আয়ানের মৃত্যুতে হাইকোর্ট
ইউনাইটেড হাসপাতালের অনুমোদন না থাকা ‘গুরুতর অভিযোগ’

অনুমোদন ছাড়া রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনার বিষয়টিকে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে সিরিয়াস এলিগেশন বা গুরুতর অভিযোগ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
ওই হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অতিরিক্ত অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেখে আদালত এ মন্তব্য করেন।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদন নিয়ে শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আরও পড়ুন
- মামলা তুলে নিতে শিশু আয়ানের বাবাকে হত্যার হুমকি
- আয়ানের মৃত্যু তদন্তে একই মেডিকেলের তিনজন থাকা সন্দেহজনক: হাইকোর্ট
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট বলেন, রিপোর্টে দেখছি, সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া চলছে। এটি তো সিরিয়াস এলিগেশন।
পরে হাইকোর্ট তদন্ত প্রতিবেদনটি নথিভুক্ত করেন এবং এ সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন। আগামীকাল বুধবার রুল শুনানির দিন ধার্য করে কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) থাকবে বলে জানান আদালত।
আদালত বলেন, রুল শুনানির সময় আমরা সব বিষয় শুনবো। দেশের সব মানুষের যেন উপকার হয়, আমরা এমন আদেশ দিতে চাই।
গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে আসা তদন্ত প্রতিবেদনে সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আয়ানের মা-বাবাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কমিটি অনুমোদনহীন সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করতে সুপারিশ করে।
২০২৩ সালের গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করাতে সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী শিশু আয়ানকে। চিকিৎসকরা তাকে অতিরিক্ত অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করে খতনা সম্পন্ন করেন। তবে অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফিরলে আয়ানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন
- ইউনাইটেডে শিশু আয়ানের মৃত্যু: ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল
- ইউনাইটেড হাসপাতাল কলেজ বন্ধ ও জড়িতদের ফাঁসি চান আয়ানের বাবা
সেখানে বেশ কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এর দুদিন পর ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। রিটে এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের সনদ বাতিলের আবেদনও করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস