সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি
জান্নাতুল মাওয়া সুইটি জান্নাতুল মাওয়া সুইটি , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ৩০ জুন ২০২৪
ছবি- পিক্সাবে, যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক উপকারিতা আছে

সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন সবাই সরব। অপ্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত। কেউ সময় কাটাতে আবার কেউ প্রয়োজনের খাতিরে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যেমন- ফেসবুক, টুইটার, টিকটক, কিংবা ইনস্টাগ্রামে বিচরণ করেন।

নিজেদের জীবনযাপন, কাজকর্মসহ ট্রাভেল আপডেট ফ্রেন্ডস ও ফলোয়ারদেরকে জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট করেন কমবেশি সবাই। এটিই এখন সবার অভ্যাস ও শখে পরিণত হয়েছে।

২০২৩ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৪.৯ বিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব ছিলেন। সেই হিসাব অনুযায়ী, গড়ে একজন মানুষ প্রতিদিন ১৪৫ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেছেন।

যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক উপকারিতা আছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বন্ধু ও পরিজনদের সঙ্গে যুক্ত হতে ও যোগাযোগ রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্ব অনেক।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কিছু অপকারিতাও আছে, যা সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

বিশেষ করে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, একাকিত্ব ও সামগ্রিক সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হারে বাড়ছে। গবেষণা আরও বলছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা অধিক সময় ব্যয় করেন তাদের মধ্যে দুঃখ, অসন্তোষ, হতাশা বা একাকিত্ব বাড়ে।

সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে?

লাইক-কমেন্টসে কমতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা ভালো অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত। যখন আমরা কিছু পোস্ট করি, তখন সেখানে বেশি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার দেখলে ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা আমাদেরকে খুশি করে তোলে।

তবে যখন কেউ তার পোস্টে কাঙ্খিত লাইক, কমেন্ট পান না তখন তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমতে শুরু করে ও কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা দুশ্চিন্তার কারণ। এর থেকেই বাড়ে হতাশা ও উদ্বেগ।

আরও পড়ুন

ফিল্টারের ব্যবহার

সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দর সুন্দর ছবি বা ভিডিও পোস্ট করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই আছে। আর সেসব ছবি-ভিডিওতে নিজেকে সুন্দর থেকে আরও সুন্দর করে তুলতে অনেকেই ফিল্টারের ব্যবহার করেন। যেমন- স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে সবচেয়ে বেশি ফিল্টার ব্যবহৃত ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা হয়।

এক্ষেত্রে সহজেই শারীরিক চেহারা পরিবর্তন করা ও চেহারার খুঁতগুলো লুকানো যায়। ফলে ছবি বা ভিডিওতে নিজেকে সুন্দর দেখালেও, বাস্তবের চেহারা নিয়ে অনেকের মধ্যেই হিনমন্যতার সৃষ্টি হয়, যা অনেকের ক্ষেত্রেই মানসিক বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।

ফিয়ার অব মিসিং আউট বা ফোমো

ফোমো বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়, এমন অনুভূতি অনেকের মধ্যে দেখা দেয়। এটি একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে বিবেচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কে কি করছেন, কে কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন, কী পরছেন, কী খাচ্ছেন এসব অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

এই বিষয়কে বলা হয় ফিয়ার অব মিসিং আউট বা ফোমো। অনেকের আত্মসম্মানে মারাত্মক প্রভাব ফেলে এই অনুভূতি। মূলত যারা নিজের জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট, তাদের মধ্যে ফিয়ার অব মিসিং আউট বা ফোমো সমস্যাটি দেখা দেয়। ফলে উদ্বেগ বাড়ে, মানসিক অশান্তিতে ভোগেন অনেকেই।

সাইবার বুলিং

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বেড়েছে সাইবার বুলিংয়ের চর্চা। পোস্ট ভালো হোক বা খারাপ, বুলিং করতে হয়তো অনেকেই বসে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৪৪ শতাংশই নিয়মিত অনলাইন হয়রানির শিকার হন।

সাইবার বুলিং হলো এমন একটি বিষয়, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ বারবার ও ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কাউকে হয়রানি, দুর্ব্যবহার বা মজা করে। এটি অন্যদের আত্মসম্মান ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে।

নিরাপদে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার উপায় কী?

নিয়ম মেনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি যেমন উপকৃত হবেন, আবার নেতিবাচক প্রভাবগুলোও কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে দুর্দান্ত এক উপায় হলো, স্ক্রিন টাইম কমানো। স্ক্রিন টাইম কমানোর উপায়-

>> ফোনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোতে সময়সীমা সেট করুন।
>> সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।
>> বন্ধু ও অনুসরণকারীদের তালিকা দেখুন ও যাদের অ্যাকাউন্টগুলো আপনাকে নিজের সম্পর্কে খারাপ বোধ করায় তাদেরকে আনফ্রেন্ড বা আনফলো করুন।
>> সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে গিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা ও সুখ খুঁজুন।
>> মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যক্তিগত সংযোগ ও কার্যকলাপ বাড়ান। ফলে স্ক্রিন টাইম কমবে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

উদ্বেগ, বিষণ্নতা, হতাশা, দুঃখবোধ সবার জীবনেই কখনো না কখনো আসে আবার চলেও যায়। তবে এ সমস্যাগুলো দৈনিন্দিন জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেললে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে মনোবিদের পরামর্শ নিন ও সুস্থ জীবনে ফেরার চেষ্টা করুন।

আজ ৩০ জুন সারাবিশ্বে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব সোশ্যাল মিডিয়া দিবস। ২০১০ সাল থেকে ম্যাশাবল ‘বিশ্ব সোশ্যাল মিডিয়া দিবস’ পালন করা শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ও বিশ্ব যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর ভূমিকার উপর জোর দেওয়ার জন্যই প্রতিবছর ‘বিশ্ব সোশ্যাল মিডিয়া’ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।