কোন স্থানের মাথাব্যথা কোন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়
মাথাব্যথার সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। সর্দি, মানসিক চাপ বা ডিহাইড্রেশন যে কোনো কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। সবারই কিন্তু একই ধরনের মাথাব্যথা হয় না।
কারও হয়তো চোখের আশপাশে আবার কারও ঘাড়ে ও মাথার পেছনের দিকে কিংবা কারও কারও কপালের দুপাশে প্রচণ্ড মাথা হয়।
অনেকেরই ধারণা নেই যে বেশ কয়েক ধরনের মাথাব্যথা আছে, আর কোন অংশে মাথাব্যথা করছে তার উপরই নির্ভর করে ঠিক কী কারণে তা ঘটছে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কোন অংশের মাথাব্যথা কীসের ইঙ্গিত দেয়-
চোখের চারপাশে ব্যথা
চোখের মধ্যে চারপাশে যে ব্যথা হয় তা সাধারণত ক্লাস্টার মাথাব্যথার একটি লক্ষণ। ক্লাস্টার মাথাব্যথা খুবই অস্বাভাবিক বলা হয়, তবে এটি মাথাব্যথার সবচেয়ে গুরুতর রূপগুলোর মধ্যে একটি।
মায়ো ক্লিনিকের মতে, এমন ব্যথা হঠাৎ করেই তীব্র আকার ধারণ করে। একটানা ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এই ব্যথা।
চোখের মধ্যে ও চারপাশে, ঘাড়, গাল, নাক, ঘাড় বা কাঁধ পর্যন্ত বিকিরণ করতে পারে এই ব্যথা। সাধারণত কোনো একপাশেই এই ব্যথা হয়।
সাইনাসে ব্যথা
সাইনাস মাথার খুলির ফাঁকা জায়গা যা কপাল, নাকের হাড়, গাল ও চোখের পেছনে অবস্থিত। সাইনাসের মাথাব্যথা সাধারণত মাইগ্রেনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সাইনাসে সংক্রমণের সমস্যাকে বলা হয় সাইনোসাইটিস।
মায়ো ক্লিনিকের তথ্যমতে, গাল, ভ্রু, কপালে ব্যথা ও চাপ ধরে থাকার অনুভূতি হয় এই ব্যথার ক্ষেত্রে। পাশাপাশি নাক, চোয়াল ও উপরের দাঁতেও ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
মাথার উপরে ব্যথা
মাথার উপরে ব্যথা অনুভব করার অর্থ হলো আপনি টেনশনে ভুগছেন। একে টেনশন হেডেক বলা হয়। টেনশনের মাথাব্যথা হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মাথাব্যথা, যা হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা হতে পারে ও প্রায়ই তা ঘটে। সপ্তাহে কয়েকবার পর্যন্ত হতে পারে এই ব্যথা।
টেনশনের মাথাব্যথা কপাল জুড়ে বা মাথার পাশে ও পেছনে চাপের অনুভূতি সৃষ্টি করে। মনে হয় যেন একটি টাইট ব্যান্ড আপনার মাথার চারপাশে চেপে ধরেছে।
ঘাড় ও মাথার পিছনে ব্যথা
যে মাথাব্যথা ঘাড় থেকে শুরু হয় ও পেছনের দিকে বিকিরণ করে তা সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথার ইঙ্গিত দেয়। সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা হলো সেকেন্ডারি মাথাব্যথা। এটি অন্য অসুস্থতা বা শারীরিক অবস্থার কারণে হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ হতে পারে এই মাথাব্যথা। ফলে ঘাড় নড়াচড়া করা কঠিন হয় ও চাপ বাড়ে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাড়ের ব্যথা মাইগ্রেনের একটি সাধারণ উপসর্গও হতে পারে, যা মস্তিষ্কে উদ্ভূত হয়।
ব্যথার ধরন উপেক্ষা করবেন না
মাথাব্যথার অবস্থান চিহ্নিত করার পাশাপাশি, আপনি যে ধরনের ব্যথা অনুভব করছেন তা পর্যবেক্ষণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মাথার মধ্যে একটি নিস্তেজ, আঁটসাঁট, ব্যথা সংবেদন একটি উত্তেজনা মাথাব্যথা নির্দেশ করতে পারে, যা খুব সাধারণ।
মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব থেকে চোখের চাপ, আঘাত, অত্যধিক ব্যায়াম ও আরও অনেক কারণ এ ধরনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
যদি আপনার ব্যথা কম্পিত হয় ও বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয় তবে এর অর্থ মাইগ্রেন হতে পারে। বমি বমি ভাব, দৃষ্টি পরিবর্তন ইত্যাদি সহ অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে মাইগ্রেনও আসতে পারে।
অন্যদিকে হঠাৎ করেই তীক্ষ্ণ ব্যথা দীর্ঘক্ষণ অনুভূত হলে তা ক্লাস্টার মাথাব্যথা নির্দেশ করতে পারে, যা ঘন ঘন ও দিনের একই সময়ে ঘটতে পারে। এসব মাথাব্যথার ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাথাব্যাথার চিকিৎসা কী?
মাইগ্রেন ও টেনশনের মাথাব্যথার জন্য, ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ গ্রহণ উপশম হতে পারে। যাই হোক, এই জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যে কোনো ধরনের মাথাব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় হলো শান্ত অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম নেওয়া। এর সঙ্গে মাথা ও ঘাড়ে গরম বা ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যবহার কিংবা ম্যাসেজ করা ইত্যাদি।
আঘাত বা পড়ে যাওয়ার পরে যদি আপনার মাথাব্যথা হয় বা যদি চিকিত্সার পরেও ব্যথা না কমে তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
জেএমএস/এমএস