গাছ কাটার আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে: হাইকোর্ট
![গাছ কাটার আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে: হাইকোর্ট](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/tree-20250128163029.jpg)
সামাজিক বনায়নের গাছ না কেটে রোপণকারীকে সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়াও, সিটি করপোরেশন কিংবা জেলা ও উপজেলার যে কোনো গাছ কাটতে নিতে হবে বিশেষ কমিটির অনুমতি।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
এদিন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিএজি মো. শফিকুর রহমান।
এর আগে সারা দেশের তাপমাত্রা বাড়া ও পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে মানুষের জীবন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি ২০২৪ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে।
রিট পিটিশনের শুনানি শেষে বিগত ২০২৪ সালের ০৭ মে তারিখে আদালত বিবাদীদের প্রতি ‘ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা কেন মানবাধিকারের পরিপন্থি হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী বপনকৃত গাছ না কেটে বরং গাছের মূল্যের সমপরিমাণ টাকা কেন বপনকৃত ব্যক্তিদের দেওয়া হবে না এবং গাছ কাটতে হলে সব পর্যায়ে কেন ৭ সদস্যের কমিটি থেকে অনুমোদন নিতে হবে না’ এই মর্মে রুল জারি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে মামলার শুনানি শেষে কতিপয় নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেন, দেশে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ায় অধিক সংখ্যক গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ব্যাপকভাবে গাছ কাটা হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। যা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করবে।
আদালত আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে পরিমাণ গাছ বাংলাদেশে থাকা দরকার সে পরিমাণ গাছ নেই এবং এই গাছগুলোকে রক্ষা করা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
শুনানিতে এইচআরপিবির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই গাছ কাটার মাত্রা বাড়ছে এবং একটি দেশে যে পরিমাণ গাছ থাকা দরকার সেই পরিমাণ গাছ বাংলাদেশ নেই। এর মধ্যে যদি আরও বেশি গাছ কাটা হয় তাহলে তা পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এই কারণে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে লাগানো গাছ না কেটে বরং যারা গাছ বপন করেছেন তাদের গাছের মূল্য পরিশোধ করা উচিত।
তিনি আদালতের কাছে গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং তাদের কাছ থেকে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশনা প্রার্থনা করেন।
আদালত রায় প্রদান করে সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার জন্য পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
- বাঁশখালীতে সরকারি গাছ কেটে পাচারের অভিযোগে মামলা
- ইউনিয়ন পরিষদের গাছ বিক্রি করে দিলেন পলাতক চেয়ারম্যান
এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সিভিল সার্জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, যারা জেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতি দেবেন।
আদালত আরও একটি আদেশে জনপ্রশাসন সচিবকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যারা উপজেলা পর্যায়ের গাছ কাটা সম্পর্কে অনুমতি দেবেন।
এছাড়াও রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ এর অধীনে রোপণকৃত গাছ কাটা যাবে না। বরং গাছের সমমূল্যে টাকা রোপণকারীকে প্রদান করতে হবে। এই মর্মে সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তন আনয়নেরও নির্দেশনা প্রদান করেন আদালত।
এইচআরপিবির পক্ষে আবেদনকারীরা হলেন, অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এখলাস উদ্দিন ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ই।
এফএইচ/এএমএ/এমএস