কেক তৈরি করেই শূন্য থেকে আজ সফল নাফিয়া

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি
জান্নাতুল মাওয়া সুইটি জান্নাতুল মাওয়া সুইটি , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৩:৩০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৪
‘ক্যালোরি ফেস্ট’এর ওনার নাফিয়া

কেক খেতে কে না পছন্দ করেন, এ কথা ভেবেই কেক তৈরিতে আগ্রহী হয়ে পড়েন নাফিয়া। নিজেও কেক খেতে পছন্দ করতেন আর তৈরি করে অন্যদের খাওয়াতেও ভালোবাসতেন। তবে কখনো ভাবেননি কেক তৈরির শখই একদিন তার পেশা হয়ে দাঁড়াবে।

বর্তমানে কাস্টমাইজ কেক তৈরি করে উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ সফল গাজিপুরের জয়দেবপুরের মেয়ে নাফিয়া হাসান। তার হাতে তৈরি কেক কেউ একবার খেলে পরবর্তী সময়ে আবারও অর্ডার দেন বলে জানান তিনি। শূন্য থেকে শুরু করে কেক তৈরি করে আজ প্রতিমাসে তার ইনকাম প্রায় ৪০ হাজার।

মাত্র ৪ বছরেই তিনি অনলাইন ব্যবসায়ে সফল হয়ে উঠেছেন নিজের কেকের কোয়ালিটি প্রমাণ করে। কীভাবে নাফিয়া একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন সেই গল্প ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে।

কেক তৈরি করেই শূন্য থেকে আজ সফল নাফিয়া

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে দিকে ‘ক্যালোরি ফেস্ট’ নামক একটি পেইজ খুলি। তখনও ভাবিনি যে শুধু কেক নিয়েই কাজ করবো। মজার মজার সব খাবার নিয়ে পেইজটি সাজাবো বলে ভেবেছিলাম।’

‘যখন দেখলাম যে কেক নিয়েই আমার ভালো লাগা বেশি, তখন এটি নিয়েই কাজ শুরু করলাম। আমি যেখানে থাকি সেই এরিয়াতে অর্থাৎ, জয়দেবপুরে তখনও কিন্তু সেখানে কাস্টমাইজ কেকের তেমন চল ছিল না। সবাই বেকারির কেকগুলোকেই চিনতো। তারপরও কয়েকটি অর্ডার পেয়ে যায় ভাগ্যগুণে।’

‘এরপর ভাবলাম বেকিং নিয়ে আমার আরও ভালোভাবে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে দক্ষ হওয়া জরুরি। আরও জ্ঞান প্রয়োজন।’ এরপর সে পাঠও চুকিয়ে কেক তৈরিতে মনোযোগ দেন নাফিয়া। এখন দৈনিক প্রায় ১০-১২টি কেক তিনি ডেলিভারি দেন।

কেক তৈরি করেই শূন্য থেকে আজ সফল নাফিয়া

নাফিয়ার তৈরি চকলেট অভারলোড কেকের স্বাদ নাকি অনেকেই পছন্দ করেন। এজন্য এই কেক নিয়ে ব্যাপক সাড়া পান। তার ‘ক্যালোরি ফেস্ট’এ ২০-৩০ ধরনের কেক নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া যে কোনো ডিজাইনের কেক তিনি কাস্টমাইজ করতে পারেন বলে জানান।

সফল উদ্যোক্তার পাশাপাশি নাফিয়ার আরও একটি পরিচয় আছে। বর্তমানে তিনি জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশর একজন লেকচারার। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সমানতালে ব্যবসাও সামলাচ্ছেন। ২০২২ সালের মে মাসে নাফিয়ার বিয়ে হয় সায়মন হোসেনের সঙ্গে। স্বামীও বর্তমানে তার ব্যবসায়ের হাল ধরেছেন।

আর এ কারণে তার স্বামী নিজের চাকরি ছেড়ে ব্যবসায়ে মনযোগী হয়েছেন। এজন্য তিনি দুই মাসের বেকারি ও প্রেস্ট্রি শেফ হিসেবে ইন্টার্নশিপ কোর্স করেছেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। যখন নাফিয়া ইউনিভার্সিটিতে থাকেন, তখন ব্যবসায়ের পুরো দায়িত্বই সামলান তার স্বামী।

কেক তৈরি করেই শূন্য থেকে আজ সফল নাফিয়া

নাফিয়া বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড খুবই সাপোর্টিভ, আর এ কারণেই হয়তো ‘ক্যালোরি ফেস্ট’ এখন কেক লাভারদের কাজ জনপ্রিয়। আমরা দুজনেই সমানভাবে এর পেছনে শ্রম দিচ্ছি। বিয়ের আগে একাই সবটা সামলালেও, বিয়ের পরে দুজনেই ব্যবসা সামলচ্ছি। আর এজন্যই হয়তো এতো ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

ভবিষ্যতে কেকের কোনো শপ খুলতে চান কি না তা জানতে চাইলে নাফিয়া বলেন, ‘এখনো তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। আসলে অনলাইনেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। আর তাতেই আমি সন্তুষ্ট। শপ করলে আমার লোকবলও বেশি লাগবে, সেক্ষেত্রে কেকের মানেও কমতি হতে পারে। ‘ক্যালোরি ফেস্ট’ এর কেক যেভাবে সবাই পছন্দ করেন, সেক্ষেত্রে এর মান বজায় রাখা আমার দায়িত্ব।’

আরও পড়ুন

আত্মবিশ্বাস নিয়ে নাফিয়া বলেন, ‘আমার কেকের কাস্টমাররা এতোটাই ভালো আর আমার প্রতি আস্থাশীল যে বিভিন্ন সময়ে তারা ‘ক্যালোরি ফেস্টে’র কেকই কেনেন।’ এছাড়া ক্রেতাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন সময় ছাড়ও দেন নাফিয়া।

তিনি জানান, তার ‘ক্যালোরি ফেস্ট’এ ৪০০ থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকা কিংবা আরও বেশি দামেরও কাস্টমাইজ কেক পেতে পারেন। তা আসলে নির্ভর করবে কেকের ফ্লেভার, এর সাইজ ও নকশার উপর।

নাফিয়ার ব্যবসায়িক জোনটি মূলত গাজিপুরের জয়দেবপুর। এর বাইরে তিনি কেক ডেলিভারি দিতে পারেন না। আর এটিই তার ব্যবসায়ের মূল বাঁধা বলে জানান তিনি। আসলে কেক যেহেতু বেশি দূরে ডেলিভারি করাটা বেশ ঝক্কির কাজ, আর নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এ কারণে নাফিয়া শুধু জয়দেবপুরের ভেতরেই কেকের অর্ডার নেন।

কেক তৈরি করেই শূন্য থেকে আজ সফল নাফিয়া

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আবহাওয়া আর ডেলিভারির কারণেও ব্যবসায়ে মন্দা যায়। গরমের দিনে কেক ডেলিভারির সময় বাইরে যানজটে থাকলে কেক গলে যাওয়ার ভয় থাকে। আর দূরে হলে তো কথায় নেই। এজন্য মৌসুমভেদেও ব্যবসায়ে ঝুঁকি থাকে। এটিই মূলত আমার ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় রিস্ক ফ্যাক্টর।’

নতুন উদ্যোক্তাদেরকে বার্তা দিতে গিয়ে নাফিয়া বলেন, ‘ইউনিক আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে সব সময়ই ভালো সাড়া পাওয়া যায়। তবে ভুলেও কখনো কারও আইডিয়া চুরি করে বা কপি করে নিজে সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন না।’

‘সব সময় নিজের পণ্যের কোয়ালিটি কীভাবে অন্যদের চেয়ে ভালো রাখবেন তা নিয়ে কাজ করুন। তাহলেই সফলতা ধরা দেবে। আপনার কাস্টমাররাই আপনাকে খুঁজে নেবে, বুস্টিং করে কাস্টমার ধরে আনতে হবে না।’

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।