হাঁপানির লক্ষণ ও ইনহেলার ব্যবহারের সঠিক উপায় জানুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ০২ মে ২০২৩

হাঁপানি বা অ্যাজমার সমস্যায় শুধু বয়স্করাই ভোগেন না, কমবয়সীদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদী এই ব্যাধি দেখা দিতে পারে। হাঁপানি মূলত শ্বাসনালির প্রদাহজনিত রোগ। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শ্বাসকষ্ট।

হাঁপানি রোগীদের যখন-তখন হতে পারে শ্বাসকষ্ট। যখন শ্বাসনালি ফুলে ও সংকীর্ণ হয়ে যায়, তখন শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ফলে ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন চলাচল করতে পারে না। আর এ কারণেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাঁপানি একটি মারাত্মক রোগ হলেও অনেকেরই এ নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই।

আরও পড়ুন: যে ৫ কারণে ধূমপান ছাড়তে বলেন বিশেষজ্ঞরা

প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার বিশ্ব অ্যাজমা দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘সবার জন্য হাঁপানি যত্ন’। সব শ্রেণি ও অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের জন্য হাঁপানি সম্পর্কিত চিকিৎসা ও যত্ন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই হলো এ দিবসের মূল লক্ষ্য।

হাঁপানিতে ভুগছেন কি না বুঝবেন যেসব লক্ষণে

বুকে শোঁ শোঁ শব্দ

প্রদাহের কারণে যখন শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায় তখন হাঁপানির টান ওঠে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। তাই শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় বুকে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে।

প্রচণ্ড কাশি

কাশি হাঁপানির অন্যতম লক্ষণ। ধুলা-বালি, কুয়াশা, ধোঁয়ার কারণে হাঁপানির ঝুঁকি বাড়তে পারে। যখন এই মাইক্রো-পার্টিকেল শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে, তখনই জ্বালা ও প্রদাহ হয়। ফলে কাশি হয়।

আরও পড়ুন: অ্যালার্জি কেন হয়? কোন অ্যালার্জিতে ভুগছেন বুঝে নিন লক্ষণে

এমনকি হাঁপানির ফলে কাশি হলে তা সহজে সারতে চায় না। শীতকালে এমন রোগীদের কাশির সমস্যা আরও বাড়তে পারে। হাঁপানির কারণে হওয়া গুরুতর কাশির সমস্যাকে কফ-ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমা বলা হয়।

বুকে চাপ অনুভব করা হাঁপানির আরও একটি লক্ষণ হলো বুকে চাপা ভাব অনুভূত হওয়া। এক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হয় ফলে বুকের মধ্যে টান বাড়ে ও চাপাভাব অনুভব হয়।

ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া

দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া হাঁপানির আরও একটি লক্ষণ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টের সময় ফুসফুস থেকে সম্পূর্ণরূপে বাতাস বেরিয়ে যায়, ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই দ্রুত শ্বাস নিতে বাধ্য হন।

আরও পড়ুন: ওষুধ ছাড়াই কাশি সারানোর উপায় জানালেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ

এসব লক্ষণ ছাড়াও কথা বলতে সমস্যা, দুশ্চিন্তা কিংবা অস্থিরতা, অত্যাধিক ঘাম ও ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হাঁপানির ইঙ্গিত দেয়।

হাঁপানি বেড়ে যায় কেন?

বিভিন্ন কারণে হাঁপানি বাড়তে পারে। তার মধ্যে সম্ভাব্য কিছু কারণ হলো- ভাইরাল ইনফেকশন, অ্যালার্জেন (যেমন- ঘরের ধুলোর মাইট, পরাগ, তেলাপোকা), অভ্যন্তরীণ ও বাইরের দূষণ, তামাকের ধোঁয়া, ব্যায়াম, মানসিক চাপ ও কিছু ওষুধ।

হাঁপানির চিকিৎসা কী?

এ বিষয়ে ভারতের গুরুগ্রামের পারস হেলথের পালমোনোলজি অ্যান্ড রেসপিরেটরি মেডিসিনের হেড ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. অরুণেশ কুমার বলেন, ‘হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি ব্যাধি।’

আরও পড়ুন: হৃদরোগ ছাড়াও বুকে ব্যথা হতে পারে যে কারণে

‘এর কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই। তবে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এর গুরুতর লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য রোগীকে জীবনধারণে পরিবর্তন আনা’সহ একাধিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।’

ডা. কুমার আরও বলেন, ‘হাঁপানি চিকিৎসার অন্যতম উপায় হলো ইনহেলারের ব্যবহার। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার ব্যবহারে হাঁপানি রোগীর স্বস্তি মেলে।’

‘ইনহেলারগুলোতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ওষুধ যেমন- কর্টিকোস্টেরয়েড, লং-অ্যাক্টিং বিটা-অ্যাগোনিস্ট, শর্ট-অ্যাক্টিং বিটা-অ্যাগোনিস্ট ও অ্যান্টিকোলিনার্জিকস।’

আরও পড়ুন: রাত হলেই কেন বাড়ে হাঁপানি?

‘রোগীর বয়স, হাতের মুখের সমন্বয়, আর্থিক অবস্থা, রোগীর পছন্দ ও রোগীর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসকরা রোগীকে ইনহেলার সাজেস্ট করতে পারেন।’

সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম

ডা. কুমারের মতে, ইনহেলার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি অনেকেরই জানা নেই। এক্ষেত্রে ইনহেলারের পাফ নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এর ভেতরে থাকা ওষুধটি ফুসফুসে পৌঁছায়।

না হলে শ্বাসকষ্ট সহজে কমবে না। সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ইনহেলার হলো, মিটারড ডোজ ইনহেলার। যা পাফার নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন: শিশুর অ্যাজমার মারাত্মক লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

ইনহেলার ব্যবহার করার আগে সেটি ভালোভাবে ঝাঁকান। এরপর পুরোপুরি শ্বাস ছাড়ুন ও ইনহেলারটিকে স্পেসারের শেষে খোলার মধ্যে ফিট করুন।

সবশেষে ইনহেলার মুখে লাগিয়ে পাফ করুন ও যতটা সম্ভব গভীরভাবে শ্বাস নিন। এরপর এবার ৫-১০ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।

আরেক ধরনের ইনহেলার হলো একটি অটোহেলার, যা শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে সক্রিয় হয়। একটি অটোহেলার ব্যবহার করার পূর্বেও সেটি ভালোভাবে ঝাঁকান। এরপর সম্পূর্ণরূপে শ্বাস ছাড়ুন।

আরও পড়ুন: শীতে কেন বাড়ে অ্যাজমা বা হাঁপানি? নিয়ন্ত্রণে যা করবেন

অটোহেলারটিকে সঠিক অবস্থানে রাখুন। ধীরে ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিন, যতক্ষণ না সম্পূর্ণ শ্বাস নিচ্ছেন। এরপর ১০ সেকেন্ড ধরে রেখে শ্বাস ছাড়ুন। আপনি যদি সঠিক উপায়ে ইনহেলার ব্যবহার করতে না পারেন। তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই বিশেষজ্ঞের মতে, ইনহেলার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সরাসরি শ্বাসনালিতে ওষুধ পৌঁছে দেয় ও রোগীদের তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেয়। যেহেতু এটি হালকা ও বহনযোগ্য, তাই সব সময় সঙ্গে রাখারও সহজ।

সূত্র: বোল্ডস্কাই/ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।