কিডনির পাথর খুব জটিল রোগ নয়: ডা. এম এ সামাদ

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২২

‘মানবদেহে কিডনি একটি ভাইটাল অর্গান। কিডনির কাজ হচ্ছে শরীরের দূষিত রক্ত শোধন করা। এছাড়া কিডনি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তবে কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।’

‘কিডনির যত্ন’ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ সামাদ এ কথা বলেন।

দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ‘স্বাস্থ্যকথা’র তৃতীয় পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

আজ শুনিবার (১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জাগো নিউজের কনফারেন্স রুমে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জিয়াউল হকের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

জাগো নিউজের সহকারী সম্পাদক ড. হারুন রশীদের সঞ্চালনায় আলোচনায় ডা. এম এ সামাদ বলেন, ‘কিডনির পাথর আরেকটি রোগ। তবে এটি খুব জটিল নয়। এখন সহজেই এটি নিরাময় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি পান ও জগিং করা জরুরি।’

তিনি বলেন, হঠাৎ করেও বিকল হতে পারে কিডনি। এর কারণ হতে পারে পানিশূন্যতা। যারা রোদে কাজ করেন ও পানি খাওয়ার সময় পান না, তাদের ক্ষেত্রে পানিশূন্যতার কারণে হঠাৎ কিডনি বিকল হতে পারে।

এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ খাওয়া, প্রস্টেট বড় হয়ে যাওয়া, কিডনিতে বেশি পাথর জমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ ইউরিন ইনফেকশনের কারণে একদিনে হঠাৎ করেই কিডনি বিকল হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হওয়া প্রসঙ্গে ডা. সামাদ জানান, ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের সংমিশ্রণেই পাথরের সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থাৎ ৮০-৯০ ভাগ রোগীর কিডনিতে জমা পাথর নিয়মিত জীবনযাপনের মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এজন্য দৈনিক আধা ঘণ্টা হাঁটা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি।

jagonews24

তিনি আরও জানান, যাদের কিডনির পাথর মটরশুঁটির মতো আকার ধারণ করেছে তারা লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ হতে পারবেন ৪০-৫০ শতাংশ। যাদের কিডনিতে পাথর আছে, তাদের উচিত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া।

তবে দুধ খেতে পারবেন তারা। দুধের ক্যালসিয়াম শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। ইউরিন ইনফেকশনের কারণে কিডনি বিকল হতে পারে। এ বিষয়ে নারী-পুরুষ সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন ডা. সামাদ।

তিনি বলেন, পুরুষের চেয়ে নারীর ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নয়গুণ বেশি, যা দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা না হলে কিডনি বিকল হতে পারে। এজন্য নারীদের শরীরের নিম্নাঙ্গের যত্ন নিতে হবে ও পরিষ্কার রাখতে হবে।

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণেও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক। তার মতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে দ্রুত কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এমনিতেই ৩০ বছরের পর থেকে সবার কিডনি ১ শতাংশ করে ক্ষয় হতে শুরু করে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। তাই এমন রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

কিডনি রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি? এ প্রশ্নের জবাবে ডা. সামাদ জানান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, যাদের শরীর ফুলে যায়, ব্যথার ওষুধ খাওয়া, ধূমপান, বংশে যাদের কিডনি রোগী আছে, ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের কিডনি বিকলের ঝুঁকি বেশি।

তিনি সবার প্রস্রাবের দিকে নজর রাখার বিষয়ে জানান, প্রস্রাবের রং যদি গাঢ় হলুদ হয় তাহলে বুঝতে হবে কিডনির কোনো সমস্যা হচ্ছে। এর মূল কারণই হলো পর্যাপ্ত পানি পান না করা।

দিনে অন্তত তিন-চার লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। যারা বাইরে রোদে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি পানি পান করতে হবে।

আবার অতিরিক্ত পানি খাওয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে জানান ডা. সামাদ। তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই অতিরিক্ত পানি খাওয়া উচিত নয়। এতে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরতে পারে। আবার একসঙ্গে দ্রুত অত্যধিক পানি খাওয়াও ঠিক নয়। কিছুক্ষণ পরপর ধীরে ধীরে পানি পান করুন। এ বিষয়ে সবারই সতর্ক থাকা জরুরি।

হঠাৎ করে শরীরে চুলকানি হওয়াও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। তাই শরীরে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ, গলা ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এর আরও কয়েকটি লক্ষণ হলো, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও লালচে ভাব মেরুদণ্ডের দুপাশে।

একইসঙ্গে তলপেট বা মূত্রনালিতে ব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত, প্রস্রাবে পাথর যাওয়া, চোখের পাতা বা পা ফোলা, ত্বকের রং ফ্যাকাশে হওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, শরীর কালচে হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।

কিডনির রোগ শনাক্ত করার বিষয়ে ডা. সামাদ বলেন, ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কিডনির সমস্যা শনাক্ত করা যায়। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হলে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়া সম্ভব সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে। কিডনির সমস্যা ধরা পড়লেই তা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই।

এক থেকে পঞ্চম ধাপে দিয়ে কিডনি ফেউলিওর হয়, তখন রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। তৃতীয় ধাপে থাকলে ওষুধের মাধ্যমে কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা কমিয়ে আনা হয়। ফলে রোগী আরও বেশ কয়েকটি বছর সুস্থ থাকতে পারেন।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় কী? এ প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক জানান, শরীরচর্চার বিকল্প নেই। দৈনিক আধা ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ১৫ মিনিট জোরে হাঁটলে গড়ে তিন বছর পর্যন্ত আয়ু বেড়ে যায়। পাশাপাশি ধূমপান বন্ধ করতে হবে। এটি বাদ দিলেও হার্ট অ্যাটাকসহ কিডনি রোগের ঝুঁকি কমবে।

ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করাতে হবে। খাওয়ার বিষয়েও সাবধান থাকতে হবে। নিয়মিত ফল ও শাকসবজি খেতে হবে।

লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন থাকুন।

আলোচনা পর্ব শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। জাগো নিউজের কর্মীরা কিডনি বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেন। তিনি সবিস্তারে সব প্রশ্নের উত্তর দেন।

জাগো নিউজের কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকথার আয়োজন করা হয়। প্রতি পর্বে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করেন।

এ আয়োজনের প্রথম পর্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন’র বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

দ্বিতীয় পর্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান ডা. হারিসুল হক।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।