এক মাসেই যেভাবে পাবেন মেদহীন পেট ও কোমর

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে পেটের মেদ ঝরানো কঠিন। অতিরিক্ত পেটের চর্বি টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকেই পেটের ভুঁড়ি কমাতে নানা ধরনের উপায় অনুসরণ করেন।

তবুও কমে না মেদ-ভুঁড়ি। তবে চাইলেই কিন্তু আপনি মাত্র এক মাস অর্থাৎ ৪ সপ্তাহেই কমাতে পারবেন পেট ও কোমরের জেদি চর্বি। জেনে নিন পেটের মেদসহ পুরো শরীরের ওজন কমানোর প্রমাণিত ১৫ উপায়।

>> ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে হবে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, ক্যালোরি কমালে নারী ও পুরুষের দ্রুত ওজন কমে। এজন্য ধীরে ধীরে কম ক্যালোরি গ্রহণে অভ্যস্ত করুন শরীরকে। প্রথম সপ্তাহে ৫০০ ক্যালোরি কমিয়ে দিন।

আপনি যদি এখন দিনে ২২০০ ক্যালোরি গ্রহণ করেন তাহলে প্রথম সপ্তাহে ১৭০০ ক্যালোরি গ্রহণ করুন। দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও ৫০০ ক্যালোরি কমিয়ে ১২০০ ক্যালোরিতে নামিয়ে আনুন। দেখবেন ক্যালোরি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে কমছে ওজনও।

>> চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চিনির কিউব, কেক, প্যাস্ট্রি, সস, কেচাপ, বোতলজাত সালাদ ড্রেসিং, ক্যান্ডি, দুধ, সাদা চকোলেট, পাস্তা, রুটি, সাদা ময়দা, সোডা, প্যাকেটজাত ফলের রস, সিরাপ, ফ্লেভারড চা ও স্বাদযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ঘুমের ব্যাঘাত, শ্বাস-প্রশ্বাস, এডিএইচডি ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

>> ফাইবারজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ডায়েটারি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার দ্রুত ওজন কমানোর জন্য দুর্দান্ত। এ ধরনের খাবারগুলো পেটে জেলের মতো স্তর তৈরি করে। ফলে হজমের সময় বৃদ্ধি পায়। ফাইবারজাতীয় খাবার পেটের ব্যাকটেরিয়া বাড়ায় ও হজম উন্নত করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ও শরীরের টক্সিন দূর হয়। এজন্য খাদ্যতালিকায় রাখুন- শাকসবজি, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, মুলার শাক, পার্সলে, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, মটর, করলা, বিটরুট, শসা, লেটুস ও ধনেপাতা।

ফল- আপেল, কলা, পীচ, নাশপাতি, কমলা, ডালিম, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, বরই, তরমুজ, জাম্বুরা, কমলা ও লেবু।

শস্য- বাদামি চাল, লাল চাল, কালো চাল, জোরা, বার্লি, ভাঙা গম, আমলা, কুইনো ও ওটস। বীজের মধ্যে আছে চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড, তরমুজের বীজ, শসার বীজ ও কুমড়ার বীজ।

>> গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ-প্রোটিনজাতীয় খাবার ওজন কমায়, বিপাক বাড়ায় ও পেশি মজবুত করে। এজন্য খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন কিডনি বিন, সয়াবিন, মসুর ডাল, মাশরুম, তোফু, বীজ, বাদাম, ডিম, দুধ, গ্রাউন্ড টার্কি, চামড়াবিহীন মুরগির স্তন, স্যামন, টুনা।

>> স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে শরীরকে পর্যাপ্ত আর্দ্র রাখতে হবে। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত পানি খেলে ওজন, কোমরের পরিধি ও শরীরের চর্বি কমে। আরেকটি বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনার তথ্যমতে, পানি খেলে বিপাকীয় হার বাড়ে।

jagonews24

আমেরিকান বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, শরীরে পানির ঘাটতি বিএমআই বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করুন। তাজা ফল ও সবজির রস ও স্যুপের মাধ্যমেও পানির ঘাটতি মেটাতে পারেন। আবার অতিরিক্ত পানিও কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

>> ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হলো স্বাস্থ্যকর চর্বি। যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ওমেগা-৩ ও ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত ১:১ হওয়া উচিত। তবে ভুল খাদ্যাভাসে এই অনুপাতটি কখনো কখনো ১:২০ পর্যন্ত চলে যায়। এটি প্রদাহ-প্ররোচিত স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।

তাই খাদ্যতালিকায় রাখুন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এজন্য যা যা রাখবেন- সিলভার কার্প, স্যামন, সার্ডিন, ইলিশ, টুনা ও কাটলা, জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো তেল ও ফ্ল্যাক্সসিড তেল, বাদাম, চিয়া বীজ, পেস্তা ও আখরোট। চাইলে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে পারেন।

>> গ্রিন টি একটি প্রাকৃতিক ওজন কমানোর পানীয়। এতে থাকে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। জাপানি বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একটানা ১২ সপ্তাহ ধরে গ্রিন টি খেলে কোমরের পরিধি, শরীরের ওজন, বিএমআই ও রক্তচাপ কমে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, গ্রিন টি ইজিসিজি ফ্যাট ও ট্রাইগ্লিসারাইড সংশ্লেষণে জড়িত জিনকে দমন করে ও চর্বি পোড়ায়। আপনি প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন।

>> প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন। এজন্য নিয়মিত খেতে পারেন টকদই। এতে থাকা অণুজীব হজমের উন্নতি করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রোবায়োটিক ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। পেটের চর্বি কমাতে দৈনিক আধা কাপ পূর্ণ চর্বিযুক্ত টকদই বা ৮ আউন্স বাটারমিল্ক বা ১ বোতল প্রোবায়োটিক পানীয় পান করুন।

>> উচ্চ-সোডিয়াম খাবার এড়িয়ে চলুন। সোডিয়াম একটি অপরিহার্য পুষ্টি। তবে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ শরীরে পানি জমা, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়। সিডিসি প্রতিদিন ২৩০০ মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

আপনি যদি পেটের চর্বি কমাতে চান তাহলে অবশ্যই ফ্রাই, পিৎজা, ফ্রাইড চিকেন, হিমায়িত খাবার, বিস্কুট, সসেজ, সালামি, বেকন, টিনজাত স্যুপ, বোতলজাত সস, কেচাপ, আচারের মতো উচ্চ-সোডিয়ামযুক্ত খাবার ত্যাগ করতে হবে।

>> ক্ষুধা পেলেই খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার। যেমন- গাজর, শসা, টমেটো, তরমুজ, কলা, আপেল, তরমুজ, পেস্তা, তরমুজের বীজ, বেরি, ডাবের পানি, চিনি ও লবণ ছাড়া তাজা জুসসহ স্ন্যাকস যা ১০০ ক্যালোরির নিচে থাকবে। এরপর ৮ আউন্স পানি পান করুন।

>> বিরতিহীন উপবাস শরীরকে ক্যালোরি-বার্নিং মোডে ঠেলে দেয়। এজন্য একটানা ফাস্টিং করুন। পারলে ইন্টারমিটিং ফাস্টিং করুন। যারা দ্রুত পেটের চর্বি কমাতে চান, তাদের জন্য সেরা উপায় হলো ফাস্টিং।

>> ওজন কমাতে শরীরচর্চা করতেই হবে। এজন্য কার্ডিও বেছে নিন। পুরো শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে কার্ডিও। নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি কমে। দৈনিক অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট কার্ডিও করুন। যা যা করবেন-

* ওয়ার্ম-আপ ১০ মিনিট
* দ্রুত হাঁটা বা জগিং ১০ মিনিট (৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা)
* ক্রাঞ্চস ৮টি, পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* সাইকেল ক্রাঞ্চস ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* লেগ রেইসেস ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* বারপিস ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* লেগ ইন ও আউট ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* রাশিয়ান টুইস্ট ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* সিজর কিক ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* মাউন্টেন ক্লাইম্বার্স ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* এলবো প্লাঙ্ক ৮টি পুনরাবৃত্তি ৩ সেট
* স্ট্রেচ করুন ৫ মিনিট

jagonews24

>> কার্ডিওর পাশাপাশি দ্রুত ওজন কমাতে করুন হিট ওয়ার্কআউট। যাকে বলা হয় হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং। এই ব্যায়াম করার পরবর্তী সময় ২ ঘণ্টা পর্যন্ত চর্বি পোড়ে। বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, অন্যান্য ব্যায়ামের চেয়ে ২৮.৫ শতাংশ বেশি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে করুন-

* স্প্রিন্ট
* দ্রুত দড়ি লাফ
* জাম্প স্কোয়াট
* জাম্প লাঙ্গিস
* বক্স জাম্প
* হাই নিস ইত্যাদি।

>> ওজন কমাতে হলে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। এসবের কারণে শরীরে করটিসলের মাত্রা বাড়ে। ফলে পেটে চর্বি জমে। মানসিক চাপ কমাতে সুখী হরমোন নিঃসরণ বাড়াতে হবে। এজন্য ধ্যান, ছবি আঁকা, নাচ, ভ্রমণসহ যা ভালো লাগবে তা করার চেষ্টা করুন।

>> ডায়েট ও শরীরচর্চার পরও যাদের ওজন কমে না, তাদের খেয়াল রাখতে হবে ঘুমের দিকে। কারণ ভালো ঘুম না হলে ওজন বেড়ে যায় দ্রুত। অনিদ্রার ফলে ক্ষুধা, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ভিসারাল বা পেটে চর্বি জমে বেশি। এজন্য প্রতিরাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

এসব উপায় অনুসরণ করলে আপনি এক মাসে ১২ পাউন্ড বা ৬ কেজি ওজন কমতে পারেন। চাইলে এর বেশিও কমানো যায়। তবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে এক মাসে ৬ কেজিই যথেষ্ট। পেটের চর্বি কমাতে অবশ্যই উপরোক্ত ব্যায়ামগুলো করতে হবে।

যদিও আপনার ওজন কতটুকু কমবে তা নির্ভর করে খাদ্য, ব্যায়াম, উচ্চতা, ওজন, বয়স, লিঙ্গ, চিকিৎসা ইত্যাদির উপর। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভোগেন তাহলে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।

সূত্র: স্টাইল ক্রেজ

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।