স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হলে যে রোগের ঝুঁকি বাড়ে
প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই কখনো না কখনো ঝগড়া বা অশান্তি হয়। আসলে ছোটখাট কলহ কিংবা মান-অভিমান দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও শক্ত ও মজবুত করে। তবে প্রায়ই ঝগড়ার প্রবণতা কিন্তু সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে, এমনকি কঠিন ব্যাধি যেমন হৃদরোগ থেকে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে দম্পতির মধ্যে।
সাইকোলজি টুডের এক প্রতিবেদন অনুসারে, একটি বিষাক্ত বা টক্সিক সম্পর্কে থাকার কারণে নারী-পুরুষ উভয়েরই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও অশান্তি শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর জানলে চমকে উঠবেন-
আরও পড়ুন: নারীরা যা গোপন করেন স্বামীর কাছে
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে
চাপযুক্ত সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেন, বিবাহিতদের মধ্যে দাম্পত্য রেষারেষি ও নিত্য কলহের কারণে পুরুষদের মধ্যে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নারীদের রক্তচাপও বাড়তে পারে তবে পুরুষের চেয়ে কম।
মানসিক অবসাদ বাড়ে
দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে উঠলে তা দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী চাপ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস ইমিউন সিস্টেমের স্বাস্থ্য, থাইরয়েড ও মেজাজের ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রদাহ বাড়ে
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ শরীরে উচ্চ মাত্রার প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। হার্ভার্ড হেলথের মতে, মানসিক উত্তেজনার কারণে শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে পারে। যা ক্রমেই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।
আরও পড়ুন: ৩০ পেরিয়েও ‘সিঙ্গেল’? মনের মানুষ খুঁজে পাবেন যেভাবে
সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন জার্নালে প্রকাশিত ২০১৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, স্ট্রেস উল্লেখযোগ্যভাবে ইমিউন সিস্টেমকে পরিবর্তন করে ও প্রদাহ বাড়ায়।
বিষণ্নতা বাড়ে
দাম্পত্য জীবন ভালো না থাকলে যে কারও বাড়বে বিষণ্নতার ঝুঁকি। মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশনের গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি বিষাক্ত সম্পর্কে থাকার চেয়ে অবিবাহিত হওয়া ভালো।
গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিকভাবে কোনো মানুষ প্রত্যাখ্যাত হলে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (এমডিডি) এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। দাম্পত্যে অশান্তি কিংবা বিচ্ছেদের কারণেও মানসিক এই সমস্যায় ভুগতে পারেন যে কেউই।
আরও পড়ুন: পুরুষের চেয়ে নারীরা কেন ‘ভুলে যাওয়া’ রোগে বেশি ভোগেন?
আয়ুও কমে যেতে পারে
দীর্ঘমেয়াদী দাম্পত্যে অশান্তি আয়ুও কমিয়ে দিতে পারে। দাম্পত্যে সুখী থাকলে যেমন আয়ু বাড়ে ঠিক তেমনই এর উল্টোটি ঘটে একটি বিষাক্ত সম্পর্কের মধ্য দিয়ে জীবন কাটালে।
মানসিক চাপ মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করে দেয়। ফলে অস্বাস্থ্যকর খাওয়া, মাদকাসক্ত, কম ঘুম, মানসিক চাপ ইত্যাদি শারীরিক বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
২০১৬ সালে প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের রিপোর্ট করা এক সমীক্ষায় জানা যায়, সামাজিক সম্পর্ক ও মৃত্যুহারের মধ্যে সম্পর্ক আছে।
সামাজিক চাপের সম্মুখীন ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স বাড়তেই স্ট্রেসসম্পর্কিত রোগ ও প্রদাহের ঝুঁকি বেশি। যা অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: নারী-পুরুষের মধ্যে কার চুলকানি বেশি?
ওজন বেড়ে যায়
সাইকোলজি টুডেতে প্রকাশিত এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, যারা ব্যক্তিগত জীবনে খুশি নন কিংবা দাম্পত্য কলহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।
ফলে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো স্থূলতা-সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। গবেষকরা ১১ বছর ধরে ৮০০০ মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য জানান।
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
বিষাক্ত সম্পর্কের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। দ্য জার্নাল অব জেরোন্টোলজি: সিরিজ বি’তে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ায় যা অনেক গবেষণায় দেখা গেছে। দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগলে তা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষতি করতে পারে ।
আরও পড়ুন: শরীরের গন্ধেই নাকি প্রেম বাড়ে-কমে, জানালো সমীক্ষা
সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা জানাচ্ছে, ‘ডিভোর্সি নারী-পুরুষের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি ও মৃত্যুহার বেশি।’
এছাড়া মানসিক চাপের কারণে শারীরিক আরও যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হলো- মাথা ঘোরা, শরীর ব্যথা ও যন্ত্রণা, মাথাব্যথা, পেশিতে টান, ঘুমের সমস্যা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, চরম ক্লান্তি, পেট খারাপ কিংবা কাঁপুনি।
সূত্র: হেলথ ডাইজেস্ট
জেএমএস/এএসএম