পরিবারে নির্যাতনের শিকার হলে দ্রুত যা করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ০৪ মার্চ ২০২২

অনেক নারীই গার্হস্থ্য নির্যাতনের শিকার হন। অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খোলেন না। পরিবার ও প্রিয়জনের সম্মান রক্ষায় অনেকে নারীই দিনের পর দিন মুখ বুঝে নির্যাতন সহ্য করেন।

শুধু আপনিই নন, বরং আপনার মতো অনেক নারীই পরিবারে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেন, আবার কেউ মুখ বুজে সহ্য করেন।

সম্প্রতি বলিউড অভিনেত্রী পুনম পান্ডে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান। প্রায়ই তার স্বামী মাথায় আঘাত করতেন। এ কারণে তিনি গন্ধবোধ হারিয়েছে। লক আপ শো’তে তার প্রাক্তন স্বামী স্যাম বোম্বের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে মুখ খোলেন।

শুধু তাই নয়, ছোটখাট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি ক্ষিপ্ত হতেন ও মারধর করতেন। এমনকি পোষা কুকুরকে আলিঙ্গন করা কিংবা তাকে জড়িয়ে ঘুমালেও স্বামী তাকে মারধর করতেন বলে জানান পুনম পান্ডে।

দুঃখবোধ করে পুনম ওই অনুষ্ঠানে আরও জানান, মদ্যপানের অভ্যাসের কারণেই দিন দিন তার স্বামী পশুর ন্যায় আচরণ করতে শুরু করেন। শুধু মারধরই নয় বরং পুনম কোথায় যাবেন বা কার সঙ্গে কথা বলবেন সে বিষয় নিয়েও প্রতিদিন ঝগড়া ও মারামারি হতো। কখনো একা সময় কাটাতে পারতেন না এই অভিনেত্রী।

বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের অনেক নারীই গার্হস্থ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। প্রকাশ্যে হোক বা বন্ধ দরজার আড়ালে নারী কিংবা পুরুষ উভয়ই শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতনের মুখোমুখি হন।

২০২০ সালে করোনা মহামারির পর থেকে গার্হস্থ্য সহিংসতা যেন আরও বেড়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী নারীদের গার্হস্থ্য নির্যাতনের অভিযোগ বেড়েছে ২৬ শতাংশ। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো, সব বয়সী নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই জীবনে অন্তত একবার হলেও গার্হস্থ্য নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী ২৭ শতাংশ নারী যারা সম্পর্কে ছিলেন তারা রিপোর্ট করেছেন, তাদের অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারা কোনো না কোনো শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক মহামারির এ সময় বিশ্বজুড়ে বেড়ে যাওয়া নারী নির্যাতনের প্রতিফলন দেখা গেছে বাংলাদেশেও। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৭০৩ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ১২৩৫ জন। এছাড়া ১৪টি কন্যাশিশুসহ ৩৩ জন শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। আর ৬২টি কন্যাশিশুসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৯৫ জন। ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ।

নারীরা কেন গার্হস্থ্য নির্যাতনের সম্মুখীন হয়?

নারীরা বিভিন্ন কারণে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। সংসারে স্বামী কিংবা শ্বশুড়বাড়ির পরিবার দ্বারা অনেক নারীই ক্ষোভ ও হতাশার শিকার হন, আবার কেউ যৌতুকের কারণেও নির্যাতিত হন। এমনকি নারী ভ্রুণহত্যার প্রচলন আছে এমন জায়গায় যখন মেয়ে শিশুর জন্ম হয় তখনও মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন হন নারীরা।

গার্হস্থ্য নির্যাতনের ঘটনা দেখলে কী করণীয়?

গার্হস্থ্য নির্যাতন বা যৌন নির্যাতন দিনের পর দিন সহ্য করা উচিত নয়। আপনি যদি গার্হস্থ্য নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, তাহলে প্রশাসনের সাহায্য নিন। হেল্পলাইন নম্বরগুলোতে ফোন করেও জানাতে পারেন।

এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়াও প্রয়োজন। একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, সাহস ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি নিজের ও অন্য নারীদের কণ্ঠস্বর হতে পারেন। এভাবে আপনিও গার্হস্থ্য নির্যাতন বন্ধ করতে পারেন।

আপনি যদি গার্হস্থ্য নির্যাতনের সম্মুখীন হন তাহলে থানায় যেতে না পারলে হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯ তে ফোন করে জানাতে দেরি করবেন না। এক্ষেত্রে আইনি সাহায্য নিতেও ভয় কিংবা দ্বিধা করবেন না।

আজ বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস। প্রতিবছর ৪ মার্চ বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস পালন করা হয়। সমাজ থেকে যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা নির্মূল করতে হলে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতা। সবাইকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।