ডায়াবেটিস রোগীরা কী আম-লিচু খেতে পারবেন?
গ্রীষ্মকাল মানেই নানা ধরনের ফল খাওয়ার সময়। বাজারে এখন আম, কাঁঠাল, লিচুতে ভরে গেছে। এর মধ্যে আম-লিচুর কদর বেশি। সবাই এই ফল দুটি খেতে পছন্দ করেন। এসব ফলে আছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান।
আমে আছে পর্যাপ্ত ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এছাড়া আমে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমনকি ক্যানসারও প্রতিরোধ করে।
অন্যদিকে রসালো ছোট্ট ফল লিচুতে থাকে ৮১ শতাংশ পানি। শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে লিচু। এতে আরও থাকে প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট; যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যালস আছে যেমন- স্যাপোনিন, স্টিগমারস্টেরল, এপিটিকন, লিউকোসায়ানডিন, মালভিডিন, গ্লাইকোসাইডস, প্রোকায়ানডিনস এ-২, ও বি-২।
আম লিচু উপকারী ফল হলেও ডায়াবেটিস রোগীরা ফলগুলো খেতে ভয় পান। এর কারণ হলো আম-লিচু অত্যন্ত মিষ্টিজাতীয় ফল। অনেকের ধারণা, একেবারেই আম-লিচু খাওয়া যাবে না ডায়াবেটিস রোগীদের। তবে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন এ বিষয়, চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ডায়াবেটিস রোগীরা আম খেতে পারবেন কি না সে বিষয়ে ভারতীয় পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত জানন, আমে অনেক পুষ্টিগুণ থাকলেও, এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড অনেকটাই বেশি। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৬-৬০ এর মধ্যে ও গ্লাইসেমিক লোড ১৮-১৯ এর ভেতরে।
পুষ্টিবিজ্ঞানের এই বিশেষ অংক অনুসারে, আম খেলে রক্তে বেড়ে যায় শর্করার মাত্রা। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে এই ফল থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। তবে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকলে মাসে কয়েকবার অনায়াসেই আম খেতে পারবেন।
তবে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেমন- দিনে কতটুকু ক্যালোরি গ্রহণ করছেন তা পরিমাপ করতে হবে, একবেলা আম খেলে অন্য বেলার খাবার থেকে সমপরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বাদ দিতে হবে।
এছাড়া দুপুরে বা রাতের খাবারের সঙ্গে আম না খাওয়াই ভালো। বরং সকালের ব্রেকফাস্টে আম রাখা যেতে পারে। ডায়াবেটিসের মাত্রা কতটুকু, তা জেনে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই আম খেতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা লিচুও পরিমাপ অনুসারে খেতে পারেন? এ বিষয়েও ডা. রূপালী দত্ত জানান, ডায়াবেটিস রোগী লিচু খেতে পারবেন ঠিকই কিন্তু পরিমিতভাবে খেতে হবে। এ ছাড়াও ডায়াবেটিসের পরিমাণ কত, সেটি মেপে ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তবেই খেতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল থাকে। লিচু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও উন্নত হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, লিচুতে থাকা বৈশিষ্ট্যসমূহ বায়োঅ্যাকটিভ যৌগিক ম্যাক্রোফেজের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে।
এছাড়া লিচুতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। লিচুতে ফাইবারের পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া লিচুতে কোলেস্টেরলও নেই। মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে লিচু।
একই সঙ্গে এতে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ইনসুলিনের উৎপাদন উন্নত করে। আম-লিচুসহ মিষ্টিজাতীয় যেসব ফলই খান না কেন অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে তবেই খেতে হবে।
সূত্র: এনডিটিভি
জেএমএস/এমএস