যক্ষ্মা কীভাবে ছড়ায়? প্রতিরোধে করণীয়
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হিসেবে এবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২২ এর স্লোগান ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’।
১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস যক্ষ্মা রোগের এই জীবাণু আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২২ উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানান, সচেতন না হলে তরুণদের মাঝেও হতে পারে যক্ষ্মা। তবে পরিবারে কারো যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে ও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা সচেতনতায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত আছে, সরকার থেকে অনেক প্রচারণা চালানো হয়। এতে করে মানুষের মাঝে যক্ষ্মা নিয়ে ভীতি যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে সচেতনতাবোধ।
যক্ষ্মা হলে গ্রামের প্রান্তিক মানুষরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে কি না, গ্রাম অঞ্চলে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে ডা. আয়শা আক্তার বলেন, প্রান্তিক মানুষদের জন্য যক্ষ্মার চিকিৎসায় বক্ষবিধি ক্লিনিক আছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে।
সেখান থেকে সাধারণ মানুষ যক্ষ্মার চিকিৎসা নিতে পারেন। বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্মার চিকিৎসা করা হয় ও ওষুধ দেওয়া হয়।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে কী করণীয়?
যক্ষ্মা শব্দটি এসেছে ‘রাজক্ষয়’ থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন। যক্ষ্মা প্রায় যে কোনো অঙ্গে হতে পারে (কেবল হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশি ও থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়া)। তব যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুসফুসে।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা। যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা। রোগীর কফ থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা কতে হবে।
যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। যেটা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। আর এই জীবাণু যে কোনো অঙ্গেই সংক্রমিত হতে পারে। ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত হয় এক কোটি মানুষ ও মারা যায় ১৫ লাখ মানুষ৷
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
> ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হালকা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তও বের হতে পারে। মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাকটেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
> বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসেবে ৫-৬ মাস জ্বর থাকার মূল কারণ এই যক্ষ্মা। সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ ও মাঝে মধ্যে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দেয়।
> যক্ষ্মা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ও শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে। তখন একে অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষ্মা’ বলা হয়।
যেমন প্লুরাতে প্লুরিসি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস, লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা, প্রজননতন্ত্রে প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষ্মা, পরিপাকতন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষ্মা ও অস্থিকলায় পটস ডিজিস।
বিশেষ ধরনের ছড়িয়ে যাওয়া যক্ষ্মাকে বলা হয় মিলিয়ারী যক্ষ্মা। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুসীয় ও অ-ফুসফুসীয় যক্ষ্মা একসঙ্গে বিদ্যমান থাকতে পারে। পৃথিবীর যক্ষ্মা রোগীদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি (প্রায় অর্ধেক) ভারতীয় উপমহাদেশবাসী।
জীবাণু শরীরে ঢুকলেই সবার যক্ষ্মা হয় না। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা বেশি হয়। বাতাসের মাধ্যমেও যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মিশে রোগের সংক্রমণ ঘটায়।
লেখক: ফিচার কন্ট্রিবিউটর
জেএমএস/এএসএম