ঘুমালেই দুঃস্বপ্ন? জেনে নিন মুক্তির ৫ উপায়
গভীর ঘুম থেকে হঠাৎই জেগে উঠলেন। অন্ধকারে হাতড়ে ঘড়ি দেখলেন। মধ্যরাত। মন ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বুঝতে পারলেন, আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন। ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন! গলা শুকিয়ে কাঠ। আপনি একগ্লাস পানি আনার জন্য খাবার ঘরে যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু স্বপ্নের ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো এখনও পর্যন্ত মাথায় গেঁথে আছে। স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে আপনি গুলিয়ে ফেলেছেন। আপনার ভয় ভয় লাগছে। বুঝতে পারছেন, বাকি রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে।
ঘুমের ভেতর ভয়ঙ্কর কোনো স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার এই সমস্যা অনেকেরই। এটা তো শুধু স্বপ্নই- এমন ভাব নিয়ে অনেকে উড়িয়ে দেন বিষয়টি। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে অর্ধেক ঘুমিয়ে অর্ধেক জেগে কাটালে তার প্রভাব শরীরে পড়বেই। ফলে আপনি হয়ে উঠবেন বদমেজাজি, সারাক্ষণ সবকিছু তিক্ত মনে হতে শুরু করবে। শরীরে চেনা অচেনা নানা রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করবে। দুঃস্বপ্ন থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় বাতলে দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
কীভাবে খারাপ স্বপ্ন এড়াতে পারবেন?
দুঃস্বপ্নগুলো কেবল আমাদের ঘুমের চক্রকেই বিরক্ত করে না, ঘুম থেকে পাওয়া শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তিও নষ্ট করে দেয়।খারাপ স্বপ্নগুলো রাতে ঘন ঘন ঘুম ভাঙিয়ে দেয়, ঘুমের চক্রে গন্ডগোল করে এবং দিনের বেলায়ও অস্বস্তিতে রাখে। এর ফলে আরও খারাপ কোনো প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। দুঃস্বপ্ন আসলে ‘বন্ধ’ করার কোনো উপায় আছে কি? চলুন জেনে নেয়া যাক-
দুঃস্বপ্ন এবং ঘুম
লক্ষ করে দেখবেন যে, দুঃস্বপ্নগুলো মানুষের আমাদের অভিজ্ঞতারই অংশ। আপনি যদি উদ্দীপনাজনিত দুঃস্বপ্নের কারণে ভীতু হয়ে পড়েন এবং এর ফলে প্রায় প্রতিটি দিন উদ্বিগ্ন এবং ক্লান্তবোধ করতে থাকেন তবে আপনার ঘুমের অভ্যাসের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
দুঃস্বপ্ন প্রতিরোধ করতে কেন ভালো ঘুম দরকার
বিশেষজ্ঞের মতে, খারাপ স্বপ্নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং এগুলো দূরে রাখার জন্য আমাদের ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক- এমন কাজ করা উচিত। নিদ্রাহীনতা এবং ঘুমের সময়সূচির পরিবর্তন বিরক্তিকর দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে।
রাতে যদি ভালো ঘুম না হয়, তবে এটি একটি দুষ্টু বৃত্তে পরিণত হয়। কারণ দুঃস্বপ্নগুলো আপনার একটি ভালো ঘুমের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জেনে নিন এমন পাঁচ অভ্যাসের কথা, যার মাধ্যমে দুঃসপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্মার্টফোন বাদ
আমরা সবাই ক্ষতিকর নীল আলো সম্পর্কে জানি। এটি আমাদের ঘুমের চক্রকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে কতজন আসলে এই নিয়ম মেনে চলে? এরপর দুঃসপ্ন দেখে জেগে উঠলে খেয়াল করুন, ঘুমাতে যাওয়ার কতক্ষণ আগে স্মার্ট ফোনটি দূরে রেখেছিলেন? ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলো আসলে মেলাটোনিনের উৎপাদনের সাথে মিশে যায়। মেলাটোনিন হলো এমন একটি হরমোন যা আপনার ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে।
শোবার আগে হালকা গরম পানিতে গোসল
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ঘণ্টা দেড়েক আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিন। ফলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে এবং আপনার শরীরকে ইঙ্গিত দেবে যে, বিছানায় যাবার সময় হয়েছে। এটি শরীরের থার্মোরোগুলেশন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং মূল তাপমাত্রা হ্রাস পায়। ফলে মেলাটোনিনের উৎপাদন বাড়ে যা আপনাকে ভালো ঘুমাতে সহায়তা করে।
সন্ধ্যার পর কফি বা চা নয়
দুঃস্বপ্ন থেকে দূরে থাকতে চাইলে দুপুর দুইটার পর থেকে চা কিংবা কফির কাপ এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, ক্যাফেইন একটি উত্তেজক এবং এটি অ্যাড্রেনালিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে ঘুমের ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে।
বিছানায় যাওয়ার আগে আপনার মনকে শান্ত করুন
প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন আবেগের মধ্য দিয়ে যাই, যার সবগুলো ইতিবাচক নয়। সেইসব চিন্তা নিয়ে যদি আপনি ঘুমাতে যান, তবে ঘুমের ভেতরেও তার প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তখন স্বপ্নেও আপনি সেসব সম্পর্কে দেখতে পান।
সুতরাং, আপনার মন এবং দেহকে শান্ত হতে এমন কাজ করে নিজেকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করুন। আপনি শান্ত সংগীত শুনতে পারেন, বাতিগুলো বন্ধ করে দিতে পারেন, ধ্যান বা প্রার্থনা করতে পারেন, হালকা সুগন্ধযুক্ত মোমবাতি জ্বালাতে করতে পারেন বা বই পড়তে পারেন। মূল কথা হলো, আপনার মনকে প্রশান্ত করে, এমন কাজই করুন।
ঘুমানোর সময়সূচী মেনে চলুন
এটি পুরোনো পরামর্শ, তবে কম কার্যকর নয়। আপনার রুটিন অনুযায়ী একটি ঘুমাতে যাওয়ার এবং জেগে ওঠার সময় নির্দিষ্ট করুন। ছুটির দিনটিতেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম করবেন না। নিয়মমাফিক চললে আপনার শরীর ধীরে ধীরে একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
এইচএন/এএ/এমএস