আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনা
সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতারের নির্দেশ

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকার আশুলিয়ায় ৬ ছাত্রকে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামকে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসামিদের গ্রেফতারের এ নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের করা আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আগামী ২৬ জানুয়ারি তার বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ আলাদা একটি মামলা (বিবিধ মামলা) নথিভুক্ত হয়। এ নিয়ে এই ট্রাইব্যুনালে মোট আটটি মামলা হলো।
আরও পড়ুন
- আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- পুলিশের গাড়িতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় মরদেহগুলো
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।
এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছিল। সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গত ৫ আগস্ট ছয় ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের হত্যা করার পর চ্যাংদোলা করে একটি রিকশার মধ্যে ওঠানো হয়। ওখানে কিছুক্ষণ ফেলে রাখার পর পুলিশের একটি ভ্যান নিয়ে এসে সেখানে ওঠানো হয়। ভ্যানটা সেখান থেকে সরিয়ে থানার কাছে একটি দোকানের সামনে রেখে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যেন বুঝতে না পারে, তাদের কে হত্যা করেছে। পুলিশ হত্যা করে পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দিলে মানুষ মনে করতে পারে, হয়তো এই হত্যাকাণ্ড ছাত্র-জনতা করেছেন। এভাবে দায় এড়ানোর জন্য তারা পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দেন।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করেছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, তাতে দেখা যায়, সেসময় পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগকে নিয়ে তৎকালীন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি করেছেন। এই মরদেহ পোড়ানোর ঘটনার সঙ্গে তিনিসহ সে সময় কর্মরত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। আজ এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। তা মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে হাজির করার জন্য। আগামী ২৬ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির তিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন যা পাওয়া যাবে, তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।
এই চার পুলিশ কর্মকর্তা এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরও বলেন, নাম বললে পালিয়ে যেতে পারেন, তাই এই চার কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন মহল, যারা গ্রেফতার নিশ্চিত করে, তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন পালিয়ে যাওয়ার আগে গ্রেফতারটা করতে পারে।
আরও পড়ুন
পুলিশের এই চার কর্মকর্তা বিভিন্ন জায়গায় পদায়নরত অবস্থায় আছেন জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, কিন্তু তারা কর্মস্থলে আছেন কি না, তা তিনি জানেন না। তাদের এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে যারা বিশেষভাবে জড়িত, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার পরেই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস