শরীরের কোন কোন অঙ্গে পাথর জমে বেশি?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩৬ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

শরীরে বিভিন্ন স্থানে পাথর জমার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। বিশেষ করে কিডনি, গলব্লাডার, মূত্রাশয় কিংবা প্রোস্টেটে পাথর জমার সমস্যা সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন!

তবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমতে পারে পাথর, এ বিষয়ে হয়তো অনেকেরই ধারণা নেই। শরীরের কোন কোন স্থানে পাথর জমতে পারে, এ সম্পর্কে জানা থাকলে ও লক্ষণে অবগত হলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমেই সুস্থতা মিলবে। জেনে নিন শরীরের কোন কোন স্থানে পাথর জমে বেশি-

কিডনি

কিডনিতে পাথর জমার সমস্যাতেই বেশিরভাগ মানুষ ভোগেন। ক্যালসিয়াম, অক্সালেট’সহ নানা ধরনের খনিজের মাধ্যমে মূত্রনালিতে পাথর জমে। এক্ষেত্রে নিতম্ব ও পাঁজরের কাছে ও পিঠে ব্যথার সৃষ্টি হয়।

প্রস্রাব ব্লক করার জন্য যথেষ্ট বড় হয়। প্রস্রাবে রক্ত বা পাথরের টুকরো দেখতে পেলে দ্রুত সতর্ক হতে হবে। যদিও ছোট পাথরগুলো মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, তবে বড়গুলো থেকে মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

গলা

টনসিলের সমস্যায় ছোট-বড় সবাই কমবেশি ভোগেন। টনসিল হলো গলার পেছনের টিস্যুর দুটি পিণ্ড যা জীবাণুকে ফিল্টার করতে সাহায্য করে।

খাদ্য, মৃত চামড়া বা অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ সেখানে ধরা পড়ে ও শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হতে পারে, যাকে ‘টনসিলোলিথ’ বলা হয়।

গলাব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস ও গলার ভেতরে সাদা দাগ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে গিলেতে গেলে গলায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। টুথব্রাশ বা তুলা দিয়েই আলতো করে এই পাথর বের করতে পারবেন।

এছাড়া লবণ পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন। যদি এতেও টনসিলের পাথর দূর না হয় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।

মূত্রাশয়

দীর্ঘক্ষণ প্রসাব আটকে রাখার কারণে ও সময়মতো প্রস্রাব না করা হলো মূত্রাশয়ে জমতে পারে পাথর। এই পাথরগুভাবে নিজেরাই তৈরি হয়, আবার একটি ছোট পাথর কিডনি থেকে মূত্রাশয়ে নেমে যাওয়ার পরে বড় হতে পারে।

মেঘলা বা রক্তাক্ত প্রস্রাব এর লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া প্রস্রাব করার সময় নীচের পেটে ব্যথা হওয়ার লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি সার্জারি বা ওষুধ দিয়েও চিকিত্সা করা যায়, আবার শব্দ তরঙ্গ বা লেজার দিয়েও মূত্রাশয়ের পাথর ভেঙে নেওয়া চিকিৎসা পাবেন।

গলব্লাডার

উপরের ডান পেটের এই ছোট অঙ্গ পিত্ত নামক একটি পাচক রস সঞ্চয় করে। কোলেস্টেরল ও পিত্তে বিলিরুবিন নামক একটি যৌগ পিত্তথলির পাথরের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পেটে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়। পাথরের কারণে ব্যথা হলে পিত্তথলি কেটে বাদ দেওয়ার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রোস্টেট

পুরুষদের মূত্রাশয়ের কাছে একটি ছোট গ্রন্থি থাকে, যা শুক্রাণু রক্ষার জন্য তরল তৈরি করে। এখানে যে পাথরগুলো তৈরি হয় সেগুলো প্রায় পপি বীজের আকারের হয়। মধ্যবয়সী বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে দেখা দেয় এ সমস্যা।

যদিও প্রথমদিকে প্রোস্টেটের পাথরের কারণে তেমন উপসর্গের সৃষ্টি হয় না। তবে কখনো কখনো এই পাথরগুলো সংক্রমণের কারণ হয়। ফলে প্রোস্টেটে যন্ত্রণা বাড়ে ও মূত্রনালির সমস্যা দেখা দেয়। এর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

মুখ

অনেকেই হয়তো জানেন না, আপনার মুখের ভেতরেও পাথর হতে পারে। এক্ষেত্রে মুখের ভেতরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় ও খাবার খাওয়াও কষ্টকর হতে পারে।

এই পাথরের কারণে লালা চ্যানেলের টিউবগুলো ব্লক হয়ে যায়। জিহ্বার নীচে সাদা পাথরের দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।

এটি সাধারণত গুরুতর নয়। বেশি করে পানি পান করলে কিংবা টক কিছু পান করলেই এই পাথর বেরিয়ে আসবে।

অগ্ন্যাশয়

পেটের মাঝখানের এই অঙ্গ হরমোন তৈরি করে, যা খাবার হজম করতে ও রক্তে শর্করাকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। পাথর গলব্লাডার থেকে পিত্তনালির মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ে যেতে পারে ও সেখানে প্রদাহহের সৃষ্টি করে।

এক্ষেত্রে জ্বর, দ্রুত স্পন্দন, বমি বমি ভাব ও পেটে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। খাওয়ার পর লক্ষণ আরও গুরুতর রূপ ধারণ করে ও ব্যথা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। যদি পাথরটি নিজে থেকে না যায় তাহলে পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার এটি বের করতে অপারেশন করতে পারেন।

নাক

নাকের ভেতরে পাথর জমার ঘটনা বিরল হলেও, শিশু থাকা অবস্থায় অনেকেরই নাকে শক্ত কিছু আটকে যাওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে এমনটি ঘটে। বছরের পর বছর ধরে ওই পাদার্থ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লোহার মতো খনিজকে আকর্ষণ করে ও তা বড় হতে থাকে।

এ কারণে নাকে ব্যথা বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যা শুধু নাসারন্ধ্র থেকে নিষ্কাশিত হয়। ডাক্তার একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক পরীক্ষা করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

শিরা

শিরা স্বাভাবিকভাবে যখন বৃদ্ধি পায় না, তখন দুর্বল দাগ, বাম্প ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ত্বকে ব্যথা ও বিবর্ণতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে মুখ, ঠোঁট, গাল, মাথা ও ঘাড়ের চারপাশে।

শিরায় পাথর হলে রক্ত সেই জায়গাগুলোতে আরও ধীরে ধীরে চলে, অবশেষে জমাট বাঁধে ও শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হয়। উপসর্গ বুঝে চিকিৎসক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করেন।

পেট

ডাইভার্টিকুলাইটিস বা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের মতো অসুস্থতা তাদের কারণে পেটেও হতে পারে পাথর। বংশে কারও এ সমস্যা থাকলে বা পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচারের কারণে আপনার পেট ও অন্ত্রে পরিবর্তনের কারণেও পাথর জমতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে এই পাথর বের করা হয়।

সূত্র: ওয়েব এমডি

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।