ভারত থেকে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে

ভারত থেকে অপ্রয়োজনীয় সব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ পাঠান।

লিগ্যাল নোটিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রককে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশ অর্থনীতির নীতি ‘তুলনামূলক সুবিধা’ নীতি অনুসরণ করে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে আমদানির ক্ষেত্রে ‘তুলনামূলক সুবিধা’ বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক নীতি বোঝায়, যেখানে একটি দেশ সেই সব পণ্য বা সেবা আমদানি করে, যেগুলো দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হলেও তা তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়ে উৎপাদিত হয়। এই নীতির মাধ্যমে দেশটি নিজের সম্পদ ও দক্ষতা সেসব খাতে কেন্দ্রীভূত করে, যেখানে তার তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে। ফলে দেশটি কম খরচে উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য আমদানি করতে পারে এবং বাণিজ্যের মাধ্যমে আর্থিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়।

যেমন, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করে থাকে। এক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো ‘তুলনামূলক সুবিধা’ নীতি অনুসরণ করে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো যদি তাদের দেশে গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন করতে চায় তাহলে তাদের খরচ অনেক বেশি পড়বে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে কম দামে গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা তাদের জন্য অধিক লাভজনক।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আমদানির নীতি ‘তুলনামূলক সুবিধা’ অনুসরণ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ভারত থেকে কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি ব্যাপক পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকে।

এছাড়া আরও একটি বিষয়, বাংলাদেশের যেসব আমদানিকারক ভারতীয় পণ্য আমদানি করেন তারা অধিকাংশই প্রকৃত আমদানিকারক নন। তারা মূলত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের দালাল। এই দালাল আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের নির্দেশে কম দামে মালামাল আমদানি করে সেগুলো বাংলাদেশে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন। এ আমদানির মূল্য হুন্ডি করে ভারতীয়দের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং বিনিময়ে কিছু কমিশন পান। এর ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, কোনো কোনো পণ্য খুব কম দামে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে, কিন্তু বাজারে গিয়ে ক্রেতারা দেখতে পায় পণ্যের দাম কোনোভাবেই কমেনি।

সরকার জনগণের দুর্দশা লাঘবে ভারত থেকে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেয়, কিন্তু এতেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়ে না। তবে এর ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ও তাদের বাংলাদেশি দালাল আমদানিকারকদের লাভ হয়। কারণ তারা কম খরচে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করেন।

মূলত ভারতীয় রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যবসায়িক অপকৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে দালাল আমদানিকারকদের ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে সব অপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছেড়ে দেন।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই অপকৌশলের ফলে বাংলাদেশ কয়েকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, কমদামে পণ্য আমদানি হলেও বাংলাদেশের বাজারে সেগুলো উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। দ্বিতীয়ত, আমদানি মূল্য কম দেখানোর কারণে সরকার কম শুল্ক পায়।

তৃতীয়ত, আমদানি করা পণ্য বেশি দামে বিক্রি করে দালালরা লাভের অংশ হুন্ডির মাধ্যমে ভারতীয়দের কাছে পাঠিয়ে দেন, ফলে মানিলন্ডারিং হয়।

চতুর্থত, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা তাদের মাধ্যমে সব অপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছেড়ে দেন। এর ফলে বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পকারখানা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্প ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারে না।

পঞ্চমত, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়।

নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ভারত থেকে সব অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে এবং যেসব বাংলাদেশি দালাল পণ্য আমদানি করেন এবং হুন্ডি বা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে লাভের টাকা পাঠান, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও জানান আইনজীবী।

এফএইচ/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।