভি’র পণ্য বিক্রির হার বেড়েছিল।

লুইস ভ্যুত্তনের পণ্য সব সময়ই ট্রেন্ডি। এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড তরুণ ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্রচারণা চালায়। ব্র্যান্ডটি এশিয়ার জনপ্রিয় কিছু মুখ, যেমন- মুলানের লিউ ইয়েফেই, স্কুইড গেমের জুং হো-ইয়ন, টেনিস খেলোয়াড় নাওমি ওসাকা ও বিটিএস’র সঙ্গেও এনডোর্সমেন্ট ডিল করেছে।

গুচি

১৯১২ সালে গুচি ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি ফ্লোরেন্সে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বর্তমানে বিশ্বসেরা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। সর্বপ্রথম গুচি তার ব্যাম্বো ব্যাগ দিয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়ে। এরপর ক্যানভাস স্যুটকেস ও দ্য জ্যাকির মতো বিলাসবহুল ব্যাগ তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার প্রয়াস ঘটায়।

পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে গুচি ব্র্যান্ড প্রথম পোশাক বাজারে আনেন। দুর্ভাগ্যবশত, মৌরিজিও গুচির নেতৃত্বে তখন ব্র্যান্ডটি প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। তবে ১৯৯৪ সালে টম ফোর্ড গুচিতে যোগ দেন ও ব্র্যান্ডটিকে বিলাসবহুল ফ্যাশনের তালিকায় নাম ওঠান।

জানলে অবাক হবেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ বিলাসবহুল ফ্যাশন বাজারে ৪০ শতাংশ অবদান রাখবে ব্র্যান্ডটি। অভিনেতা জিয়াও ঝান, কে-পপ আইডল আইইউ ও কাই থেকে শুরু করে হ্যারি স্টাইলস পর্যন্ত গুচি ব্যবহার করেন। ফলে পপ সংস্কৃতিতে গুচির গ্রাহক নেহাত কম নয়।

প্রাডা

১৯১৩ সালে মারিও প্রাডা এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্র্যান্ডটির যাত্রা শুরু হয় একটি ছোট দোকান থেকে। যেখানে লেদার বা চামড়ার পণ্য বিক্রি করা হত। ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রাডা হয়ে ওঠে এক বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডের নাম।

মারিওর নাতনি মিউচিয়া প্রাডা পারিবারিক ব্যবসার ভার গ্রহণ করার পর থেকেই প্রাডা রীতিমতো বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ডের কাতারে পৌঁছায় ও বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন পাওয়ার হাউসে রূপান্তরিত হয়।

আন্তর্জাতিক এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পোশাক, ব্যাগ, জুতা ও আনুষাঙ্গিক পণ্য অনেকটাই এক্সপেনসিভ। যা শুধু ধনীরাই কিনতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে, ব্র্যান্ডটি তার কার্বন পদচিহ্ন কমাতে ও পরিবেশবান্ধব অনুশীলন বাড়াতে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করছে।

ডিআইওআর

ক্রিশ্চিয়ান ডিওর নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের একজন। ১৯৪০-১৯৫০ সালের দিকে ফ্যাশন শিল্পে বিপ্লব ঘটায় ডিওর। যা ফ্যাশনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় চিহ্নিত করেছে। তারপর থেকে বিলাসিতা ও গ্ল্যামার জগতে সেরা পণ্য হিসেবে ডিওরের নাম ঘুরে বেড়াতে শুরু করে সবার মুখে মুখে।

ডিওর ব্র্যান্ড তাদের প্রচার ও প্রসারের জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করেন, তার মধ্যে একটি হলো অনাড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ক্রিশ্চিয়ান ডিওর: নিউইয়র্ক সিটির ডিজাইনার অব ড্রিমস প্রদর্শনী’ দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে। যেখানে হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন ও তারা ব্র্যান্ডটির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও আইকনিক ডিজাইনে মুগ্ধ হন।

এর আগে লন্ডনে এসপ্রিট ডিওর ও ২০১৯ সালে নিউ লুক রেভলিউশনের মতো প্রদর্শনীগুলোও অত্যন্ত সফল হয়েছে, যেখানে প্রায় ৬ লাখ মানুষের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়। ফ্যাশন পণ্যের পাশাপাশি, ডিওর সৌন্দর্য শিল্পেও অত্যন্ত সফল। উচ্চ-মানের পণ্য ও উদ্ভাবনী প্যাকেজিংয়ের কারণে ক্রেতারা এই ব্র্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হন।

ব্যালেন্সিয়াগা

ব্যালেন্সিয়াগা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্রিস্টোবাল ব্যালেন্সিয়াগা। যিনি কোকো শ্যানেল ও ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মতো ফ্যাশন আইকনদের চেয়েও সম্মানিত ছিলেন। বর্তমানে ব্যালেন্সিয়াগা কেরিং গ্রুপের মালিকানাধীন, যেটি গুচি, সেন্ট লরেন্ট, বোটেগা ভেনেটা ও আলেকজান্ডার ম্যাককুইনের মতো অন্যান্য বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ডেরও মালিক।

১৯৭২ সালে ক্রিস্টোবালের মৃত্যুর পর, ব্যালেন্সিয়াগা তার কিছুটা গৌরব হারায়। তব ২০১৫ সালে, ডেমনা গভাসালিয়া ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নেন ও ব্র্যান্ডের ইমেজকে হাউট ক্যুচার থেকে স্ট্রিটওয়্যারে রূপান্তরিত করেন।

এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যালেন্সিয়াগার ‘সক স্নিকার্স’ ও ‘প্ল্যাটফর্ম ক্রোকস’ বিলাসবহুল ফুটওয়্যার বাজারে আধিপত্যের সঙ্গে একটি বিশাল সাফল্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে ব্যালেন্সিয়াগা ডিজিটাল ফ্যাশনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে।

হার্মিস

আইকনিক হার্মিস ব্র্যান্ড তার বিলাসবহুল ব্যাগের জন্য পরিচিত যেমন- বার্কিন ও কেলি ব্যাগ। এই ব্যাগগুলো এখন ধনীদের স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাগের সেকেন্ড হ্যান্ড মূল্যও সোনার চেয়ে ১০ গুণ বেশি।

হারমিস তাদের নাম ধরে রাখতেও ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। যেমন- বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি, গ্রেস কেলি ও জেন বিরকিনের মতো বিখ্যাত সেলিব্রিটিদের নামে ব্যাগের নামকরণ ইত্যাদি। এই ব্র্যান্ড খুব কম সংখ্যক পণ্য ও ডিজাইন বাজারে আনেন, যাতে তাদের পণ্যের সুরক্ষা বজায় থাকে ও ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে।

জেএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।