শীতে পিঠা বিক্রি করেই আবু বক্করের মাসে আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা
রাত তিনটা। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার প্রোগ্রাম শেষ করে হোটেলে ফিরছি। শীতের তীব্রতা আর রাতের গভীরতায় রাস্তাঘাট যেনো একদম নিস্তব্ধ। কোনো প্রাণী নেই বাইরে।
হোটেলে যেতে যেতে হঠাৎ এক জায়গায় দেখলাম বেশ কয়েকজন লোক একটি দোকানকে ঘিরে জড়ো হয়ে আছে। দোকানের উনুঁনে জ্বলছে আগুন।
এই দৃশ্য দেখে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। নেমে গিয়ে দেখলাম দোকানে এক ধরনের পিঠা ভাজছে আর লোকজন সেই পিঠা খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। পেট ভরা থাকা সত্ত্বেও স্বাদ ও অভিজ্ঞতা নিতে আমিও অর্ডার দিলাম সেই পিঠা।
প্রথমে মনে হলো ডিম ভেজে কেটে কেটে বিক্রি করছেন। পরে লক্ষ্য করলাম শুধু ডিম না, গরম তাওয়ায় সরিষার তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুঁচি আর মরিচ দিয়ে ডিম ঢেলে তার ভেতর আটার রুটি দিয়ে রোল করছে।
তারপর ছোট ছোট করে কেটে বিশেষ এক ধরনের মসলা দিয়ে প্লেটে খেতে দিচ্ছেন। এসব কিছু করতে সময় লাগছে মাত্র দু-তিন মিনিট। আমিও খেতে লাগলাম। অনেক সুস্বাদু এই ডিম পিঠা।
খেতে খেতে কথা হয় দোকানের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে দুপচাঁচিয়ার থানা মোরে মেইন রোডের ধারে এই পিঠা বিক্রি করছেন তিনি।
শুধু শীতের সময়ই চলে তার এই পিঠার ব্যবসা। সন্ধ্যা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে তার এই পিঠা বিক্রি। আর এই রাতের ভেতরেই তিনি প্রায় ৬-৭ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন।
আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার সদরের ধাপ সুখানগাড়িতে। বয়স ৫৫। অভাবের সংসারে পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। ছোট থেকেই গাড়ির লেবার, হেল্পারি করতেন।
একসময় বিয়ে করে সংসারি হোন। সংসারের কৃষিকাজ করেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হয়। তাই বিভিন্ন মৌসুমি ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
আবু বক্কর বলেন, ‘এক কাজ করে সংসার চলে না। তাই এর পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ব্যবসা করি। আমের সময় আমের ব্যবসা, বরইয়ের সময় বরই। ধাপের হাটে পানের ব্যবসাও করি’।
আর এসব ব্যবসায় সঙ্গী হয় আবু বক্করের ছেলে সাইদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমি দিনে আব্বার ব্যবসা করি। না হয় সন্ধ্যায় আব্বার এই রুটির দোকানে বসি।’
কথা বলতে বলতে পিঠার ব্যবসা সামলাচ্ছেন আবু বক্কর। মনে হয় তার হাতে জাদু আছে। সেই জাদুর কারিশমায় দুই এক মিনিটে ভাজছেন পিঠাগুলো। এরই মধ্যে ১০-১৫ জন ক্রেতাকে বিদায় করলেন।
এ পিঠার অধিকাংশ ক্রেতা টহল পুলিশ, রাতের যাত্রী, ট্রাকের ড্রাইভার, হেলপার, কুলি মজুরসহ নানা শ্রেণি পেশার লোক।
আমার পিঠা খাওয়া শেষ। আরেকটা অর্ডার দিলাম পার্সেল করে নিয়ে হোটেলে গিয়ে খাবো বলে। দাম কত হলো জিজ্ঞাস করলে, ‘তিনি বলেন ২৫ টাকা করে। আপনার হয়েছে ৭৫ টাকা’।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এএসএম