করোনামুক্ত হওয়ার পর বেড়ে যায় যেসব শারীরিক সমস্যা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ১০ জুলাই ২০২১

কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই অনেকে করোনামুক্ত হয়ে থাকেন। সবারই ধারণা, করোনামুক্ত হওয়া মানেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়া। আসলে করোনামুক্ত হওয়ার পর, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

যাকে বলা হয় পোস্ট কোভিড। অনেকের ক্ষেত্রে পোস্ট কোভিড এতোটাই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে যে, তা লং কোভিডে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ করোনা থেকে সের উঠলেও এর প্রভাবে দীর্ঘদিন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনামুক্ত হওয়ার পর লং কোভিডের আশঙ্কা মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, শরীরে ব্যথা, দুর্বলতাসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে লং কোভিডের লক্ষণ।

jagonews24

প্রচুর করোনামুক্ত রোগীর শরীরে এমন লক্ষণ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভাইরাসের তৃতীয় তরঙ্গের মতোই ভয়ঙ্কর হতে পারে লং কোভিড।

লং কোভিডের ঝুঁকিতে কারা?

সমীক্ষা অনুসারে, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের শরীরেই লং কোভিডের প্রভাব দেখা যেতে পারে। যারা সংক্রমণে প্রথম দিকে সচেতন ছিলেন না।

দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণের কারণে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল যাদের। এমনকি যারা করোনায় মারাত্মক ভুগেছিলেন এবং দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও লং কোভিড হতে পারে মারাত্মক।

করোনা পরবর্তী জীবন অনেকের জন্যই হতে পারে বেশ কষ্টকর। এজন্য শরীরের প্রয়োজন পড়তে যত্ন, বিশ্রাম এবং কখনও চিকিত্সার। ধরুন, সম্প্রতি আপনি করোনা থেকে সেরে ওঠেছেন; তবে শারীরিক বেশ কিছু সমস্যা আপনাকে ভোগাচ্ছে, তাহলে তা হতে পারে আপনার দীর্ঘকালীন কোভিডের লক্ষণ। জেনে নিন সেগুলো কী কী?

jagonews24

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা

যখন কেউ করোনা সংক্রমণের মধ্য দিয়ে যান; তখন শরীরে ব্যথা বা প্রদাহের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই ব্যথা কমতে গড়ে ৩-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- পিঠ ও কোমরে ব্যথা, জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে ব্যথা করা, পেশীর ব্যথা, শরীরের ব্যথা। এসব ব্যথা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।

গবেষণা বলছে, করোনায় বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের ২০ শতাংশই পরবর্তীতে নার্ভ প্রদাহ এবং ব্যথার লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। এজন্য বিশ্রাম নেওয়া এবং নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা

কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে করোনামুক্ত হওয়ার পরেও এ সমস্যা থাকতে পারে। শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা একটি গুরুতর করোনার লক্ষণ।

jagonews24

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তাদের ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের লক্ষণস্বরূপ শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়াও ক্রমাগত কাশি, কণ্ঠ পরিবর্তনও হতে পারে।

এজন্য করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের ফুসফুসের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। লক্ষণগুলো অব্যাহত থাকলে অবশ্যই শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করতে হবে। সুস্থ হওয়ার জন্য অনেকের অক্সিজেনের সহায়তাও লাগতে পারে।

রক্তচাপ পরিবর্তন

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লং কেভিড শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো বিঘ্নিত করতে পারে। বিশেষ করে রক্তচাপের মাত্রা, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা অনেকেরই হয়তো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে ছিল না।

jagonews24

করোনা সংক্রমণের পর বিশ্বজুড়ে কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এজন্য খাদ্যাভাস ও শারীরচর্চার দিকে বিশেষ নজর রাখুন।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা

করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি এবং শ্বাসকষ্টসহ পেটের বিভিন্ন পীড়ায় ভুগতে হয় রোগীকে। যেমন- অম্লতা, পাচনজনিত সমস্যা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি করোনামুক্ত হওয়ার পরও রোগীকে ভোগাতে থাকে।

এর কারণ হলো ভাইরাসটি রোগীর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের কোষগুলোকে প্রভাবিত করেছে এবং ফাংশন ব্যাহত হয়েছে। ভারী ওষুধের কারণে ক্ষতিকারক হজমশক্তি, ক্ষুধা হ্রাস ইত্যাদির সমস্যাও ঘটতে পারে।

যার মধ্যে কয়েকটি লিভার এবং কিডনির কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব, যদি আপনি ক্রমাগত গ্যাস্ট্রিকের বিভিন্ন সমস্যায় নিয়মিত ভুগতে থাকেন; তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ক্লান্তি

দুর্বলতা এবং ক্লান্তি করোনা পরবর্তী একটি সাধারণ লক্ষণ। করোনা সংক্রমণের ফলে শরীর পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। এ কারণেই শরীর হয়ে পড়ে ক্লান্ত ও নিস্তেজ। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আপনাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্ব এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো খেতে হবে।

jagonews24

উদ্বেগ এবং ধড়ফড়

শরীরে দুর্বল ও ক্লান্ত হওয়ার পাশাপাশি উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে পোস্ট কোভিডে। সামান্য কাজেই হাঁপিয়ে ওঠা বা বুক ধড়ফর করা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর কারণ হলো গভীর ঘুম না হওয়া।

করোনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তীব্র চাপ, উদ্বেগ, ব্যথা, এবং সাধারণ অসুস্থতাও একজন ব্যক্তির ভালো ঘুমে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই মেডিটেশন করুন নিয়মিত।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।