করোনার বিভিন্ন ধরন এলো যেভাবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৯ এএম, ১১ জুলাই ২০২১

করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। গত বছর থেকে শুরু হওয়া মহামারি করোনা সংক্রমণ এরই মধ্যে তার রূপ বদলেছে। চিকিৎসক ও গবেষকরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন করোনাভাইরাসের গতিপথ রুখতে।

তবে কখনো ব্ল্যাক-হোয়াইট-ইয়োলো-গ্রিন ফাঙ্গাস, আবার কখনো মিউটেশন, ভ্যারিয়েন্ট, ডেল্টা ইতাদি নাম যুক্ত করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের সঙ্গে। তবে করোনাভাইরাসের মিউটেশন, ভ্যারিয়েন্ট এবং স্ট্রেন বিষয়টি কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস। সবসময়ই মিউটেশন করার প্রবণতা আছে। ভাইরাসের বাইরে থাকে স্পাইক প্রোটিন, তারপর লিপিডের চাদর। ভেতরে থাকে জেনেটিক মেটেরিয়াল বা আরএনএ।

jagonews24

যখনই সুস্থ কোষের সংস্পর্শে আসে, ভাইরাস প্রথমেই কোষের মধ্যে তার জেনেটিক মেটেরিয়াল বা আরএনএ প্রবেশ করিয়ে দেয়। কোষের ভেতরে ‘মেমোরি কার্ড’ বা তথ্যপূর্ণ ‘চিপ’-এর মতো কাজ করে আরএনএ। ফলে কোষে প্রবেশ করা মাত্রই আশ্রয়দাতা কোষকে কাজে লাগিয়ে সে তৈরি করতে থাকে নিজের অসংখ্য প্রতিলিপি।

অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে প্রতিলিপি তৈরির সময় কিছু কিছু প্রতিলিপির জেনেটিক কোডে পরিবর্তন হয়ে যায়। এর ফলে যখন গোটা ভাইরাস তৈরি হয়, তখন সেই ভাইরাসের গঠনেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, জেনেটিক কোডে পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসের গাত্রে থাকা স্পাইক প্রোটিনেরও পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসটি কারও ক্ষেত্রে সংক্রামক হয়ে যেতে পারে। আবার খুব দুর্বল হয়ে মরেও যেতে পারে।

মিউটেশন কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুতগতিতে প্রতিলিপি তৈরির সময় কিছু ত্রুটি থেকে যায়। এই কারণেই হয় মিউটেশন। বিষয়টি অনেকটা জেরক্স করার মতো। জেরক্সের সময় কিছু প্রতিলিপি ঝকঝকে হয়ে বেরিয়ে আসে।

আবার কিছু কিছু ঝাপসা হয়ে যায়। তবে ভাইরাসের মিউটেশনের মূল কারণ হলো অস্তিত্ব রক্ষা করা। মিউটেশন শক্তিশালী হলে ভাইরাসের অস্তিত্ব রক্ষার পক্ষে লাভজনক হতে পারে। আবার ধ্বংসের কারণও হতে পারে।

ভ্যারিয়েন্ট কী?
একাধিক মিউটেশনই হলো ভ্যারিয়েন্ট। চীনের উহান শহরে উহান১ বা প্রথম ভাইরাসটির মিউটেশন ঘটে সংক্রামক ডি৬১৪জি ভাইরাস তৈরি।

jagonews24

এরপর এই ভাইরাসের মিউটেশন ঘটে তা থেকে তৈরি হল বি.১.১.৭ বা আলফা ভ্যারিয়েন্ট। এরপর আরও মিউটেশন ঘটে। আমরা দেখা পাই বিটা (বি.১.৩৫১), গামা (পি.১), ডেল্টা (বি.১.৬১৭), এপসিলন (বি.১. ৬১৭/বি.১.৪২৯) ভ্যারিয়েন্টের।

স্ট্রেন কী?
বর্তমানে ডেল্টা ভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে, এর অর্থ হলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এই ডেল্টা ভাইরাসের আবার অনেকগুলি মিউটেশন জুড়ে একটু আলাদা চারিত্রিক বৈচিত্রযুক্ত তিনটি ভাইরাস তৈরি হয়েছে। এইগুলো হলো ডেল্টার স্ট্রেন। অর্থাৎ ডেল্টা ভাইরাসের মূল কোড বি.১.৬১৭ হলে স্ট্রেনগুলো হল বি.১.৬১৭.১, বি.১.৬১৭.২, বি.১.৬১৭.৩।

কোন ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক?

বিষ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু’র তথ্য অনুযায়ী, আলফা (বি.১.১.৭), বিটা (বি.১.৩৫১), গামা (পি.১), ডেল্টা (বি.১.৬১৭), এপসিলন (বি.১. ৬১৭/বি.১.৪২৯) ভ্যারিয়েন্টগুলো চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে বরে মত বিশেষজ্ঞদের।

ডেল্টা কেন বেশি বিপজ্জনক?

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি মাত্রায় ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এর ফলে রোগী বিভিন্ন উপসর্গে ভুগে থাকেন। কিছু কিছু রোগী ১৪ দিনেও সুস্থ হন না। একমাস ভুগছেন। এ ছাড়াও এটি অত্যন্ত সংক্রামক। তাই চিন্তা আছেন চিকিৎসকরা।

jagonews24

আলফা, বিটা, গামা, গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে নামকরণের কারণ কী?

করোনা ভাইরাসের বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েন্টের দেখা মিলেছিল ব্রিটেনে। বি.১.৩৫১ ভ্যারিয়েন্টের দেখা মিলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, পি.১ মিলেছিল ব্রাজিলে, বি.১.৬১৭-এর দেখা মিলেছে ভারতে, আর মার্কিন মুলুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বি.১. ৬১৭/বি.১.৪২৯ ভ্যারিয়েন্ট। নানা দেশে নানা ভ্যারিয়েন্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংক্রামিত মানুষের মাধ্যমে অন্য দেশে চলেও যাচ্ছে।

সাম্প্রতিককালে ভারতে তাণ্ডব চালানো বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টের দেখা অন্য দেশেও মিলেছে। সেই দেশ তখন করোনার এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট’ বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

যেন করোনা আটকাতে না পারার দায় দায় আসলে ভারতের! এই পারস্পরিক দোষারোপের পালা ভঙ্গ করতেই হু’র তরফে ভ্যারিয়েন্টের নাম আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, এপসিলন, জেটা, এটা কাপ্পা ইত্যাদি রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সূত্র: হু/ইকোনোমিস্ট

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।