বুকে ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙা কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?
সকালে ঘুম ভাঙতেই অনেকে বুকে ব্যথা অনুভব করে। কেউ কেউ হয়তো বিষয়টি অবহেলা করেন। তবে দীর্ঘদিন একই সমস্যায় ভুগলে তা উপেক্ষা করবেন না। কারণ বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যথা করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বুকে ব্যথা নিয়ে জেগে ওঠা মানসিক চাপ বা বদহজমের কারণে হতে পারে। আবার হার্ট অ্যাটাক বা পালমোনারি এমবোলিজমের মতো গুরুতর সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে।
এ কারণে বুকে ব্যথা সবসময় গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। যদি ব্যথা কয়েক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন কোন কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে?
হার্ট অ্যাটাক হলে
যখন আপনার হার্টের পেশিতে অক্সিজেন সরবরাহকারী একটি ধমনী অবরুদ্ধ হয়, তখন আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়। এই ব্লক প্রায়ই রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হয়।
এনজাইনা
এনজাইনার কারণেও বুকে ব্যথা হয়। যা হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। এটি প্রায়শই হৃদয়ে রক্ত বহনকারী ধমনীতে প্লাক তৈরির কারণে ঘটে।
পেরিকার্ডাইটিস
আপনার হৃদপিণ্ডের চারপাশে থাকা থলিতে প্রদাহকে পেরিকার্ডাইটিস বলা হয়। এটি সাধারণত ব্যথা সৃষ্টি করে, যা শ্বাস নেওয়া বা শুয়ে থাকার সময় বেড়ে যায়।
অ্যারিথমিয়াস
যদি আপনার হৃদপিণ্ডের পেশি (মায়োকার্ডিয়াম) স্ফীত হয়, তবে এটি দ্রুত বা অস্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের ছন্দ সৃষ্টি করতে পারে যাকে অ্যারিথমিয়াস বলা হয়।
অর্টিক ডিসেকশন
অর্টিক ডিসেকশন বা ফেটে যাওয়া। এই জীবন-হুমকির অবস্থা তখনই ঘটে, যখন মহাধমনীর ভেতরের স্তরগুলো হৃৎপিণ্ডের প্রধান ধমনী থেকে আলাদা হয়ে যায়।
অ্যাসিড রিফ্লাক্স
অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি) বুকে ব্যথার আরও এক উপসর্গ। পেটের অ্যাসিড গলাকে সংযোগকারী টিউবের মধ্যে ফিরে যাওয়ার কারণে অম্বল হয়। ফলে বুক জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়।
আরও পড়ুন
- যখন-তখন পায়ে ঝিঁঝি ধরে? সমাধান মিলবে যেভাবে
- বেশি মানুষের মাঝে অস্বস্তি হয়, সোশ্যাল অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন না তো?
ডিসফ্যাগিয়া
ডিসফ্যাগিয়া সাধারণত গলার উপরের অংশে বা খাদ্যনালির আরও নীচে থাকে। যা খাবার গিলতে কষ্টকর করে তোলে। এই সমস্যার কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
প্যানক্রিয়াটাইটিস
প্যানক্রিয়াটাইটিসের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। পেটের পেছনে অবস্থিত একটি বৃহৎ গ্রন্থি এটি। যখন এই গ্রন্থি ফুলে ওঠে তখন উপরের পেটে ব্যথা হতে পারে যা বুকেও ছড়িয়ে পড়ে।
পিত্তথলির পাথ
পিত্তথলির পাথর বা যে কোনো প্রদাহের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
পালমোনারি এমবোলিজম
যখন ফুসফুসের একটি ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে ও ফুসফুসের টিস্যুতে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয়, তখন একে পালমোনারি এমবোলিজম বলা হয়। এটি সাধারণত বুকে টানটান ভাব ও ব্যথা সৃষ্টি করে। যা হার্ট অ্যাটাকের মতো অনুভূত হয়।
ঝিল্লি ও বুকের গহ্বরে ফুলে উঠলে
ফুসফুসের চারপাশে থাকা ঝিল্লি ও বুকের গহ্বরের ভিতরের প্রাচীর ফুলে ওঠে তখন বুকে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। কাশি বা শ্বাস নেওয়ার সময় এমন ব্যথা বেড়ে যায়।
পালমোনারি হাইপারটেনশন
পালমোনারি হাইপারটেনশনের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে হার্টবিট বেড়ে যায় ও বুকে একটি আঁটসাঁট অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে।
ফুসফুসের ক্যানসার
ফুসফুসের ক্যানসারের কারণে ফুসফুসে অস্বাভাবিক কোষ বেড়ে যায়। যা ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফুসফুসের ক্যানসার সাধারণত বুকে ব্যথার সৃষ্টি করে, যা গভীর শ্বাস বা কাশির সঙ্গে বেড়ে যায়।
কস্টোকন্ড্রাইটিস
যখন পাঁজরের খাঁচার তরুণাস্থি ফুলে ওঠে তখন একে কস্টোকন্ড্রাইটিস বলে। এই অবস্থার কারণে হার্ট অ্যাটাকের মতো ব্যথা হতে পারে বুকে।
প্যানিক অ্যাটাক
প্যানিক অ্যাটাকের সম্মুখীন হন অনেকেই। তখন বুকে ব্যথার সঙ্গে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ও প্রচুর ঘাম হয়। প্যানিক অ্যাটাকের মধ্যে প্রায়ই মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও তীব্র ভয়ের অনুভূতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বুকে আঘাত লাগা
বুকে আঘাত লাগার কারণেও ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রেও আপনি ঘুম থেকে ওঠার সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
স্ট্রেস হরমোন বাড়লে
পারিবারিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক গবেষণাপত্রে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, অনেক সময়ে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে সকালের দিকে। এ কারণে মাঝে মধ্যে ব্যথা হতে পারে বুকে।
তবে স্ট্রেস হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ নানাভাবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই বুকে ব্যথাকে কখনো অগ্রাহ্য করবেন না। এতে ঘটতে পারে নানা বিপদ।
সূত্র: হেলথলাইন
জেএমএস/এমএস