ঢেঁকি আজ শুধুই স্মৃতি!
‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া/ ঢেঁকি নাচে, আমি নাচি, হেলিয়া দুলিয়া/ ও ধান ভানিরে’—গ্রামবাংলার এ গান ঢেঁকির অস্তিত্ব জানান দেয়। ঢেঁকিতে ধান ভানা, চাল গুঁড়া করা, চিড়া কোটা আবহমান গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ ছিল। ঢেঁকির রাজত্ব ছিল গ্রামবাংলার প্রতিটি জনপদে।
ঢেঁকি ছিল গ্রামীণ জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। গ্রামীণ জনপদে চাল গুঁড়া করা ও আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম যেন কল্পনা করাও কঠিন ছিল। যেখানে বসতি; সেখানেই ঢেঁকি। উৎসব-পার্বণে ধান থেকে আতপ চাল তৈরি করতে, পিঠা বানাতে, চালের গুঁড়া তৈরি করতে গ্রামের গৃহস্থ ঘরে ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ শোনা যেত।
আত্মীয়-স্বজন একসঙ্গে ঢেঁকিতে বারা ভেনে গাইতেন গান। সাধারণত ২-৩ জন নারী ঢেঁকিতে কাজ করেন। ১-২ জন মুষল উত্তোলনের জন্য ধড়ের এক প্রান্তে পা দিয়ে পালাক্রমে চাপ দিয়ে থাকেন। পা সরিয়ে নিয়ে মুষলকে নিচে পড়তে দেন। অপর নারী বৃত্তাকার খোঁড়ল থেকে চূর্ণীকৃত শস্য সরিয়ে নেন। তাতে নতুন শস্য সরবরাহ করেন। মুষলের আঘাত ধারণ করার জন্য খোঁড়লটি কাটা হয় মাটিতে বসানো এক টুকরা শক্ত কাঠের গুঁড়িতে।
আরও পড়ুন: নব্বই দশকের জনপ্রিয় যত কার্টুন সিরিজ
ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার কাজ খুবই শ্রমসাপেক্ষ। বাড়িতে মেহমান এলে ঢেঁকির কদর বেড়ে যেত। যাদের বাড়িতে ঢেঁকি নেই, তারাও শরণাপন্ন হতেন গৃহস্থের বাড়িতে। গৃহস্থ বাড়ির নারীরা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তখন কদরও ছিল ঢেঁকির। গরিব নারীরা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে রোজগারও করতেন। ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র নারীর আয়ের প্রধান উৎস।
ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধানুকিতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য। বর্তমান যুগে রাইস মিলে ও দোকানে ধান ভানছে সবাই। যে কারণে গ্রামের অসহায় ও অভাবগ্রস্ত নারীরা যারা ধান ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারাও আজ বয়োজ্যেষ্ঠ।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না ঢেঁকির নাম। গ্রামের দুই একটি বাড়িতে ঢেঁকি দেখা গেলেও সেটি পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। ঢেঁকির দেখা মেলে এখন সিনেমা-নাটকে, জাদুঘরে কিংবা কোন প্রদর্শনীতে।
এসইউ/এএসএম