রাজশাহীর জনপ্রিয় উজ্জ্বল মামার ছোট ডালপুরি
রাজশাহীতে আছি প্রায় তিনদিন ধরে। কোনো কাজে না, মূল উদ্দেশ্য হলো ঘোরাঘুরি। আমি যেখানেই যাই সেখানকার দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রিয় খাবার খাওয়ারও চেষ্টা করি।
রাজশাহীতে কালাই রুটি, কাটাখালির কালা ভুনার পাশাপাশি নাকি ছোট ডাল পুরিও খুব জনপ্রিয় খাবার। এক বড় ভাই আমাকে এই পুরি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন ও লোকেশনও জানিয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: অবিবাহিতদের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি: গবেষণা
ভাইয়ের কথা মতো আমি ও আমার বন্ধু জাহিদ মিলে গেলাম সেই ডাল পুরি খেতে। প্রথমে শহরের সাহেব বাজার থেকে ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে একটি অটোরিকশা ঠিক করলাম আমচত্বর পর্যন্ত।
আমচত্বরে যাওয়ার পর নাটোর রোডের ধারে ম্যাগপাই হোটেলের সামনে একটি আম গাছের নিচে পেয়ে গেলাম সেই দোকান। খেয়াল করলাম, অন্যান্য দোকানের তুলনায় সেখানে বেশ ভিড় জমেছে।
গিয়েই দেখলাম, এক কারিগর হাত দিয়ে পুরিগুলো বানাচ্ছেন, আরেকজন তেল গরম করছেন। দেখেই জিভে জল চলে এলো। দ্রুত অর্ডার দিলাম ১৫টি পুরির।
আরও পড়ুন: কোন ডাবে পানি বেশি চিনবেন যেভাবে
প্রায় ৫ মিনিট পরে আসলো গরম গরম মচমচে ডাল পুরি। খেতে খেতে কথা হয় দোকানের মালিক উজ্জ্বল হাসানের সঙ্গে। এখানকার সবাই তাকে উজ্জ্বল মামা হিসেবেই চেনেন।
গল্পের ছলে জানতে পারলাম, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে রাজশাহীর এই আমচত্বরে ছোট পুরি বানান। তিনিই নাকি রাজশাহী শহরে প্রথম এই ছোট পুরি বানানো শুরু করেছেন।
প্রতিদিন তিনি যোহরের নামাজের সময় দোকানে আসেন। এরপর মসলাপাতিসহ নানা আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র রেডি করতে আসরের সময় হয়ে যায়। তখন তিনি পুরি ভাজা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ব্রেকআপের পর না কেঁদে যে ৫ কাজ করা জরুরি
আসর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভাজেন এই পুরি। দুই টাকা পিছ হিসেবে সেগুলো বিক্রি করেন তিনি। আসর থেকে রাত ১০টার মধ্যেই তিনি প্রায় ৫-৭ হাজার টাকার এই ডাল পুরি বিক্রি করেন।
উজ্জ্বল মামা এই পুরির পাশাপাশি পেঁয়াজু, বেগুনি ও চা বিক্রি করেন। তবে তার দোকান জনপ্রিয় এই ছোট ডাল পুরির জন্য। কথা বলতে বলতে আরও ১০ পিছ পুরি নিয়েও খেয়ে ফেললাম।
আবারও ১০ পিছ পুরি নিলাম। একবার খেলে আবারও খেতে ইচ্ছে করে এই পুরি। এজন্যই হয়তো এই পুরি এতো জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন: কোমলপানীয় পান করেই বেঁচে আছেন ১৭ বছর!
কেন এতো জনপ্রিয় উজ্জ্বল মামার এই ছোট পুরি? জানতে চাইলে উজ্জ্বল মামা বলেন, ‘জনপ্রিয় কেন তা বলতে পারবো না। তবে প্রতিদিন মানুষের মুখে শুনে অনেকেই খেতে আসেন। তারাই মূলত আমার প্রচারক হিসেবে কাজ করেন। খাবার ভালো না হলে তো আর কেউ এখানে আসবেন না তাই না ‘
এখানে পুরি খেতে আসা জিয়া রহমান নামের এক যুবক বলেন, ‘আমি রাজশাহীর না হলেও পড়াশোনা করেছি এখানে, চাকরিও করি এখানে। সেই সুবাদে প্রায় ১০ বছর রাজশাহীতে থাকা।’
‘প্রায় ১০ বছর ধরেই মামার এই পুরি খাই। বন্ধুবান্ধব আসলে তাদেরকেও এই পুরি খাওয়াই। আমার কাছে এই পুরি খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন খাই তারপরও বিস্বাদ লাগে না। মামার এ পুরি এদিকে খুবই জনপ্রিয়।’
আরও পড়ুন: বেশিক্ষণ টিভির সামনে বসে থাকলে বাড়ে হৃদরোগ ও মৃত্যুঝুঁকি: গবেষণা
মসুরের ডাল সেদ্ধ করে বিভিন্ন রকমের মসলা যোগ করে ময়দার গোলার ভেতরে তা দিয়ে ডুবন্ত গরম তেলে ভেজে এই পুরি তৈরি করা হয়। আকারে খুবই ছোট এই পুরি। মুখে একবারে পুরোটা পুরে দেওয়া যাবে।
পুরি সাধারণত তরকারির ঝোল দিয়ে, টক দিয়ে বা মিষ্টির রস দিয়ে খেলেও এই পুরি খেতে কিছুই লাগে না। শুধু শসার সালাদ দিয়েই খাওয়া যায় এই পুরি। মামার সঙ্গে কথা বলা শেষ করে আরও ৫টি পুরির অর্ডার দেই।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/জেআইএম