করোনা ঠেকাতে ভিটামিন সি কতটা কার্যকরী?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২০

সাধারণ সর্দি-কাশি হলে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান বেশিরভাগ মানুষ। কারণ ফ্লু ঠেকাতে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা আছে বলে অনেকের ধারণা। যদিও এই ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ ভিটামিন সি সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকায় না। রোগ হওয়ার পর তার প্রকোপ কম রাখতে সাহায্য করে। সাহায্য করে ভোগান্তির সময়কাল কমাতেও। কোভিড ১৯-ও যেহেতু এক ধরনের ফ্লু, মানুষ তাই ভাবতে শুরু করেছেন, বেশি করে ভিটামিন সি খেলে একে ঠেকানো যেতে পারে।

এই ভাবনাটাকেই আরও উস্কে দিয়েছে সাংহাই মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে চাইনিজ জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজ-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধ, যেখানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে যদি বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দেয়া যায়, নার্ভের মাধ্যমে, তাঁর ফুসফুসের কার্যকারিতা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এবং তাতে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র তথা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কিছুটা কমতে পারে।

এক রিভিউ স্টাডি থেকে জানা গিয়েছে, তার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে থাকার প্রয়োজনীয়তা ৮ শতাংশ কমতে পারে। আর ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমতে পারে ১৮ শতাংশ। তবে এসবই রয়েছে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। অর্থাৎ, ভিটামিন সি দিয়ে চিকিৎসা করলে আদতে কতটা কাজ হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে তা নিয়ে।

Vitamin-3

আর একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, নার্ভের মধ্যে দিয়ে বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দিলে সোয়াইন ফ্লু ও অন্য আরও কিছু ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে যে প্রদাহ হয় তার প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে। এই স্টাডিও রয়েছে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। অর্থাৎ, পশুর পর এখন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে এর ভালোমন্দ যাচাই করা হচ্ছে। তবে করোনার ক্ষেত্রেও সে একইভাবে কাজ করবে কিনা সে গবেষণা এখনও সেভাবে হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরকম পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। কারণ খেয়াল করে দেখুন, গবেষণাপত্রে কিন্তু খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে নার্ভের মাধ্যমে দেয়ার। তাও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে। কাজেই ভিটামিন সি অবশ্যই খাবেন। তবে মাপমতো। বেশি খেলে ইউরিনের মধ্যে দিয়ে তা বেরিয়ে যাবে। উল্টে পেট খারাপ হতে পারে।

Vitamin-3

সুষম খাবারের অঙ্গ হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার। ধূমপায়ী হলে বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে আরও ৩০-৩৫ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। তবে এটুকু ভিটামিন সি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। মাঝারি একটা কমলা খেলেই প্রয়োজনের ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। এককাপ রান্না করা ব্রকোলি খেলে তো কথাই নেই। পাওয়া যায় প্রয়োজনের চেয়েও বেশি। প্রায় ১১০ শতাংশ। তবে অন্য শাক-সবজি-ফলও খাবেন। ভিটামিন সি আছে সবগুলোতেই।

ভাতের সাথে শুধু একটা কাঁচা মরিচ খান, পাবেন ১২১ শতাংশ। একটা পেয়ারা খেলে পাবেন ১৪০ শতাংশ, আধকাপ হলুদ বেলপেপার দেবে ১৫২ শতাংশ। সকালে খালিপেটে লেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সারা দিনের প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ, ওখান থেকেই চলে আসবে। কাজেই ভিটামিন সি নিয়ে আলাদা করে ভাবার দরকার নেই। এটুকুতেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অটুট থাকবে, যার সাহায্যে এই দুর্দিনে লড়াই চালাবেন আপনি। কম থাকবে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা। উপরি পাওনা হিসেবে পাবেন স্বাস্থ্যবান ত্বক ও চুল।

আনন্দবাজার/ এইচএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।