এ সময় ডায়রিয়া হলে কী করবেন?
ডায়রিয়া বাংলাদেশের অন্যতম রোগগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ এতে আক্রান্ত হন। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। ডায়রিয়ায় কীভাবে সতর্ক থাকা যায় এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজের সাথে কথা বলেছেন ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. ইসমাম হোসাইন—
জাগো নিউজ: ডায়রিয়া বলতে কী বোঝায়?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: দিনে তিনবারের অধিক স্বাভাবিকের চেয়ে পাতলা পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে। পাতলা পায়খানায় শুধু মল ও পানি থাকতে পারে। আবার এর সঙ্গে রক্তও পড়তে পারে।
পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত মিশ্রিত থাকলে তাকে রক্ত মিশ্রিত ডায়রিয়া কিংবা আমাশয় বলে। ডায়রিয়া দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ জাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায় ও শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়।
জাগো নিউজ: ঠিক কী কী কারণে ডায়রিয়া হতে পারে?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি পানিবাহিত ও খাদ্য সংক্রান্ত কারণেই বেশি ঘটে। প্রথমে শনাক্ত করতে হবে রোগটি কীভাবে হলো। এরপর সেই চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে ও সচেতন থাকতে হবে।
জাগো নিউজ: কী কী লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবো ডায়রিয়া হয়েছে?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: ডায়রিয়ার লক্ষণ হলো পাতলা বা জলের মত মল। এটি পরিপাকনালীর একটি ব্যাধি। একজন ব্যক্তি যদি দিনে তিনবারের বেশি পানির মতো মলত্যাগ করেন তাহলে মনে করা হয় যে তার ডায়রিয়া হয়েছে।
ডায়রিয়া অন্তর্নিহিত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণের একটি উপসর্গ। এই রোগে দিনে তিন বা তার অধিকবার পাতলা মল নির্গত হয়। কোনো কোনো মানুষের দিনে বহুবার স্বাভাবিক মল নির্গত হয়। তার মানে এই নয় যে তাদের ডায়রিয়া হয়েছে। পরিপাকনালীর অন্তর্নিহিত গোলমালের উপসর্গ হলো ডায়রিয়া রোগ। অবশ্য এর সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে যেমন- পায়খানার সঙ্গে রক্তও মিশ্রিত থাকতে পারে, পেট ব্যথা, পেট ফোলা, শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেওয়া, কখনো কখনো জ্বর, বমি বমি ভাব কিংবা পেটের ব্যথা হওয়া, তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ মলের বেগ আসা।
জাগো নিউজ: ডায়রিয়া কীভাবে ছড়ায়?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: ডায়রিয়া মূলত খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানার মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানা খাদ্য ও পানির সংস্পর্শে এলে ডায়রিয়া ছড়ায়। এ ছাড়া মাছি ও তেলাপোকার মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়।
জাগো নিউজ: কাদের ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: সব বয়সী মানুষেরই ডায়রিয়া হতে পারে। তবে সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ডায়রিয়া হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোর চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়রিয়ার হার কয়েকগুণ বেশি।
জাগো নিউজ: ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর শরীরে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: ডায়রিয়া খুব মারাত্মক একটি রোগ। ডায়রিয়া হলে একজন রোগীর সবচেয়ে বেশি যে জটিলতা দেখা যায় সেটি হলো পানিস্বল্পতা।
রোগীর দেহে পানির পরিমাণ অনেক কমে যায়। এমনকি রোগী মারাও যেতে পারে। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ডায়রিয়া।
জাগো নিউজ: ডাক্তারের কাছে কখন যাওয়া প্রয়োজন?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: সাধারণত ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নাহলে রোগী মারাও যেতে পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই রোগীকে নিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
জাগো নিউজ: ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় কী?
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: ডায়রিয়া প্রতিরোধের নানা উপায় রয়েছে। যেমন-
১. ডায়রিয়া পানিবাহিত জীবাণুর দ্বারা সংঘটিত হয় বলে পানি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য নিরাপদ বা বিশুদ্ধ পানি পানসহ সংসারের সব কাজে বিশুদ্ধ বা নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েলের পানি বা কুয়া-পুকুর-নদীর পানি ১০ মিনিট টগবগিয়ে ফুটানোর পর পানি বিশুদ্ধ হয়। তা ছাড়া পানি শোধন ট্যাবলেট, ফিল্টার, ফিটকিরি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করা যায়।
২. পচা-বাসি ও দুর্গন্ধযুক্ত বা দূষিত খাবার না খাওয়া। ঠান্ডা বা বাসি খাবার গরম করে খাওয়া।
৩. খাদ্যদ্রব্য মাছি, পোকা-মাকড় ও ধুলা-বালু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢেকে রাখা।
৪. প্রত্যেকবার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
৫. হামের টিকা নেওয়া: হাম হলে এর জটিলতা হিসেবে অনেক শিশুর ডায়রিয়া হয়। তাই হামের টিকা দিয়ে হাম প্রতিরোধ করলে হামজনিত ডায়রিয়াও প্রতিরোধ হয়।
জাগো নিউজ: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য।
ডা. ইমাম সিদ্দিক সাহিত্য: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি জাগোনিউজ২৪.কমের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
জেএমএস/এসইউ/জেআইএম