একটানা কাজ করা কি ক্ষতির কারণ?
অতিরিক্ত কাজের চাপ মাঝে মাঝে বিরক্তিকর মনে হয়। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজার চাকুরীজীবীদের জন্য কিছুটা অবসর নেয়া কিংবা স্বাভাবিক এবং শান্ত গতিতে কাজ করা যেন এক অসম্ভব ব্যাপার। বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে প্রত্যেককে তাদের কাজের পিছু ছুটতে হয় পাগলের মতো।
নয়টা থেকে পাঁচটা কাজের সময় এখন পুরনো ইতিহাস। ওভারটাইম কাজ করা এখন সাধারণ ব্যাপার। আপনি মনে করতে পারেন যে প্রথম দিকে অফিসে প্রবেশ বা লগ ইন করা এবং আপনার কাজ চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিতভাবে উপকারী কারণ এটি আপনাকে আপনার বসের সুনজর অর্জন করতে সহায়তা করতে পারে। তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনটাই প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি
অনেক সময় আপনি এমন এক ব্যথা অনুভব করতে পারেন যা আপনাকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দেয়। যদিও এটি বেদনাদায়ক, আপনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার সময় না পাওয়ায় ফলস্বরূপ ব্যথা কিন্তু ঠিকই রয়ে যায়। এসব ব্যাপার প্রমাণ করে যে পরিশ্রমী বা একটানা বেশি সময় কাজ করার আগে প্রথমে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ কয়েকটি গবেষণা বলছে, যেসব ব্যক্তির স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রবণতা থাকে, তাদের অকাল মৃত্যু বা ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষক এবং চিকিৎসকরা এটিকে ধূমপানের মতো মারাত্মক বলেও বিবেচনা করেছেন কারণ উভয়ই শেষ পর্যন্ত আপনাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি
এটি শুধু আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যই ক্ষতিগ্রস্থ করে না বরং আপনার মানসিক স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়। একটু ভাবুন, দীর্ঘক্ষণ কাজের সময় এবং কাজের চাপ আপনার মস্তিষ্ক এবং মনকে কতটা ক্ষতিগ্রস্থ করে তোলে। এর ফলে আপনার মাঝে মানসিক অস্থিরতা এবং জীবনযাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
একবার যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনধারায় একটি ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়, পরবর্তীতে আপনার সময়সূচিতে অন্যান্য জিনিস পরিচালনা করা খুব কঠিন হয়ে যায়। যেমন- মাথা ব্যথা এবং পাশাপাশি মাইগ্রেনের সমস্যা, ব্যক্তিগত কাজগুলো মনে রাখতে এবং শিখতে, বা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে নেয়।
ক্যারিয়ারের ক্ষতি
যদি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো আপনাকে খুব বেশি প্রভাবিত না করে, আপনি জেনে অবাক হবেন যে আপনার ক্যারিয়ারের জন্যও এটি খারাপ কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে। গবেষণা বলছে, যেসব ব্যক্তি বেশিরভাগ সময় একটানা বা ওভারটাইম কাজ করে তারা দক্ষ কর্মী হওয়ার বদলে কাজের সুযোগ এবং দক্ষতা হ্রাস হয়। কোম্পানিগুলো তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতাও বিবেচনায় রাখে।
নিজেকে এবং আপনার চারপাশের প্রিয়জনকে সময় দেয়ার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাজের সময়সূচি নির্ধারণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে, অনেক সময় মানুষেরা জীবনের চেয়ে বেশি কাজকে প্রাধান্য দেয়। তবে এটি সঠিকভাবে বজায় রাখা উচিত।
মামুন খান/ এইচএন/এএ/জেআইএম